Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রজনী (২০০৩) || Humayun Ahmed » Page 5

রজনী (২০০৩) || Humayun Ahmed

হলে মন টিকল না

হলে মন টিকল না। আবার বেরুম। এই সময় কোথাও মন বসে না।

যাবার জায়গা ঠিক করা নেই। খানিকক্ষণ হাঁটাহাটি করব। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ যদি কোথাও যাবার ইচ্ছা জাগে, তখন দেখা যাবে।

কড়া রোদ। আগুন-গরম বাতাস বইছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা। ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে, কারণ রাস্তার পিচ গলে আঠালো হয়ে আছে। স্যান্ডেলের সঙ্গে বেঁধে যাচ্ছে।

কড়া রোদে পথে নামলে অবধারিতভাবে আমার এশার কথা মনে হয়। তার সঙ্গেই রোদে হাঁটাহাঁটির ব্যাপারটা আমার রপ্ত হয়েছে। একদিন সে হঠাৎ এসে বলল, হাঁটতে তোমার কেমন লাগে?

খুব খারাপ। গাড়ি নেই এবং রিকশা ভাড়া নেই বলেই হাঁটি।

কড়া রোদে কখনো হেঁটে দেখেছ?

দেখব না কেন?

উঁহু, শখের হাঁটা না। দু ঘন্টা তিন ঘন্টা অনবরত হাঁটা। অদ্ভুত। অপূর্ব প্রথম কিছুক্ষণ খারাপ লাগবে। কান ঝাঁঝাঁ করবে। চোখে ঝাপসা দেখবে। তারপর দেখবে অন্যরকম লাগছে। সম্পূর্ণ অন্যরকম।

অন্যরকম মানে?

অন্যরকম মানে হচ্ছে–অন্যরকম। এস, আজ পরীক্ষা হয়ে যাক। নিজেই দেখ।

পাগল! আমি এই রোদে বেরুচ্ছি না। সান স্টোক হয়ে যাবে। এম এ পাশ করবার। আগে মারা গেলে বাবা-মা শোকে হার্টফেল করবেন। তারা এম এ পাশ পুত্র দেখতে চান।

তুমি এস তো আমার সঙ্গে।

যেতে হল। এশাকে অগ্রাহ্য করার মতো সাহস বা ইচ্ছা কোনোটাই আমার নেই। আশ্চর্যের ব্যাপার, সত্যি-সত্যি অন্যরকম লাগল। মনে হল অপরিচিত কোনো শহরে আমরা চলে এসেছি। যার সবকিছুই অন্যরকম। ক্ৰমাগত তিন ঘন্টা হেঁটে বাসায় ফিরেই জ্বরে পড়লাম। জ্বরের মধ্যে মনে হত হাঁটছি। শুধুই হাঁটছি। সেই জ্বর সারতে এক সপ্তাহ লাগল।

এর পরেও এশার সঙ্গে গিয়েছি। ভরদুপুরেই যাওয়া। পুরোনো ঢাকার গলিতে-গলিতে হেঁটেছি। আমার ক্লান্তি লাগলেও তার ক্লান্তি নেই। আমি যদি বলি, চল, কোথাও বসে একটু রেস্ট নিই। এশা অবাক হয়ে বলে, এখনই টায়ার্ড? সবে তো যাত্রা শুরু।

প্লিজ, আর পারছি না।

চল, তাহলে, কোনো চায়ের দোকানে বসি।

কত বিচিত্র ধরনের চায়ের দোকানে এশাকে নিয়ে গিয়েছি। রাস্তার পাশে বট গাছের নিচে, সিঁড়ির নিচের খুপরিতে। একবার এক চায়ের দোকানি বলল, এইখানে মেয়েছেলে নিয়ে আসা যাবে না। অন্যখানে যান।

এশা বলল, মেয়েছেলে কী দোষ করল?

অসুবিধা আছে।

অসুবিধাটা কী সেটা বলুন। না বললে আমি যাব না। চিৎকার দেব।

দোকানদার বিস্মিত হয়ে বললে, চিৎকার দিবেন? চিৎকার দিবেন ক্যান?

আমাকে বসতে দিচ্ছেন না, এই জন্যে চিৎকার দেব। যে-সব জায়গায় ছেলেরা বসতে পারে সেখানে মেয়েরাও যেতে পারে। সমান স্বাধীনতা।

দোকানী বিরক্ত হয়ে বলল, আসেন, বসেন। চা খাইয়া বাড়িত যান।

সেই চায়ের দোকানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় লাগিয়ে আমরা চা খেলাম। এশা নানান কথা নিচু গলায় বলতে বলতে হাসতে লাগল। এ সব সে করছে দোকানদারকে রাগিয়ে দেবার জন্য। দোকানদারটা সত্যি-সত্যি রাগীরাগী চোখে তাকাচ্ছে? কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, সে আমাদের কাছ থেকে চার কাপ চায়ের দাম নিল না। আমি বললাম, চায়ের দাম নেবেন না কেন?

আমার ইচ্ছা আমি নিমু না। বড় যন্ত্রণা করছেন। অখন যান, বিদায় হন।

এর পরেও আমরা অনেকবার গিয়েছি। দোকানি প্রতিবারই বিরক্ত হয়েছে। কিন্তু কোনোবার পয়সা নেয় নি। কেন নেয় নি কে জানে! সব মানুষের মধ্যেই অনেক রকমের রহস্য থাকে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress