Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রজনী (২০০৩) || Humayun Ahmed » Page 10

রজনী (২০০৩) || Humayun Ahmed

কবিতার বই চলছে কেমন

আমি হালকা গলায় বললাম, তোমার কবিতার বই চলছে কেমন? এশা অবাক হয়ে বলল, কি কবিতার বই?

মাসুম বলল, কী-একটা বই নাকি বের হয়েছে? জনে-জনে সেই বই জোর করে বিক্রি করছ।

এশা তরল গলায় হেসে উঠল। হাসতে হাসতেই বলল, মাসুমটা এত মিথ্যা কথা বলে কেন বল তো? তার লাভটা কী? কী আনন্দ পায়?

বই তাহলে বের হয় নি?

না। তবে একদিন নিশ্চয়ই হবে। আমার প্রথম বইটার নামও ঠিক করে রেখেছি। নাম জানতে চাও?

না।

না চাইলেও বলছি নাম হচ্ছে রজনী। নামটা কেমন?

আমি তার উত্তর না দিয়ে বললাম, আমরা কোথায় যাচ্ছি সেটা বল।

বলছি। এক মিনিট লাগবে বলতে। তার আগে বল রজনী নামটা কেমন?

শরৎচন্দ্র মার্কা।

আমারও তাই মনে হয়। তবে প্রথম কবিতার নামে বইটার নাম। প্রথম কবিতাটার নাম হচ্ছে রজনী। ভরা দুপুরের রোদে হাঁটলে আমার কেন জানি মনে হয় এটা দুপুর না, গভীর রাত। কড়া রোদটাকে এক সময় মনে হয় চাঁদের আলো। ঐ নিয়ে লেখা। খুব সুন্দর হয়েছে।

সুন্দর হলে তো ভালোই।

বলব কয়েকটা লাইন? শুনবে?

না।

আহ্‌, শোন না! ভালো না লাগলেও তো অনেকে অনেক কিছু করে। এই যে তুমি তোমার অসুস্থ বাবাকে ফেলে আমার সঙ্গে যাচ্ছ, তোমার নিশ্চয়ই ভালো লাগছে না? তবু তো তুমি যাচ্ছ। কি, যাচ্ছ না?

কোথায় যাচ্ছি সেটা বল।

এশা তা বলল না, নিচু গলায় তার রজনী কবিতা আবৃত্তি করতে লাগল। তার গলা ভার-ভার হয়ে গেল। মনে হচ্ছে তার চোখে জল টলমল করছে। তার কবিতায় নিশ্চয়ই এমন কিছু দুঃখের ব্যাপার নেই। অন্য কোনো দুঃখের কান্না সে এই কবিতা বলার ফাঁকে কেঁদে নিচ্ছে।

আমি এশার হাতে হাত রাখলাম। অনেক দিন পরপর এশার সঙ্গে আমার দেখা হয়। তার হাতে হাত রাখার মতো সুযোগ প্রায় কখনোই হয় না।

এশা কবিতা আবৃত্তি থামিয়ে রুমাল দিয়ে চোখ মুছে বলল, মানুষ হিসেবে তুমি বেশ অদ্ভুত। এতক্ষণ পর তুমি আমার হাতে হাত রাখলে? তাও ধরলে বাঁ হাত।

আমি চমকে হাত সরিয়ে নিলাম। এশা ফিসফিস করে বলল, হাত সরিয়ে নিও না। আমি জানি আজই শেষ। আর কোনোদিন তুমি আমার হাতে হাত রাখবে না। পাশাপাশি হাঁটবে না।

এর মানে কি?

মানে কিছু নেই। এমনি বললাম। আমরা এসে গেছি। রিকশা ছেড়ে দাও। এখান থেকে হেঁটে হেঁটে যাব।

স্ট্রিট-লাইট নেই। রাস্তাঘাট গণ্ডগোলের জন্যেই হয়তো অতিরিক্ত ফাঁকা। আমার নিজেরই ভয়ভয় লাগছে, এশার কেমন লাগছে কে জানে। তার ভাবভঙ্গিতে কিছু প্রকাশ পাচ্ছে না। আমরা মূল রাস্তা ছেড়ে একটা গলির ভেতর ঢুকে পড়লাম। এশা আমার হাত ধরে ছোট-ঘোট পা ফেলছে। এক সময় সে থমকে দাঁড়িয়ে বলল, আমার জীবনটা খুব কষ্টে-কষ্টে কেটেছে। ছোটবেলায় বাবা মরে গিয়েছিলেন। মা আবার বিয়ে করলেন। মার সঙ্গে নতুন সংসারে চলে এলাম। অচেনা-অজানা একজন নির্বোধ মানুষকে বাবা ডাকতে লাগলাম। নতুন সংসারে তিনটা ভাইবোনের জন্মের পর মা মারা গেলেন। আমার অবস্থাটা চিন্তা করে দেখ। এমন একটা সংসারে বড় হচ্ছি, যার সঙ্গে আমার কোনো যোগ নেই। বুঝলে বীরু, খুব ছোটবেলা থেকেই আমি স্বাধীনভাবে বড় হতে চেয়েছি। নিজেকে অন্যরকম করতে চেয়েছি। মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে আলাদা, এটা আমি কখনো মেনে নিতে চাই নি। সহজভাবে মিশি ছেলেদের সঙ্গে। চমৎকার কিছু ছেলেদের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে, সেই সঙ্গে কিছু আজেবাজে ধরনের ছেলেদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে।

এশা চুপ করল। বড় করে শ্বাস টানল। আমার যে-হাত এতক্ষণ ধরে ছিল, সেই হাত ছেড়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলল, আমার পেটে একটা বাচ্চা আছে। তাকে নষ্ট করে ফেলতে হবে। আমার একা খুব ভয় লাগছে। তুমি অল্প কিছুক্ষণ আমার সঙ্গে থাক। যদি মরেটরে যাই তুমি বাসায় খবর দিও। এই জন্যেই তোমাকে এনেছি।

এখা কথাগুলো বলল খুব সহজ ভঙ্গিতে। যেন খুবই সাধারণ একটা খবর দিচ্ছে। কথা শেষ করে ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলল। গাঢ় বেদনার কোনো ছায়া সে নিঃশ্বাসে নেই।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress