Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রথের মেলায় দেখা || Samarpita Raha

রথের মেলায় দেখা || Samarpita Raha

পাড়ার বন্ধুরা মিলে হৈহৈ করে রথের মেলা ঢুকছি ।তখন বয়স আঠারো হবে, প্রত্যেকের মাসের তফাৎ।সবাই সমান বয়সী।
আমার মা বারবার বলে দিয়েছিল নাগর দোলায় চড়বি না।মা যেহেতু ভয় পায় ,তাইজন্য আমিও চড়ব না।
কলেজে প্রথম বর্ষের সব ছাত্র ছাত্রী ,তাই একটি লম্বা লেজ গজিয়েছে। মেলায় সব কেনাকাটা করতে করতে আমরা সব এগোচ্ছি হঠাৎ দেখি একটা সুদর্শন ছেলে প্রায় আমার কোলে। বন্ধুরা সব ভ্যাবাচাকা খেয়ে ঢোক গিলছে। রথের দিন তো বৃষ্টি বাদলের দিন। সকালে এক পশলা বৃষ্টিতো হয়েছে।তাতে মাঠিটা এক জায়গায় পিছলা ছিল। মিনিট দুয়েক পর বলে ধন্যবাদ।পড়লে হাত পা যেত। আমি বললাম না ঠিক আছে। একটু দেখে চলুন। ছেলেটিকে মেলায় আর দেখিনি।মন উশখুশ করছিল দেখবার জন্য। আমার উচ্ছলতা নেই দেখে বন্ধুরা মজা করে বলে কি রে প্রেমে পড়ে গেলি নাকি!
তারপর বন্ধুরা নাগরদোলা চড়তে গেল । আমি আর চড়লাম না।মায়ের বারণ মনে পড়ে গেল।
তাছাড়া ওরকম বলিষ্ঠ পুরুষের ধাক্কা সহজে ভোলা যায়!!
তাছাড়া লম্বা চওড়া ছেলেটি গায়ে এসে পড়ে,হাতটা ব্যথা করছিল।বনবন করে ঘুরছে দোলা। হঠাৎ ছেলেটি এসে বলে তোমার হাতে লেগেছে??
আমি হালকা হেসে বলি ভীষণ ভারী আপনি।আমাকে আবার দুঃখিত জানায়। আমি বলি ওটাতো দুর্ঘটনা আপনি ভুলে যান।
তারপর কি জিজ্ঞেস করছিল ,তা না শুনে বলি বন্ধুরা নেমে গেছে দোলা থেকে। আমি আসছি।
তারপর আমরা হৈহৈ করতে করতে ফিরে গেলাম। আমি যখন বাড়ির সামনে গেট দেবো, দেখলাম যেন দূরে ছেলেটি দাঁড়িয়ে।তখন বেশ ভয় পেয়ে গিয়ে ভাবি বাড়িটাতো দেখে নিলো।
এবার কি হবে!
ঘরে ঢুকে সোজা আমার ঘরের বারান্দায় উঁকি মেরে দেখি* রথের মেলায় দেখা *ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে।তারপর আরো তিনবছর কেটে গেছে আমার কলেজে বি এস সি পড়া শেষ। বাড়িতে অনেক সম্বন্ধ আসছে। আমার ইচ্ছাআরো পড়াশোনা করতে।তাই বি. এড. এ ভর্তি হয়েছি। অনেক অনেক পড়াশোনা করি। বাড়িতে শুনলাম একটা সম্বন্ধ যেচে এসেছে। তাদের আমাকে খুব পছন্দ।তারা লেখাপড়া ও করতে বলেছে।
মনে মনে ভাবছি কে হতে পারে!!

কাজের মাসী নাকি সম্বন্ধটা এনেছে।ওই ছেলের বাড়িতে মাসী কাজ করে।সি .এ পাশ করা ছেলে। একটি বড় ফার্মে চাকরী করে।
আমি মাসিকে বলি আজকাল ঘটকালি করছ??
কি বইলছ দিদ্দিভাই!তুম্মি তো দাদ্দাবাব্বুকে দেইখলে ফিল্যাট হইয়ে যাব্বেক।
আমার বাড়িতে রাগারাগি শুরু হয়। কাজের মাসীর সম্বন্ধ আনছে।এতটা ফেলনা হয়ে গেছি। নিশ্চয় তেল চপচপে চুল। নানান কথা ভাবি। রথের মেলার দিন বিকেলে প্রায় দশজন আসলেন।
মা ও কাজের মাসী আপ্রায়ণে ব্যস্ত।
মা আমাকে যখন ডাকেন, আমি শাড়ি পরে এমন হোঁচট খেলাম পাপোশে। সোজা মুখ থুবড়ে পড়লাম একজনের কোলে।সবাই বলছিলেন পাপশের জন্য পড়েছে।চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসছিল।নোখে এমন লেগেছে।গলগল করে রক্ত। আমার চোখ দিয়ে জল পড়ছিল। ঘরের মধ্যে সব দৌড়াদৌড়ি।বরফ আনছে কেউ। মাথাটা বনবন ঘুরছিল। হঠাৎ তাকিয়ে দেখি আমার পা রক্ত মুছিয়ে ব্যান্ডেজ করছেন যিনি ,তাকে তো চিনি কোথায় দেখেছি যেন।
এই সুদর্শন ছেলেটিতো *রথের মেলায় দেখা ছেলেটিতো।তারপর সোফায় বসি মাথা নিচু করে।
আমাদের কাজের মাসী সেদিন তো বিরাট ব্যস্ত।ছেলেটির মা বলে আমার ছেলে ….।
আড়চোখে ছেলে টিকে দেখছিলাম।
সবাই আমাকে ও হবু বরকে আলাদা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে বললেন।
সামনা সামনি দুজনে তাকিয়ে বলি,আর কোনদিন রথের মেলাতে যাইনি।
উনি বললেন আমি শৈবাল পাল।সি,এ।
আমি ও বলি বি .এড করতে চাই। তিনি রাজি হন। পড়াশোনা
ভালো বাসেন। দুই ধাক্কায় আমাদের বিয়ে হয়।
আজ বহুদূরে আমেরিকাতে আছি।মনে পড়ে সব পুরাতন কথা।
রথের দড়ি টানাটানি। ধাক্কা…. আপনমনে সজোরে হাসতে
থাকি।

বিড়বিড় করে বলতে থাকি

পথের ধারে রথের মেলা
পুতুল নাচের চলছে খেলা
রথ চলেছে দড়ির টানে
ভীড় হয়েছে খুব সেখানে।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress