Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রঘু ডাকাত : পুণ্যের জয় হইল (দ্বিতীয় খণ্ড) || Panchkari Dey » Page 8

রঘু ডাকাত : পুণ্যের জয় হইল (দ্বিতীয় খণ্ড) || Panchkari Dey

দিবা দ্বিপ্রহরের সময়ে রাজেশ্বরী উপত্যকায় প্রায় দশ-বারজন দস্যু সম্মিলিত হইয়া নানাবিধ কথাবার্তা কহিতেছে, এমন সময়ে প্রতাপবেশী একজন লোক তথায় উপস্থিত হইলেন। পাঠক পাঠিকা! তিনি আর কেহই নহেন, স্বয়ং রায়মল্ল গোয়েন্দা।

এই স্থলে কয়েকটা কথা বলা আবশ্যক। পূর্ব্বেই বলা হইয়াছে, রঘুনাথ দলের নেতা ছিল; কিন্তু তাহার দলের সমস্ত লোক এক সময়ে এক স্থানে থাকিত না। ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন কাৰ্য্যে দশ বা পনের জন মিলিয়া এক-একটি ক্ষুদ্র দল বাঁধিয়া থাকিত। এই সকল ক্ষুদ্র দলের এক-একটি নেতা ছিল। তাহারই আজ্ঞায় এই সকল ক্ষুদ্র দস্যুদল চালিত হইত; কিন্তু ইহারা সকলেই এক নিয়ম, এক পদ্ধতিক্রম এবং এক প্রকার সঙ্কেত, ইঙ্গিত অবলম্বন করিত। একটি ক্ষুদ্র দস্যুদলের নিয়োজিত নূতন একজন লোক অন্যদলের লোকের সহিত অপরিচিত হইলেও তাহার ইঙ্গিত, ইসারা ও দুই-একটি সাঙ্কেতিক চিহ্ন থাকিলেই অবিকল বুঝিতে পারিত যে, সে লোক তাহাদেরই দলস্থ একজন বটে। রায়মল্ল গোয়েন্দা প্রতাপ সাজিয়া, অনেক দিন ধরিয়া রঘুনাথের দলে মিশিয়াছিলেন। তিনি অপরিচিত দস্যুদলের নিকটে পরিচিত হইবার আবশ্যকীয় সকল বিষয়ই জানিতেন। যে প্রতাপ সেই যে রায়মল্ল, একথা রঘুনাথ এবং রঘুনাথের দলের যে কয়জন কারারুদ্ধ হইয়াছে, তাহারা জানিতে পারিয়াছিল বটে; কিন্তু তাহারা ত আর এখন তাঁহার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিতে আসিতে পারিবে না। বিশেষতঃ রাজারামের ক্ষুদ্র দল সবেমাত্র মধ্যভারত প্রদেশ হইতে বহু অর্থ সঞ্চয় করিয়া প্রধান আড্ডায় ফিরিয়া আসিয়াছে। তাহারা প্রতাপের কীর্তিকলাপের কিছুই অবগত ছিল না। এই সকল ভাবিয়া-চিন্তিয়া রায়মল্ল গোয়েন্দা নির্ভয়ে রাজেশ্বরী উপত্যকায় প্রতাপের বেশে রাজারামের দলস্থিত দস্যুগণের সম্মুখীন হইলেন। প্রয়োজনীয় চিহ্ন, গুপ্ত সঙ্কেত ইত্যাদি সমস্তই তিনি জানেন দেখিয়া, কেহই তাঁহাকে ছদ্মবেশী বলিয়া অনুভব করিতে পারিল না। তিনি তাহাদের মধ্যে অতি অল্প সময়ের মধ্যে যেন বেশ পরিচিতের ন্যায় কথাবার্তা কহিতে লাগিলেন। রঘুনাথ বন্দী হইয়াছে শুনিয়া, রাজারামের নেতৃত্ব-ভার গ্রহণ করিতে ইচ্ছা হইয়াছিল। রাজারাম রঘুনাথের ন্যায় ভীরু কাপুরুষ নয়, রায়মল্ল গোয়েন্দা তাহা জানিতেন, অনেক দিন পূর্ব্বে একবার তিনি রাজারামকে একাকী শৈলপথে অবরুদ্ধ করিবার সুযোগ প্রাপ্ত হন। তাহাতে তাঁহার সহিত রাজারামের ঘোরতর দাঙ্গা হয়। তারপর অন্যান্য লোকজন আসিয়া পড়াতে বন্দী হইবার ভয়ে রাজারামকে পলায়ন করিতে হয়। সেই পৰ্য্যন্ত রাজারাম মধ্যভারত প্রদেশে ছিল। রায়মল্লের আশা মেটে নাই। তিনি বীরত্বের সম্মান রক্ষা করিতে সতত প্রস্তুত ছিলেন। তাঁহার বড় আশা ছিল, যদি কখন আবার রাজারামের দেখা পান, তাহা হইলে তাহার বাহুবল ও অস্ত্র শিক্ষানৈপুণ্য একবার ভাল করিয়া পরীক্ষা করিয়া দেখিবেন। এই অবসরে যদি দুর্ঘটনার সুযোগ ঘটে, সেই আশায় রায়মল্ল সাহেব তথায় প্রতাপের পরিচ্ছদ পরিহিত হইয়া উপস্থিত হইলেন। দস্যুদলের সহিত আলাপ করিতে তাঁহার কোন ক্লেশ হইল না।

অন্যান্য কথাবার্তার পর রাজারাম জিজ্ঞাসা করিল, “আচ্ছা প্রতাপ। রায়মল্ল গোয়েন্দা ত আমাদের সর্বনাশ করলে। তাকে কি কোন রকমে জব্দ করা যায় না?”

প্রতাপ। যাবে না কেন? সুবিধামত পেলেই হয়। লোকটা যেন অন্তর্যামী। আমরা কি করি, কোথায় যাই, কোথায় থাকি, সে সব খবর রাখে। কাল তাকে আমি হাতে পেয়েও কিছু করতে পারলেম না।

রাজারাম যেন বিস্মিত হইয়া বলিল, “কাল তাকে দেখেছিলে? কোথায় বল দেখি?”

প্রতাপ। বুঁদীগ্রামে যাবার রাস্তায়।

রাজারাম। তাকে কি রকম পোষাকে দেখলে বল দেখি?

প্রতাপ। সে বুড়ো সেজে ছদ্মবেশে যাচ্ছিল।

রাজারাম তৎক্ষণাৎ উত্তর করিল, “তবে ত ঠিক হয়েছে, সেই লোকটাই বটে!”

প্রতাপ। কি রকম? তুমিও দেখেছিলে না কি?

রাজারাম। শুধু দেখেছিলেম? সে আমাকে অবাক্ ক’রে দিয়েছে। কাল আর একটু হ’লেই তার হাতে আমার মৃত্যু হত।

প্রতাপ। তবে তুমিই বুঝি জগৎসিংহের কথায় বিশ্বাস করে বুঁদীগ্রাম থেকে একটা মেয়ে চুরি করে এনেছ?

রাজারাম। তুমি কেমন ক’রে জানলে?

প্রতাপ। আমি আর জানি না। জগৎসিংহ ত প্রথমে আমাকেই এই কাজের ভার নিতে বলে। তা’ আমি কব কেন? জগৎসিংহকে কি আমি চিনি না? আর একবার তার একটা কাজ ক’রে দিয়েছিলেম— সে এক পয়সাও আমায় দেয় নি, লোকটা ভারি জুয়াচোর। আরও একটা কথা এই যে, যে মেয়েটিকে তুমি এনেছ, রায়মল্ল গোয়েন্দা তার সহায়! যদি প্রাণ যায়, তবু তাকে উদ্ধার করতে সে চেষ্টা করবে। যদি পয়সাই না পাই, তবে একটা দুঃসাহসিক কাজে আমি সহজে হাত দিতে যাব কেন?

রাজারাম। জগৎসিংহকে কি তুমি বিশ্বাস কর না?

প্রতাপ। কেমন ক’রে করি বল? যে লোকটা কাজ করিয়ে নিয়ে টাকা দেয় না, তাকে কি ক’রে বিশ্বাস করি? তার উপরে যে বালিকার ব্যাপার নিয়ে তার এত ঝোঁক, তার উপরে কোন অত্যাচার করতে গেলেই রায়মল্ল গোয়েন্দার হাতে পড়তে হবে। সে ত সহজে ছাড়বার পাত্র নয়। রঘু ডাকাত ত ঐ জন্যই মারা গেল—দলকে দল শুদ্ধ ধরা পড়ল।

রাজারাম কিছু ভীত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “বল কি? তবে ত সৰ্ব্বনেশে কাজে আমি হাত দিয়েছি। আচ্ছা, যদি ঐ বালিকাকে রক্ষা করবার জন্য রায়মল্ল গোয়েন্দার এত ঝোঁক্, তবে সে জগৎসিংহকে জব্দ করে দেয় না কেন?”

প্রতাপ। তা’ বুঝি জান না? কাল রাত্রে জগৎসিংহ ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে গেছে। রাজারাম বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি রকম?”

প্রতাপ। আঃ সে নাস্তানাবুদের একশেষ। শেষকালে অপমান হ’য়ে ভয়ে সরাই থেকে তাড়াতাড়ি পালিয়ে গেল। পিছু পিছু অমনই রায়মল্ল গোয়েন্দা তাকে তাড়া করল। আমি ত কাণ্ডকারখানা দেখেই স’রে পড়লেম। তা’ছাড়া জগৎসিংহের উপরে আমার রাগ ছিল ব’লে আমি আর কিছু করলেম না। ও জুয়াচোর বেটা মারা যায় যাক্—আমার তায় ক্ষতিবৃদ্ধি নি। আমি ত তাই চাই

রাজারাম রায়মল্ল গোয়েন্দাকে প্রথমে একটু সন্দেহ করিয়াছিল; কিন্তু তাঁহার এই সকল কথা শুনিয়া সে সন্দেহ অনেকটা তিরোহিত হইয়া গেল। রায়মল্ল সাহেব কিন্তু এরূপভাবে কথাবার্তা কহিয়া একটি বিশেষ কার্য্যসাধন করিয়া লইলেন। তাঁহার প্রথম উদ্দেশ্য—তারা এখনও রাজারামের নিকটে অবরুদ্ধ দশায় আছে কি না জানিয়া লওয়া। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য, জগৎসিংহের উপরে রাজারামের অবিশ্বাস জন্মাইয়া দেওয়া। বলা বাহুল্য, তাঁহার সে দুই উদ্দেশ্যই সফল হইল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *