Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রক্তের হোলি || Samarpita Raha

রক্তের হোলি || Samarpita Raha

মহুয়া খুব আনন্দে আছে—–আজ ছেলের মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ—-সাউথ পয়েন্টের মেধাবী ছাত্র ময়ূখ—-পরীক্ষা দিয়ে বেড়িয়ে এসে বলল মা ড্রাইভার কাকুকে বলো—- আমি রঙ কিনব——কাল আমাদের “রঙ -খেলা”——
মহুয়া ও ময়ূখ বলে” হোলি হেই”।
কী মজা!!
মা আমার পরীক্ষা শেষ।
কাল হোলি—-মহুয়া দুই কলি গান গেয়ে ওঠে।
“খেলব বলে রঙ দেব না তাই কখনো হয়,এসো এসো বাইরে এসো ভয় পেও না আজ,এসেছে হোলি এসেছে”।

ড্রাইভার বলে বৌদি কাল আমাকে তো যেতে হবে না—– সাহেবকে সাবধানে চালাতে বলবেন—–গিয়ারটা হাল্কা অসুবিধা করছে।
ময়ূখ বলে আজ ন‍্যাড়াপোড়া।
ড্রাইভার তখন সুর করে বলে―আজ আমাদের ন‍্যাড়াপোড়া…কাল আমাদের দোল…পূর্ণিমাতে চাঁদ উঠেছে ..বল হরিবোল।

ময়ূখ বলে তুমি মা আজ রাত থেকে একাদশ শ্রেণীর পড়া শুরু করতে বলো না।
“কি বলছিস ময়ূখ”?
না বাবা তুমি সব পারো!!
মারব ময়ূখ—-তোর ভালোর জন্য বলি।

দুদিন যাক —-আমি তোকে পড়ার কথা বলব না—–তুই বলবি মা সময় কাটছে না।

ড্রাইভার বলে …..যাও ময়ূখ …রঙ বাজারে এসেছি—–রঙ কিনবে তো কিনে নাও??

পুরো পাঁচশো টাকার রঙ কেনে ময়ূখ।
রঙ কিনে খুশিতে ডগমগ।
কাকু এই নাও রঙ তোমার ছেলেকে দিও।মহুয়া বলে আমার সোনা ছেলে।আবীর কিনেছিস??
হ‍্যাঁ পাঁচ রকমের। এছাড়া বেলুন,রঙ,পিচকিরি ও কিনেছি।
তা পরীক্ষা কেমন হলো?
রেজাল্ট দেখে নিও।
সে বাবা অনেক দেরি।
হ‍্যাঁ মা খুব ভালো হয়েছে।
পরীক্ষা দিয়ে এসে মহুয়া জামা কাপড় গুছিয়ে নেয়— -রাত তিনটেতে মহুয়ারা শ্বশুরবাড়ি যাবার জন্য গাড়ি বার
করে—-শ্বশুরবাড়ির কাছাকাছি বাপের বাড়ি—–সব প্রিয় বন্ধুর বাচ্চাদের আজ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ—–আজ সবাই রঙ খেলব—–তিনজনেই সাদা ড্রেস পরে আসছিল—-মহুয়ার কর্তা চালাচ্ছিলেন গাড়ি। বালিগঞ্জের গড়ফায় থাকে মহুয়ারা।শ্বশুর বাড়ি সেই ত্রিবেণীতে।

খুব গল্পে মশগুল সবাই—–ময়ূখ রঙ বার করে ……মহুয়া তখন ফোন করে কলেজের বান্ধবীকে …..কি রে সমু এসে গেছি!
প্রায় গাড়ি চুঁচুড়ার কাছাকাছি।

সমু ও বলে ওরাও বাইক নিয়ে ভোরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে বেড়িয়েছে।সমু বলে শোন আমার কর্তা গান করছে।
এ *পথ যদি শেষ না হয় তবে কেমন হতো..তুমি বলতো।
ঠিক আছে তোর হিরো কে বল সাবধানে বাইক চালাতে।
সমু তুই শর্মিলাকে ডেকে নে।
বাবা মহুয়া তোরা কত ভোরে বার হয়েছিস?
তিনটেতে সমর্পিতা ।
সমু চুঁচুড়ার মোড় টান নিচ্ছি—–
—-তারপর ফোনে বিরাট আওয়াজ—–মহুয়া যেন বলছে সমু —–আমরা রক্তের হোলি খেলছি—– মাসিমনী আমি রঙ মেখেছি—– আ–মা-দের রক্তের রঙের খেলা চলছে।-
ফোনে আমি হ‍্যালো করছি- –একজন পুরুষের কন্ঠস্বর—–ওনাদের *পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে মারাত্মকভাবে।চুঁচুড়া হাসপাতালে আসুন।

ওনাদের গাড়ি চুঁচুড়ার মোড় থেকে টার্ন নেবার পর এক ট্রাক সজোরে ধাক্কা
মারে।
আমি ছুটি হাসপাতালে বাবা তৎক্ষণাৎ মৃত্যু ,ছেলে সবে গেল,মহুয়া তারপর। তিনজনে সাদা জামা রক্তে লাল ও চিরনিদ্রায় শায়িত।
একটু আগেই আমাদের সাবধানে বাইক চালাতে বলেছিল

আমার বন্ধুর সাথে রঙ খেলা হলো না।মহুয়া সব বন্ধুদের একত্রিত করেছিল,বলেছিল অনেক বছর রঙ খেলি নি,ছেলের পড়া পড়া করে।

এবার জব্বর হোলি খেলব।কোথায় খাব,সব মহুয়ার প্ল্যান ছিল।
হায় রে!! এ যে অন্য হোলি !
ঘটনাটি দুই হাজার সাত সালের।
তারপর থেকে হোলি আসলেই ওর কথা মনে পড়ে।
এ হোলি ভুলবার নয়।রক্তের হোলি। তারপর থেকে হোলির দিন আর ঐ রঙ নিয়ে মাতামাতি করা হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *