Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » যদিও সন্ধ্যা (২০০০) || Humayun Ahmed » Page 11

যদিও সন্ধ্যা (২০০০) || Humayun Ahmed

ইমন খুব আগ্রহ করে কী যেন আঁকছে

ইমন খুব আগ্রহ করে কী যেন আঁকছে। এলিয়েনের ছবি হবার সম্ভাবনা। শিশুরা একটা বয়সে এলিয়েনের ছবি আঁকতে পছন্দ করে। আমেরিকান শিশু মনস্তত্ত্ববিদরা বিষয়টা নিয়ে নানান গবেষণা করেছেন। গবেষণার ফলাফল পত্রপত্রিকায় প্রকাশিতও হচ্ছে। মোটামুটি একটা সিদ্ধান্তে আসা হয়েছে যে, এলিয়েনদের ছবি আঁকা শিশুর মনোজগতের এলিয়েনেশনের সঙ্গে সম্পর্কিত না।

রেবেকা এসে ছেলের পাশে বসলেন। ইমন মার দিকে তাকিয়ে হাসল। আবার ছবি আঁকায় ফিরে গেল। ছবি আঁকায় ছেলের ভালো ঝোঁক আছে। জেনেটিক কোনো কারণ কি আছে? বাবার ছবি আঁকা চলে এসেছে ছেলের মধ্যে?

হ্যালো ইমন।

হ্যালো।

বাবার কাছে এই কদিনে কী করলে কিছু তো বললে না?

কিছু করি নি।

কিছুই করো নি?

গল্প করার মতো কিছু করি নি।

ঘরে বসে সময় কাটিয়েছ?

হুঁ।

বাবার ছবি আঁকা দেখেছ?

না।

দেখ নি কেন?

বাবা ছবি আঁকা ভুলে গেছে।

তোমার বাবা তোমাকে এ কথা বলেছে?

হ্যাঁ।

তুমি জিজ্ঞেস করো নি কেন? একটা মানুষ এত সুন্দর ছবি আঁকত, সে ছবি আঁকা কীভাবে ভুলে গেল?

ইমন জবাব দিল না। তার চোখ-মুখ খানিকটা শক্ত হয়েছে। লক্ষণ ভালো। সে মনে হয় আর কোনো প্রশ্নের জবাব দেবে না। তাকে সহজ করার বুদ্ধি হচ্ছে, আর কোনো প্রশ্ন না করে নিজের মনে বকবক করে যাওয়া। রেবেকা এখন যদি অনেকক্ষণ এক নাগাড়ে কথা বলে, তাহলে ইমনের মুখের চামড়ার শক্ত ভঁজ কোমল হতে শুরু করবে।

রেবেকা গল্প শুরু করলেন, তোমার বাবার স্পেশালিটি কী ছিল জানো? পেন্সিল পোট্রট। সে কী করত শোন— হাতে একটা পেন্সিল নিত, যার পোট্রেট আঁকতে হবে তার দিকে পাঁচ-ছয় মিনিট তাকিয়ে থাকত। তারপর অতি দ্রুত তার ছবিটি আঁকত। যখন আঁকত তখন সে আর অন্য কোনো দিকে তাকাত না। তার পোট্রেট আঁকার দৃশ্য দেখতে পারলে তুমি খুব মজা পেতে। দেখলে মনে হবে কাগজে ঝড় উঠছে। কিছুক্ষণ পরপর পটপট শব্দ।

ইমন আগ্রহ নিয়ে বলল, পটপট শব্দ কেন মা?

পেন্সিলের শিস ভাঙার শব্দ। সে এত জোরে পেন্সিল টানত যে পেন্সিলের শিস ভেঙে যেত। এই জন্যে পোট্রেট করার সময় সে হাতের কাছে এক গাদা পেন্সিল রাখত।

বাবা কি তোমার কোনো পোট্রেট করেছে?

একটা করেছে।

সেটা কোথায়?

আমার কাছে আছে। এখানে না, নিউজার্সির অ্যাপার্টমেন্টে। যেদিন তুমি বিয়ে করবে সেদিন তোমাকে এই ছবিটা সুন্দর একটা ফ্রেমে বাঁধিয়ে গিফট করব। ইমন, তুমি বিয়ে করবে না?

করব।

কী রকম মেয়ে করবে বলো তো দেখি।

বাবাকে একবার বলেছি। আবার বলতে ইচ্ছা করছে না।

রেবেকা বিস্মিত হয়ে বললেন, তাহলে তো তুমি বাবাকে অনেক গোপন কথা বলেছ। আমি যতদূর জানি মিস্টার অ্যান্ডারসনকেও তুমি অনেক গোপন কথা বলো। তাই না?

হ্যাঁ।

মিস্টার অ্যান্ডারসন এবং তোমার বাবা— এই দুজনের মধ্যে কাকে তোমার বেশি পছন্দ হয়েছে?

ইমন ছবি আঁকা বন্ধ করে মার দিকে তাকাল। শান্ত কিন্তু দৃঢ় গলায় বলল, তুমি আগে বলো তারপর আমি বলব।

রেবেকা ইমনের মতোই শান্ত গলায় বলল, তোমার বাবা ভালো।

ইমন সঙ্গে সঙ্গে বলল, তাহলে তুমি বাবাকে বাদ দিলে কেন?

রেবেকা জবাব না দিয়ে ছেলের দিকে তাকালেন। ইমন মার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে জবাব শুনতে চায়। শিশুরা মাঝে-মাঝে শক্ত অবস্থান নিতে পারে।

রেবেকা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বললেন, কিছু ব্যাপার আছে। বড়দের। ছোটরা সেই ব্যাপারগুলি বুঝতে পারে না। তুমি যখন বড় হবে তখন বুঝবে। তোমার বাবা অবশ্যই ভালো মানুষ কিন্তু তার সঙ্গে আমার মনের মিল হয় নি। মনের মিল না হলে দুজন মানুষ এক সঙ্গে থাকতে পারে না। বুঝতে পারছ?

না।

তোমার স্কুলে একজন স্টুডেন্ট আছে না, বব নাম? ববের সঙ্গে তোমার কি ভাব আছে?

সে খুবই দুষ্ট।

তুমি একবার তার কাঁধে কামড় দিয়ে রক্তারক্তি করেছ। তুমি যেমন বলছ বব দুষ্ট, ঠিক একইভাবে বব তার মাকে বলেছে তুমি দুষ্ট। এখন বলো তোমরা দুজন কি একসঙ্গে থাকতে পারবে?

না।

আমার এবং তোমার বাবার ব্যাপারটাও সে-রকম।

মিস্টার অ্যান্ডারসনের সঙ্গে কি তোমার মনের মিল হয়েছে?

হ্যাঁ হয়েছে। তাকে তো তুমিও খুব পছন্দ কর। করো না?

হ্যাঁ।

যাকে তুমি পছন্দ করতে পার, তাকে তো আমিও পছন্দ করতে পারি। পারি না?

হ্যাঁ পার।

তাহলে তুমি কাঁদছ কেন?

ইমন চোখ মুছতে মুছতে বলল, I am sorry.

শুধু শুধু কাদবে না। ইমন কান্না বন্ধ কর।

ইমন প্রাণপণ চেষ্টা করল কান্না বন্ধ করতে। রেবেকা বলল, তুমি যদি আরো কিছু বলতে চাও বলতে পার। কিছু বলতে চাও?

চাই।

বলো। আমি খুব মন দিয়ে তোমার কথা শুনব। তোমার প্রশ্নের জবাব দেব।

ইমন কান্না থামানোর চেষ্টা করতে করতে বলল, মা আমরা চারজন কি একসঙ্গে থাকতে পারি?

রেবেকা অবাক হয়ে বললেন, চারজন মানে? কোন চারজন?

ইমন বলল, তুমি, বাবা, মিস্টার অ্যান্ডারসন এবং আমি।

না, ইমন এটা সম্ভব না। তবে তুমি যদি তোমার বাবার সঙ্গে থাকতে চাও, আমি সেই ব্যবস্থা করতে রাজি আছি। আমি তোমাকে তোমার বাবার কাছে রেখে চলে যাব। থাকতে চাও তোমার বাবার সঙ্গে?

ইমন না-সূচক মাথা নাড়ল। সে তার বাবার সঙ্গে থাকতে চায় না। রেবেকা বললেন, ইমন বাথরুমে যাও। চোখে-মুখে পানি দিয়ে আস। ইমন বাধ্য ছেলের মতো বাথরুমে ঢুকল।

বাথরুমের দরজা বন্ধ। কল ছাড়া হয়েছে। রেবেকা শুনতে পাচ্ছেন পানির শব্দের সঙ্গে ছেলের কান্নার শব্দ মিশে যাচ্ছে। তিনি বিড়বিড় করে বললেন— আহারে আমার বাবু। আহারে!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *