Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » যন্ত্রমানব || Roma Gupta

যন্ত্রমানব || Roma Gupta

মাতলা পারে আতির আলি ও আমিনা দুই সন্তান নিয়ে বাস করতো। হতদরিদ্র পরিবার।ভাগচাষ আর মাছ ধরেই সংসার চলে। গোটা কয়েক পরিবার নিয়ে ছোট্ট বসতি। নদীর ধারে বসতি হওয়ায় মাঝে মধ্যে ঝড়ঝঞ্ঝায় খুব অসুবিধায় পড়তে হয়। অতিবৃষ্টিতে মাতলা বানভাসি হয়ে ওঠে, জল বাড়ির উঠোনে চলে আসে। এমনি এক বর্ষায় নদী পার ভেঙ্গে তাদের গ্ৰাম ভেসে যায়। ঘরের মাটির দেওয়াল খসে পড়ে আসবাবপত্র সব ভাসতে থাকে। পোষ্য ছাগল, গবাদীপশু ভেসে চলে যায় স্রোতে। আতির কোনোরকমে সামান্য জিনিস পোটলা বেঁধে বৌ, বাচ্চা নিয়ে মানুষের দলের সঙ্গে অজানা এক স্কুলবাড়িতে ওঠে। সেখানে লক্ষ্য লক্ষ্য লোকের মধ্যে তার পোটলা চুরি হয়ে যায়। সে একেবারে কপর্দকহীন হয়ে অন্যত্র বসতির সন্ধানে পরিবার নিয়ে হাঁটতে থাকে।

অনেক দূর হাঁটার পরও সে একটু ঠাঁই নেওয়ার জায়গা পেলো না।

অবশেষে সন্ধ্যা হলে একটা অরণ্যের কাছে পৌঁছায়। উঁচু জায়গা। আতির বলে চল আমিনা, জনমানব শূন্য জঙ্গল, এখানেই বসতি স্থাপন করি। আমিনা বলে, লোকের বাস নেই, ঘন জঙ্গল ; আমাদের যদি বাঘ, ভাল্লুকে খায়? আতির বলে এ সুন্দরবন নয়, এসব জঙ্গলে বাঘ ভাল্লুক থাকেনা। বনে বাস করে এখন বনকে ভয়! আচ্ছা এখান কিছুক্ষণ বিশ্রাম নে, তারপর লোকালয় খুঁজবো।

অদূরে স্রোতের আওয়াজ শুনে আতিউর একটু এগিয়ে দেখে একটা ছোটো নদী আর তার পারে কিছু লোক দাঁড়িয়ে। আরও কিছুটা এগোতেই দেখলো শ্মশান; লোকগুলো মৃতদেহ দাহ করাবার কাজে এসেছে। আতির কাছে গিয়ে জানতে চাইলো জঙ্গলে হিংস্র পশুর ভয় আছে কিনা? সকলেই জানালো হিংস্র জন্তুর নেই, রাতে শুধু শিয়ালের ডাক শোনা যায়।

শ্মশানে হারু ডোম ও পলাশ ডোম পরিবারসহ থাকে। আতির তার অবস্থার কথা জানালে হারু ডোম নিজেই বললো, এখানে বাসা করে থাকেন না কেনে! ভয়ে কিছু নাই। আমরা অনেকদিন আছি। তবে বাজার, হাট করে খাওয়ার খুব অসুবিধা।

সেদিন হারু ডোমের দেওয়া মুড়ি বাতাসা আর নদীর জল খেয়ে খোলা আকাশের নিচেই আতিরদের রাত কাটে। পরদিন বাসা বানাবার জন্য হারু ডোমের কাছ থেকে কুড়ুল নিয়ে জঙ্গল থেকে গাছ কেটে তার চিরে পাটা করে সারাদিন খেটে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করে।মাটি খুঁড়ে সরু ডাল গেঁথে মাটির লেপন দিয়ে দেওয়াল তৈরি করে। দুদিন অবিরাম যন্ত্রের মত কঠোর পরিশ্রম করে বাড়ি গড়ে তোলে। হারু ও পলাশ ডোম দেখে অবাক। কপর্দকশূন্য আতির কথায় কথায় বলে একটা কাজ পেলে সংসারটা তার বাঁচে। সন্তানের মুখে আহার জুটে। পলাশ বললো, এখানে কাজ দেবে কে? আমরা অচ্ছুৎ, মড়া পুড়িয়ে যা পাই তাইলে আধপেটা খেয়ে চলি। ভেবেছিলাম জঙ্গল পরিষ্কার করে চাষ করবো, তার শক্তিতে কুলোয় নাই।

আতিরের মন হলো, ভাগচাষ করেছি কত ; একটু খাটলেই চাষের জমি অনেক পাওয়া যাবে। যেমন ভাবা তেমনি শুরু।কুড়ুল দিয়ে ভোরবেলা থেকে জঙ্গল সাফাইয়ের কাজে হাত দিলো। গাছ কেটে, তার ছোটো টুকরো করে জ্বালানির জন্য মজুত রাখলো। তারপর চাষের উপযোগী জমি তৈরিতে মন দিলো।

এবার হারু ও পলাশও এগিয়ে এলো।শাবল দিয়ে গাছের গুঁড়ি তুলে, কোদাল চালিয়ে মাটি কর্ষণ করে চাষের উপযোগী করলো নাওয়া খাওয়া ভুলে।

নদীর ওপারে শহর গঞ্জে যাওয়ার খুব অসুবিধা। নদী পার হওয়া সম্ভব নয়, অন্য রাস্তায় ঘুরে যেতে সময় তিন-চার ঘন্টা লেগে যায়। প্রতিনিয়ত ধান, ফসলের বীজ কিনে আনা সহজ নয়। শুনেই আতির আবার গাছ কেটে সাঁকো তৈরির কাজে লাগলো।ফলে গঞ্জে যাওয়া সহজ হলো। নিত্যদিন যন্ত্রের মত খেটে শেষে জীবনযাপনে সুখের মুহূর্ত এলো। জলের প্রয়োজন নদী মেটায়। হারু আর পলাশ ডোমেইন সাবাশি দিয়ে বলে, আতির তুমি সত্যিই যন্ত্রমানব। এমন পরিশ্রম একটানা কেউ করতে পারে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *