Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রঘু ডাকাত : পুণ্যের জয় হইল (দ্বিতীয় খণ্ড) || Panchkari Dey » Page 15

রঘু ডাকাত : পুণ্যের জয় হইল (দ্বিতীয় খণ্ড) || Panchkari Dey

সদার রায়মল্ল সাহেব সরাপখানা হইতে বাহির হইয়া কি করিয়াছিলেন, এ পর্যন্ত তাহা বলা হয় নাই।

তিনি ধীরে ধীরে অগ্রসর হইয়া অনেক দূরে গেলেন। সম্মুখে বা পশ্চাতে কাহাকেও দেখিলেন না। সহসা পিস্তলের আওয়াজ হইল। সোঁ করিয়া একটা গুলি তাঁহার পাশ দিয়া চলিয়া গেল। তিনি বুঝিলেন, দস্যুগণ তাঁহাকে সামনাসামনি আক্রমণ না করিয়া দূর হইতে প্রাণনাশের চেষ্টায় আছে। এরূপভাবে দেহ পরিত্যাগে তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। কাজেকাজেই তাঁহাকে একটু সাবধান হইতে হইল।

রাস্তার ধারেই একটি বড় বাড়ী নির্ম্মিত হইতেছিল। তাহারই সম্মুখস্ত ভিত্তি নির্ম্মাণ করিবার নিমিত্ত একটি প্রকাণ্ড খাদ খনন করা হইতেছিল। তিনি তখনকার মত এক সুযোগ অবলম্বন করিলেন। লম্ফপ্রদানে তিনি তাহার ভিতরে পড়িলেন। যে দুইজন দস্যু তাঁহার পশ্চাদ্ধাবন করিয়াছিল, তাহারা এতক্ষণ অলক্ষিতভাবে তাঁহাকে অনুসরণ করিয়া আসিতেছিল; কিন্তু সহসা তাঁহাকে দেখিতে না পাইয়া মনে করিল, তাহাদের গুলির আঘাতে রায়মল্ল সাহেব আহত হইয়া ভূতলশায়ী হইয়াছেন। মহাহ্লাদে উল্লসিত হইয়া ছুটিয়া তাহারা সেইদিকে আসিল।

একজন বলিল, “কৈ হে?”

আর একজন বলিল, “তাই ত হে, কোথায় গেল, বল দেখি?”

দুইজনে মিলিয়া আশে-পাশে অনেক অনুসন্ধান করিল, তারা রায়মল্ল সাহেবকে খুঁজিয়া পাইল না।

একজন কহিল, “এই রায়মল্ল সাহেব কখনই মানুষ নয়। হয় উপদেবতা, নয় পিশাচসিদ্ধ। দেখতে দেখতে মানুষকে মানুষ উবে গেল বাবা! এ কি ছায়াবাজী নাকি?

আর একজন বলিল, “তা নয়—তা নয়, ঐ গর্তের ভিতরে নিশ্চয় প’ড়ে গেছে। গুলির আওয়াজ শুনে প্রাণের ভয়ে ঐ দিক্ দিয়ে হয় পালাচ্ছিল, গৰ্ত্তটা অত লক্ষ্য করেনি, একেবারে তার ভিতর প’ড়ে গেছে।”

“তবে ভালই হয়েছে—এইবারে ত ঠিক্ বাগে পেয়েছি। আর যায় কোথা!”

দুইজনে অত্যন্ত উৎসাহিত হইয়া তথায় উপস্থিত হইল। গর্ভের ভিতর অন্ধকার! কেহ তাহার ভিতর আছে কি না, জানিবার কোন উপায় নাই।

একজন বলিল, “গুলি করা যাক্।”

অপরজন বলিল, “ততে কি লাভ হবে, অন্ধকারে লাগ্‌ল কি না লাগ্ল কিছুই বোঝা যাবে না। তার চেয়ে চল, দু’জনে গর্ভের ভিতর নেমে পড়ি।”

রায়মল্ল সাহেব এ অবস্থায় কি করিবেন, তাহা পূর্ব্বে ভাবিয়া ঠিক করিয়া রাখিয়াছিলেন। পাঠক, এস্থলে জানিয়া রাখুন, দস্যুদ্বয়ের মধ্যে একজন রাজারাম ও আর একজন রঘু ডাকাত।

রঘুনাথ বলিল, “রাজারাম! দুজনে একদিক দিয়ে নামা হবে না, তুমি ওদিক্ দিয়ে এস, আমি এই দিক্‌ দিয়ে নামি।”

রাজারাম তাহাই করিল। রায়মল্ল সাহেবও প্রস্তুত ছিলেন। যেই রঘু ডাকাত একদিক্ দিয়া ধীরে ধীরে অবতরণ করিতেছে, রায়মল্ল সাহেব তৎক্ষণাৎ তাহার দুই পা ধারণ করিয়া সজোরে এক টান্‌ দিলেন। রঘুনাথ পড়িয়া গিয়াই চীৎকার করিয়া উঠিল। রায়মল্ল সাহেব তাহার হাত হইতে পিস্তলটি কাড়িয়া লইয়া, তাহার বুকের উপর চড়িয়া বসিয়া তাহার গলা টিপিয়া ধরিলেন। রাজারাম তাড়াতাড়ি নামিতেছিল;কিন্তু সহসা রঘু ডাকাতের কণ্ঠ নিঃসৃত গোঁ গোঁ শব্দে সে যেন ক্ষণকাল হতবুদ্ধি হইয়া গেল। সেই অল্প অবকাশের মধ্যে রায়মল্ল সাহেব নিজে বস্ত্রমধ্যে হইতে একগাছি ছোট-খাট দড়ি বাহির করিয়া রঘু ডাকাতের করদ্বয় পশ্চাদ্দিকে বাঁধিয়া ফেলিলেন। তিনি যেরূপ ভাবে রঘু ডাকাতের গলা টিপিয়া ধরিয়াছিলেন, তাহাতে যদিও তাহার মৃত্যু হয় নাই, কিন্তু তাহার কথা কহিবার সামর্থ্য ছিল না। মাঝে মাঝে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হইবার যো হইতেছিল। রঘু ডাকাতের কণ্ঠনিঃসৃত অস্পষ্ট শব্দ শুনিয়া রাজারাম কিছুক্ষণের জন্য কিংকৰ্ত্তব্যবিমূঢ় হইয়া পড়িয়াছিলেন বটে, কিন্তু সে রঘু ডাকাতের ন্যায় ভীরু কাপুরুষ নয়। তাহার সাহস আছে, শক্তি আছে, মনের তেজ আছে। দুই-চারি মুহূর্ত অপেক্ষা করিয়াই সে-ও বিপদে গর্ভের ভিতর নামিয়া পড়িল। রায়মল্ল সাহেব সেই সময়ে একটু পাশ কাটাইয়া দাঁড়াইলেন। যেমন রাজারাম তাঁহার নিকটস্থ হইল তিনি সজোরে এক ধাক্কা দিলেন। সে তাহাতেই পড়িয়া গেল। রাজারামের হস্তে যে পিস্তল ছিল, সে পড়িয়া যাওয়াতে সেই পিস্তলের একটা আওয়াজ হইল। গুলি পিস্তল হইতে বাহির হইয়া রাজারামকেই আঘাত করিল। সেই আঘাতেই সে অজ্ঞান হইয়া পড়িল।

রায়মল্ল সাহেব বুঝিতে পারিলেন যে, রাজারাম আপনার গুলিতে নিজেই আহত হইয়াছে, নইলে নিশ্চয়ই পড়িয়াই উঠিতে চেষ্টা করিত। তিনি আর কালবিলম্ব না করিয়া তাহাকেও পূর্ব্বোক্ত প্রকারে ধরিয়া ফেলিলেন।

এতক্ষণে রঘু ডাকাত কথা কহিতে পারিল। রঘুনাথ ডাকেন “রাজারাম! “রাজারাম!”

কেহই উত্তর করিল না। রায়মল্ল সাহেব ক্রোধভরে রঘুনাথের মুখে পদাঘাত করিয়া বলিলেন, খবরদার! কথাটি ক’য়ো না। আস্তে আস্তে উঠে আমার সঙ্গে চলে এস।”

রঘুনাথ বলিল, “কেমন ক’রে যাব, আমার হাত যে বাঁধা”।

রায়মল্ল সাহেব তাহাকে উঠাইয়া দাঁড় করাইলেন। বলিলেন রঘু! এবার আর তোমার পরিত্রাণ নাই; কিন্তু এখনও যদি আমার কথা শোন, তা’ হ’লে তোমার শাস্তির অনেক লাঘব করে দিতে পারি।”

রঘুনাথ। আমায় যদি তুমি মেরে ফেল, তা’ হ’লেও আমি তোমার কথা শুনতে প্রস্তুত নই। আমায় নিয়ে তোমার যা ইচ্ছা, তাই করতে পার; আজ যদিও আমি তোমার কিছু করতে পারলেম না, কিন্তু এক দিন আমারই হাতে তোমার মৃত্যু হবে। আজ যদি আমি জেলে যাই, তবু তোমার কথা ভুলব না। দু’বৎসর হ’ক্, দশ বৎসর হ’ক্ জেল থেকে খালাস পেলেই, আগে এসে তোমাকে খুন করব।

রায়মল্ল সাহেব দেখিলেন, রঘু ডাকাত সহজে তাঁহার কথায় সম্মত হইবে না। তিনি তাহাকে পুনরায় সজোরে এক ধাক্কা মারিলেন। রঘুনাথ অকস্মাৎ ধাক্কা খাইয়া আর সাম্‌লাইতে পারিল না— পড়িয়া গেল। রায়মল্ল সাহেব রঘুনাথের গায়ের কাপড় খুলিয়া পুনরায় তাহার হস্ত পদ দৃঢ়রূপে বন্ধন করিলেন। তারপর সেই গর্ত হইতে উঠিয়া সেই সরাপখানার দিকে ছুটিলেন। তথায় উপস্থিত হইয়া দুইজন অনুচরকে সঙ্গে লইলেন এবং আর একজন অনুচরকে একখানি গাড়ী ডাকিয়া আনিতে বলিলেন। অর্ধ ঘণ্টার মধ্যে রঘু ডাকাত ও রাজারাম কোতোয়ালীর অন্ধকূপে নিক্ষিপ্ত হইল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *