ইমন ভেবেছিল
ইমন ভেবেছিল প্রথম যখন সে তার বাবাকে দেখবে, চিনতে পারবে না। বাবার চেহারা তার মনে ছিল না। নিউ জার্সির বাড়িতে বাবার ছবি থাকলে সে ছবি দেখে চেহারা মনে করত। কিন্তু সেই বাড়িতে তার কোনো ছবি নেই। মার পুরনো অ্যালবামে হয়তো আছে, কিন্তু মা অ্যালবাম তালাবন্ধ করে রাখে। ফ্যামিলি রুমে ফায়ারপ্লেসের পাশে কিছু অ্যালবাম রাখা আছে। সেখানে সবই নতুন ছবি। পুরনো ছবি একটাও নেই।
বাবার কথা মনে হলেই ইমনের চোখে ভাসে তার মুখের কাছে একটা মুখ। মুখটা হাসি হাসি। আর দুটা চকচকে চোখ। চকচকে চোখের ব্যাপারটা নিয়ে ইমন চিন্তা করেছে। মানুষের চোখ কি আসলেই চকচক করে? রাতেরবেলা হরিণের চোখে আলো পড়লে চোখ নীল রঙের হয়ে যায় এবং ঝিকমিক করতে থাকে। তাদের নিউ জার্সির বাড়ির পেছনের পোর্চে শীতের সময় জঙ্গল থেকে হরিণ আসে। যখন পোর্চের আলো তাদের চোখে পড়ে, তখন তাদের চোখ তারার মতো ঝিকমিক করতে থাকে। মানুষের বেলাতেও কি এরকম হয়? একবার সে মাকে জিজ্ঞেস করল। রেবেকা বললেন, তোমার সব উদ্ভট প্রশ্ন। মানুষের চোখ চকচক করবে কেন?
ইমন বলল, চোখ যখন খুব কাছাকাছি আসে, তখন কি চকচক করে?
রেবেকা বললেন, যে চোখ দূরে চকচক করে না, সেই চোখ কাছে এলেও চকচক করে না। কেন এমন আজগুবি প্রশ্ন করেছ?
এমনি।
এমনি না। তুমি বিনা কারণে প্রশ্ন করার ছেলে না। নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। কারণটা বলো।
ইমন কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। রেবেকা বললেন, আমি বরং এক কাজ করি। আমার মুখ তোমার মুখের খুব কাছাকাছি নিয়ে আসি। তুমি দেখ চোখ চকচক করে কি-না।
ইমন বলল, আচ্ছা।
রেবেকা ইমনের খুব কাছাকাছি চলে এলেন। এত কাছে যে তার নাকের গরম নিঃশ্বাস ইমানের গালে লাগতে লাগল। রেবেকা রাগ-রাগ ভঙ্গি সরিয়ে দিয়ে প্রায় আদুরে গলায় বললেন, আমার চোখ কি চকচক করছে?
না।
তুমি কি তোমার প্রশ্নের জবাব পেয়েছ?
হুঁ।
ইমন যদিও বলেছে সে তার প্রশ্নের জবাব পেয়েছে— আসলে কিন্তু পায় নি। তখনো সে ভেবেছে কারো কারো চোখ নিশ্চয় চকচক করে। চকচকে চোখের ইংরেজি হলো— Glittering eyes. watery eyes না।
ইমন রিকশায় করে তার বাবার সঙ্গে যাচ্ছে। এই প্রথম যে সে রিকশায় চড়ল তা-না। আগেও চড়েছে। দুবার চড়েছে। সেই দুবার তার খুবই ভয় লাগছিল, মনে হচ্ছিল এই বুঝি ছিটকে পড়ে যাবে। এখন কোনো ভয় লাগছে না। এখন তার মনে হচ্ছে ছিটকে পড়ে যাবার মতো কিছু হলে তার বাবা তাকে খপ করে ধরে ফেলবেন।
বাবাকে প্রথম দেখে সে ছোটখাটো একটা চমক খেয়েছে। নিজের উপর খানিকটা তার রাগও লেগেছে। কেন তার এতদিন ধরে মনে হয়েছে সে বাবার চেহারা ভুলে গেছে? মোটেও ভোলে নি। তা না হলে দেখামাত্র সে কীভাবে চিনল? তাকে সামনে এসেও দেখতে হয় নি। পেছন থেকে দেখেই সে চিনে ফেলেছে। ইমন সামান্য লজ্জা পাচ্ছিল— বাবা তাকে দেখে কী করেন এই ভেবে লজ্জী। ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু-টুমু খেলে খুবই লজ্জার ব্যাপার হবে। ইমন বড় ধরনের স্বস্তিবোধ করল, যখন সে দেখল তার বাবা সেরকম কিছুই করলেন না। তার দিকে তাকিয়ে বললেন, যাবার জন্যে রেডি?
ইমন বলল, হুঁ।
তোমার মা কই?
ইমন বলল, মা ছোটখালার বাসায় বেড়াতে গেছেন। আমাকে বলে গেছেন তুমি এলে তোমার সঙ্গে চলে যেতে।
তোমার সঙ্গে কী যাচ্ছে? অনেক পুটলা-পুটলি দেখছি। দাও কিছু আমার কাছে দাও। তোমার হাতেরটা দাও।
হাতেরটা দেয়া যাবে না।
হাতে কী?
চাইনিজ লণ্ঠন।
চাইনিজ লণ্ঠনটা তাহলে তোমার হাতেই থাকুক। ব্যাক প্যাকটা আমার কাছে দাও।
বাবার আরেকটা জিনিস ইমনের খুবই ভালো লাগল। তার মধ্যে ন্যাগিং ভাব নেই। সে যখন বলল, হাতের জিনিসটা দেয়া যাবে না, তখন বাবা এই নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেন নি। অন্য যে কেউ হলে বলত, কেন দেয়া যাবে না? মা শুধু এই প্রশ্ন করেই চুপ করে থাকত না। মা বলত, দেখি প্যাকেটটা খোল। আমি দেখতে চাই এটা এমন কী মহার্ঘ বস্তু যা আমার হাতে দেয়া যাবে না। মহার্ঘ বস্তু বাক্যটা মা ঘনঘন ব্যবহার করে। মহার্ঘ বস্তুর ইংরেজি হচ্ছে— Valuable goods.
রিকশা বড় রকমের একটা আঁকুনি খেল। ইমন সিট থেকে পড়ে যেতে ধরেছিল। শওকত খপ করে তাকে ধরে ফেলল। ইমন মোটেই অবাক হলো না। সে জানত বাবা তাকে কিছুতেই রিকশা থেকে পড়তে দেবেন না।
শওকত বলল, ইমন, তুমি তো বাংলা বেশ ভালো বলতে পার। অল্পবয়েসী বাচ্চারা বিলেত-আমেরিকায় গেলে ইংরেজিটা অতি দ্রুত শেখে। যত দ্রুত শেখে তার চেয়েও দ্রুত গতিতে বাংলা ভুলে যায়। তোমাদের নিউ জার্সির বাড়িতে তুমি কি বাংলায় কথা বলো?
মার সঙ্গে বাংলায় কথা বলি।
বাংলা পড়তে পার?
পারি। গল্পের বই পড়ি।
সবশেষ বাংলা বই কোনটা পড়েছ?
বিষের কাঁটা।
লেখকের নাম কি মনে আছে?
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়।
বলো কী! এই বই তো বাচ্চাদের জন্যে কঠিন।
কঠিন না— এটা একটা ক্রাইম সলভিং ডিটেকটিভ স্টোরি।
বাংলা বই কি তুমি নিজের আগ্রহেই পড়? না-কি তোমার মা জোর করে তোমাকে পড়নি?
প্রথম প্রথম বকা দিয়ে পড়াতেন। এখন নিজেই পড়ি।
আচ্ছা দেখি এখন তোমার বাংলা জ্ঞানের একটা পরীক্ষা হবে। বলো দেখি পানি শব্দটার ইংরেজি কী?
Water.
হয়েছে, দশে দশ পেয়েছ। বলো জল শব্দের ইংরেজি কী?
Water.
আবারো হয়েছে, দশে দশ। এখন বলো অষু শব্দটার ইংরেজি কী?
Water.
হয়েছে। এখন পেয়েছ দশে এগারো। এক নাম্বার বেশি দিয়ে দিলাম। দশে এগারো দেবার নিয়ম নেই, তবে আমি পরীক্ষক হিসেবে ভালো। আমি কাউকেই ফেল করাতে চাই না। আমি চাই সবাই পাস করুক। ভালো স্টুডেন্টরা দশে এগারো, বারো পাক।
ইমন মাথা নিচু করে হাসল। শওকত বলল, ইমন শোনো, আমার মনে ক্ষীণ সন্দেহ হচ্ছে অষু শব্দটার মানে তুমি জানো না। তুমি অনুমানে বলেছ। যেহেতু পর পর দুটি শব্দের ইংরেজি হলো Water, তুমি ধরেই নিয়েছ পরেরটাও তাই হবে। আমার অনুমান কি ঠিক?
হুঁ ঠিক।
তাহলে তো তোমাকে দশে এগারো দেয়া যায় না। নাম্বার অনেক কমে যাবে। তোমাকে এখন দিলাম দশে পাঁচ। ঠিক আছে?
ইমন বলল, না ঠিক নেই।
ঠিক নেই কেন?
ইমন শান্ত গলায় বলল, আমার উত্তর শুদ্ধ হয়েছে। তুমি সেইভাবে আমাকে নাম্বার দেবে। উত্তর কীভাবে দিয়েছি সেটা চিন্তা করে নাম্বার দেবে না।
তোমার যুক্তি গ্রাহ্য। গ্রাহ্য মানে জানো? গ্রাহ্য মানে হলো গ্রহণযোগ্য। Accepted. এখন তুমিই বলো দশে তোমাকে কত দিতে হবে?
আগে যা দিয়েছ তাই। দশে এগারো।
ঠিক আছে তাই দিলাম। দশে এগারো।
থ্যাংক য়্যু।
শওকতের পায়ের কাছে বড় লাল রঙের একটা স্যুটকেস। হাতে ইমনের সবুজ রঙের ব্যাক প্যাক। শওকত ব্যাক প্যাক পায়ের কাছে রেখে বাঁ হাত দিয়ে ইমনের কোমর চেপে ধরেছে। কিছুটা জায়গা রাস্তা খুব খারাপ। খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। অথচ মাত্র এক সপ্তাহ আগেই নতুন পিচ ঢেলে রাস্তা ঠিক করা হয়েছিল।
শওকত বলল, এ জার্নি বাই রিকশা কেমন লাগছে?
ভালো লাগছে।
এই ঝাঁকুনি তো ভালো লাগার মতো কিছু না। ভালো লাগছে কেন?
ইমন বলল, আমি জানি না কেন ভালো লাগছে।
শওকত বলল, সবচে ভালো রিকশা ভ্রমণের একটা ব্যবস্থা আমি করব। যাতে তুমি যতদিন বেঁচে থাক, ততদিন যেন এই ভ্রমণের কথা তোমার মনে থাকে।
সেটা কেমন?
আমি কী করব শোন, প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে খোলা রিকশায় তোমাকে নিয়ে বের হব। রাস্তায় পানি জমে যাবে। পানির ভেতর দিয়ে রিকশা চলবে। তোমার কাছে মনে হবে, তুমি চাক্কা লাগানো নৌকায় চড়েছ। মাথার উপর ঝুমঝুম করে বৃষ্টি পড়বে। ঠাণ্ডা বাতাসে তোমার শরীর শিরশির করবে।
ইমন মুগ্ধ গলায় বলল, I think I will like that.
তোমার কি ঠাণ্ডার ধাত আছে?
ঠাণ্ডার ধাত মানে কী?
ঠাণ্ডার ধাত হলো অল্পতেই যাদের ঠাণ্ডা লাগে। একটা আইসক্রিম খেলে গলা ফুলে গেল। মাথায় তিন ফোঁটা বৃষ্টি পড়ল অমনি জ্বর, কাশি। আছে ঠাণ্ডার ধাত?
আছে।
থাকলে থাকুক, আমরা বৃষ্টিতে ভিজবই।
Ok.
ইমন লক্ষ করল, তার কেন জানি কাদতে ইচ্ছা করছে। গলা ভার ভার লাগছে। গলার কাছে কী যেন আটকে আছে। অথচ কাঁদার মতো কোনো ঘটনা ঘটে নি। বাবার সঙ্গে রিকশা করে যেতে তার খুবই ভালো লাগছে। আবার একই সঙ্গে কান্নাও পাচ্ছে। মনে হচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখ ভিজে যাবে। কান্না বন্ধ করার সহজ বুদ্ধি হলো, কঠিন কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলা। তেমন কোনো কঠিন বিষয় ইমনের মাথায় আসছে না।
শওকত বলল, চুপ করে আছ কেন? কথা বলো।
ইমন কোনো কথা বলল না। চুপ করেই রইল। শওকত তাকিয়ে দেখল, ছেলের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। সে কিছু বলল না।
রেবেকা সারাদিন ছেলের টেলিফোনের জন্যে অপেক্ষা করেছে। ইমন টেলিফোন করে নি। রেবেকা খোঁজ নিয়েছে ইমনকে তার বাবা বাসা থেকে নিয়ে গেছে সকাল সাড়ে দশটায়। এখন বাজে সন্ধ্যা সাতটা। এর মধ্যে টেলিফোন আসে নি। মোবাইল টেলিফোনে টেলিফোন করার কায়দাকানুন তাকে খুব ভালো করে শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। ইমন কোনো বোকা ছেলে না যে ভুলে যাবে। তাকে বারবার বলা হয়েছে— বাবা যে বাসায় থাকে, সেখানে পৌঁছার পরই যেন টেলিফোন করা হয়। ইমন তা করে নি। রেবেকা যা করতে পারে তা হলো— ছেলের টেলিফোনের অপেক্ষা না করে নিজেই কাজটা করা। সেই ইচ্ছাও হচ্ছে না। তার খুবই চিন্তা লাগছে। ছেলেকে নিয়ে চিন্তা না। ছেলে কেন টেলিফোন করছে না— তা নিয়ে চিন্তা।
ইমনের টেলিফোন এলো রাত আটটায়। সারাদিনে সে কোনো টেলিফোন করে নি– এই নিয়ে রেবেকা কোনো কথা বলল না। যেন কিছুই হয় নি সেরকম গলার স্বর করে বলল, কেমন আছ ইমন?
ইমন বলল, ভালো।
ফান হচ্ছে?
হুঁ।
কী ফান হচ্ছে বলো তো?
ইমন জবাব দিল না। রেবেকা বললেন, সারাদিনে কী কী করলে সেটা বলো।
ইমন এই প্রশ্নেরও জবাব দিল না। রেবেকা শঙ্কিত বোধ করলেন। ছেলে যদি হঠাৎ কথা বন্ধ করে দেয়, তাহলে বুঝতে হবে সে আর মুখ খুলবে না। সামনে থাকলে তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে আবার কথা শুরু করা যেত, এখন সে সামনেও নেই।
রেবেকা ছেলের কথা শুরু করানোর জন্যে বললেন, ইমন, তুমি কি তোমার বাবাকে চাইনিজ লণ্ঠনটা দিয়েছ?
ইমন বলল, কিছুক্ষণ আগে দিয়েছি।
দিতে এত দেরি হলো কেন?
রিকশা থেকে নেমে হাত থেকে পড়ে ভেঙে গিয়েছিল। আমি আরেকটা নতুন বানিয়ে কিছুক্ষণ আগে দিয়েছি।
সারাদিন বসে বসে চাইনিজ লণ্ঠন বানালে?
হুঁ।
বাবা রঙিন কাগজ কিনে আনল। গাম কিনে আনল। মোমবাতি আনল।
সারাদিন লণ্ঠন বানানো নিয়ে ব্যস্ত ছিলে বলে আমাকে টেলিফোন করতে পার নি। তাই না?
তোমার বাবা কি লণ্ঠন দেখে খুশি হয়েছে?
হ্যাঁ।
সে এখন কোথায়? কী করছে?
বাবা এখন আরেকটা লণ্ঠন বানাচ্ছে।
তাই নাকি?
হুঁ। আমি তো তিনটা রঙ ব্যবহার করেছি— লাল, সবুজ আর হলুদ। বাবা বলছে তিনটা রঙ ব্যবহার না করে একটা রঙের অনেকগুলি শেড ব্যবহার করে বানালে খুব সুন্দর হবে। যেমন ধরো সবুজ রঙ। বাবা এখন সবুজ রঙের পাঁচটা শেড় দিয়ে বানাচ্ছে।
সবুজ রঙের পাঁচটা শেড় তুমি পাবে কোথায়? বাজারে তো একটাই সবুজ রঙের কাগজ পাওয়া যায়।
সবুজ রঙের পাঁচটা শেড বাবা রঙ গুলে বানিয়েছে।
ও আচ্ছা, তোমার বাবা তো একজন পেইন্টার। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম।
ইমন বলল, মা, আমি এখন রাখি। বাবাকে সাহায্য করতে হবে। বাই।
রেবেকা কিছু বলার আগেই ইমন টেলিফোন রেখে দিল। খুব জরুরি প্রশ্ন রেবেকার করা হলো না— আজ দুপুরে সে কী খেয়েছে? খাবারটা কি ঘরে তৈরি হয়েছে, না বাইরে থেকে এসেছে?
শওকত খুব মন দিয়েই চাইনিজ লণ্ঠন বানাচ্ছে। ফ্রেম তৈরি হয়ে গেছে, এখন শুধু ফ্রেমে সবুজ রঙের কাগজ বসানো। ইমন আগ্রহ নিয়ে বাবার কাজ দেখছে। সে হাঁটু গেড়ে বাবার সামনে বসে আছে। তার হাতে আইকা গার্মের কৌটা। তার কাজ হচ্ছে কাগজে আইকা গাম লাগিয়ে দেয়া।
ইমন!
হুঁ।
আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে।
কী আইডিয়া?
সবুজ রঙের উপর লাল রঙের একটা ফিগার আঁকব। সবুজের মধ্যে লাল খুব ভালো ফোটে। আমি কী করব শোন, যেখানে গাঢ় সবুজ রঙের কাগজ, সেখানে ফিগারটা আঁকব হালকা লাল রঙে। আবার যেখানে হালকা সবুজ রঙ ব্যবহার করেছি, সেখানে ফিগার আঁকা হবে গাঢ় লাল রঙে। এতে কী হবে জানো?
কী হবে?
লাল রঙের ইনটেনসিটি সমান মনে হবে। ফিগারটা থ্রি ডাইমেনশনাল হয়ে যাবে। লণ্ঠন জ্বালালে মনে হবে ফিগারটা লণ্ঠন থেকে বাইরে চলে এসেছে।
সত্যি?
আমার এরকম মনে হচ্ছে। শেষ না হলে বুঝতে পারব না।
কখন শেষ হবে?
বুঝতে পারছি না। সময় লাগবে।
আমি কিন্তু জেগে থাকব।
আচ্ছা। ইমন, তুমি কি চা বানাতে পার?
না।
এসো তোমাকে চা বানানো শিখিয়ে দেই। এখন তোমার কাজ হবে মাঝেমাঝে চা বানিয়ে আমাকে খাওয়ানো। পারবে না?
পারব। আমি মিল্ক শেক বানাতে পারি।
মিল্ক শেকের মতো জটিল বস্তু যে বানাতে পারে, চা বানানো তার কাছে কিছুই না। চা বানানো তার কাছে লেনটিল-রাইস।
লেনটিল-রাইস মানে কী?
লেনটিল-রাইস মানে হলো ডাল-ভাত। এটা একটা বাংলা বাগধারা। যার অর্থ খুবই সহজ কাজ। খুবই সহজ কাজের ইংরেজি বাগধারা কী?
ইমন বলল, A piece of cake.
জীবনের প্রথম চা ইমন বানাল রাত নটায়। তার কাছে মনে হলো, প্রথম কাপ চা বানিয়ে সে হঠাৎ অনেকখানি বড় হয়ে গেছে। শওকত চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, প্রথম প্রচেষ্টা হিসেবে চলে। তবে তেমন ভালো হয় নি। দুধ বেশি হয়েছে। চিনিও বেশি হয়েছে। আমার ধারণা পরের বার থেকে ঠিক হয়ে যাবে।
ইমন লক্ষ করল, তার বাবার সঙ্গে তার মায়ের একটা বড় ধরনের অমিল আছে। ইমনের বানানো প্রথম চা যত খারাপই হোক, মা চুমুক দিয়েই বলত— অসাধারণ হয়েছে। আমি আমার জীবনে এত ভালো চা খাই নি। বাবা সে-রকম বলে নি। তার অর্থ হলো—বাবা যখন বলবে চা ভালো হয়েছে, তখন ধরে নিতে হবে চা ভালো হয়েছে।
ইমন আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে কখন বাবা আবার চা খেতে চাইবে। সে বানাবে। এবারের চায়ে দুধ এবং চিনি কম দিতে হবে। চাইনিজ লণ্ঠনের নির্মাণ থেকে ইমনের আগ্রহ এখন অনেক কমে গেছে। এখন তার আগ্রহ চা বানানোতে।