Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ম্যাজিক ইঁদুরের গল্প || Subhra Saha Shelley

ম্যাজিক ইঁদুরের গল্প || Subhra Saha Shelley

ম্যাজিক ইঁদুরের গল্প

একগ্রামে এক মুচি বাস করত। নাম তার হরি। তার দোকানে খদ্দের গমগম করত। দুজন কর্মচারী রেখে ব্যবসা সামলাতে হত তাকে। নতুন, নতুন জুতোর অর্ডার সামলাতে হিমশিম খেতে হত।

নিজে হাতে সুন্দর সুন্দর জুতো তৈরী করত হরি মুচি। মা লক্ষ্মীর দয়ায় রোজগারপাতিও যথেষ্ট ভালো। মুচিনি আর দুইছেলে নিয়ে তার সুখের সংসার। সবকিছুই ভালোই চলছিল কিন্তু প্রায় দশ পনেরো বছর থেকে ব্যবসা খুব খারাপ হতে হতে এখন তলানিতে এসে দাঁড়িয়েছে।

হরি মুচির হাতে বানানো জুতো খদ্দেরদের আর পছন্দ হয় না। তারা বলে এখন বাজারে কম পয়সায় হরেক রকমের বাহারী জুতো পাওয়া যায়। সেগুলো ছেড়ে বেশী পয়সা দিয়ে একই রকমের জুতো তারা পড়তে চায় না। তাই ধীরে ধীরে জুতো বানানোর কাজ প্রায় উঠেই গেছে। ব্যাগ মেরামতি, ব্যাগ বানানো আর একমাত্র যাদের পায়ের মাপের জুতো বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না তারাই একমাত্র হরি মুচির ভরসা।

কর্মচারীরাও ব্যবসার হাল দেখে পালিয়েছে। রমরমা ব্যবসা যখন ছিল তখন দুই ছেলেকে পড়াশুনাও শিখিয়েছে হরি। তারা পড়াশুনো শিখে নিজেরা নিজেদের মত কাজ জুটিয়ে নিয়ে নিজেদের মত থাকে। বাবার মায়ের সাথে কোন সম্পর্ক নেই।

এই ব্যবসা টিমটিম করে চলে যেটুকু উপার্জন হয় তা দিয়ে হরি মুচি আর মুচিনির দিন গুজরান হয়। বাপ ঠাকুর দাদার পুরোনো কাজ ছেড়ে অন্য কোন কাজ করতে মন চায় না হরি মুচির। সারাদিন দোকানে টুকটুক করে কাজ করে গান গেয়ে দিন কাটে।

একদিন দুপুরে একটা জুতো সেলাই করতে করতে মনে সুখে গান ধরেছে এমন সময় হঠাৎ করে মনে হয় কেউ একজন পেছন থেকে তার ধুতির কোছা ধরে টানাটানি করছে ।

পেছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পায় একটা ইঁদুর দাঁত দিয়ে ওর ধুতির খুট টানছে আর মানুষের মত বলছে “বড় তেষ্টা পেয়েছে। একটু জল দেবে গো ” ইঁদুরকে মানুষের মতো কথা বলতে দেখে একটু অবাক হয়ে সকালে জলমুড়ি খেয়ে রাখা বাটিটাতে জল দিতেই ইঁদুরটা ছুটে গিয়ে চোঁ চোঁ করে বাটি থেকে জলটা খেয়েই “উফফ, বাঁচালে গো। যা গরম পড়েছে। বাইরে তো একদম তেতে পুড়ে মরেই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ তোমায় দেখে এখানে এলাম। আমার বন্ধুরা অবশ্য আমাকে নিষেধ করছিল এখানে আসতে। ওরা বলছিল মানুষগুলো খুব দুষ্টু –ওরা তোকে দেখলেই মেরে ফেলবে। না হলে আদর করে বিষ মেশানো খাবার খেতে দিয়ে মেরে ফেলবে । আমি ভেবে দেখলাম গরমে তো বাইরে এমনিতেই মরে যাব যদি একটু জল পাই তবে বেঁচে যাব আর না হলে মরে যাব ” সব শুনে হরিমুচি বলে “আহা ! বালাই ষাঠ ।তুমি হলে গিয়ে গনপতিজীর বাহন। তুমি আমার কোন ক্ষতি না করলে — তোমাকে খামোখা মারতে যাব বলতো ?”

“সত্যি বলছ? তুমি খুব ভালো গো “
“শোন, এই আমার দোকান –রাতে আমি বাড়ি চলে যাই। তুমি এখন থেকে এখানেই থেকো। “
“কিন্তু আমি একা থাকলে কি করে হবে বলো। আমার বুড়ো মা, বাবা,ভাইবোন সকলে যে বাইরে —
“তুমি যাও বাইরে গিয়ে তোমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসো —তারাও আজ থেকে তোমার সাথে এখানেই থাকবে। “
ইঁদুর মনের আনন্দে তার পরিবারের সকলকে নিয়ে দলে দলে এসে হাজির হয় নতুন আস্তানায়।
হরিমুচি সকলকে মুড়ি আর জল দিয়ে আতিথেয়তা সারে।
ইঁদুরের পালের সাথে এমনি করে হরিমুচির বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।

ছোট বড় ইঁদুররা এসে হরি মুচির কাজে হাত লাগায়। একটা দুটো জুতোর অর্ডার এলে ইঁদুররা তাতে কতরকমের শুকনো ফুল বাইরে থেকে এনে তাতে লাগিয়ে বাহারি বানিয়ে দেয়। আর তাতে হরিমুচির জুতোর সুখ্যাতি আবার হতে থাকে।

কিন্তু হঠাৎ হরিমুচির এই সুখ্যাতি জুতো ব্যবসায়ী চরণ দাস মেনে নিতে পারে না। কি করে হরিকে বিপদে ফেলা যায় তার ফন্দী আটতে থাকে। একদিন হরিকে যাত্রার পালায় গান গাওবার নাম করে চরণ দাস আসরে নেমতন্ন করে। সাদাসিধে হরি এতদিন পর গান গাওয়ার সুযোগ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা।

সন্ধ্যাবেলায় সেজেগুজে আসরে যায়। আর সাথে যায় তার বন্ধুরাও আর মুচিনিও। সেখানে যেতেই আয়োজকেরা হরিকে একগ্লাস সরবত খেতে দেয়।সরল মনে হরি সেই সরবত পান করে। সেই সরবতে চরণ দাসের আদেশ মত মেশান হয় ওষুধ।

সরবত খেয়ে পালাগানে বিভোর হয়ে গান গাইতে থাকে হরি। পালার নাম “পিতৃমাতৃ ভক্ত গনেশ “। চোখ বন্ধ করে গাইতে গাইতে হরি দেখতে পায় তার চারিদিকে দারুন আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে আর সেই আলোর থেকে বেড়িয়ে এলেন নধর কান্তি গজানন এসে আশীর্বাদ করে হরিকে বলছেন “বৎস্য আমি তোর ওপরে বড়ই সন্তুষ্ট। আমার বাছাদের তুই আশ্রয় দিয়েছিস।ওরা তোর ভরসায় নিশ্চিন্তে আছে। বল তোর কি বর চাই “—
“আজ্ঞে প্রভু, আমার তো সবই আছে –আমার জীবন যেন এভাবেই হেসে খেলে গান গেয়ে কাটে — সে আশীর্বাদই করো।”

“সে নাহয় হলো।শোন তোকে বরং একটা বড় নতুন ঝা চকচকে জুতোর দোকান বানিয়ে দেই, যেখানে গমগম করবে খদ্দের। “

“কিন্তু প্রভূ এমনটা আমি চাই না। “

“সে কি রে মর্ত্যের তো সবাই প্রনাম জানায়েই তাদের লিষ্ট ধরিয়ে দেয় —এটা চাই, সেটা চাই বলে। আর আমি নিজেই তোকে দোকান বানিয়ে দিতে চাইলাম আর তুই সেটা —-“

“আমাকে মাফ করো প্রভু। আমার নতুন দোকান হলে তো আমার বন্ধুদের উচ্ছেদ করতে হবে। আমি সেটা কিছুতেই চাই না। “

“আমি বড়ই প্রীত হলাম তোর নির্লিপ্ত মানসিকতায়
—কখনো কোন বিপদে পড়লে আমাকে স্মরণ করিস বাছা, আমি তোর সাথে থাকবো “এই বলে সেই দিব্যজ্যোতি আলো এবং গজানন মিলিয়ে গেল।

পালা আসরে গান করতে করতে অচৈতন্য হয়ে যাওয়াতে দর্শকেরা ক্ষিপ্ত হয়ে চারদিক থেকে ইঁট ,পাটকেল , জুতো, চপ্পল ছুড়তে থাকে হরির উদ্দেশ্যে। এই দৃশ্যতে চরণ দাস খুব খুশি। হরির অপমানে তার কুটিল মন আনন্দে নেচে উঠল।

কিন্তু হঠাৎ করে হরির জ্ঞান ফিরে আবার ফিরে আসে আর সে আসর জমিয়ে বসে। চারিদিকে করতালিতে আপামর জনতা ফেটে পড়ে। যারা হরিকে জুতো ছুড়েছিল তারাই হাততালি দিতে দিতে অনুষ্ঠানের শেষে মঞ্চে ছোড়া জুতো নিতে মঞ্চে হুরমুরিয়ে উপস্থিত হয়।

সবার আগে চরণ দাস মঞ্চ থেকে তার নিজের জুতো মিলিয়ে পায়ে দিতেই অবাক কান্ড পাঁই পাঁই করে আকাশে উড়তে লাগল।

প্রথমে খুব খুশি হয়ে আকাশের ঠান্ডা হাওয়া খেয়ে তার মেজাজ বেশ ফুরফুরে হল।কিন্তু হঠাৎ কানে এলো “চরণ দাস এখন থেকে হাওয়াতেই তোর বাস। ভাসতে থাকবি তুই এখানেই “।চরণ দাসের ওমন অবস্থা দেখে কেউ আর নিজেদের জুতোতে পা গলাতে ,হাত দিতে সাহস পায় না। তারা সবাই অগত্যা জুতোর মায়া ত্যাগ করে খালি পায়েই বাড়ির পথে পা বাড়ালো। কিন্তু একি আজব কান্ড জুতোগুলোও একা একাই ওদের পেছন পেছন যেতে শুরু করলো। এই দৃশ্য দেখে একজন তার জুতোজোড়া নিয়ে যেই না ছুড়ে মেরেছে সাথে সাথে সেইজুতো থেকে পালে পালে ইঁদুর বেড়িয়ে। এসে সেই গ্রামবাসীকে বন্দী করে ফেলে। সে কিছুতেই ইঁদুরের পালের সাথে পেরে ওঠে না। ভয়ে “বাঁচাও বাঁচাও” চিৎকার জুড়লে বড়সড় একটা ইঁদুর তার সামনে এসে বলে “জুতো কেন আবিস্কার হয়েছে বলো তো “–
কথাবলা ম্যাজিক ইঁদুর দেখে হাতজোড় করে “আজ্ঞে ধূলো, নোংরা থেকে পা’কে বাঁচাতে বা পায়ের কোন আঘাত থেকে পা’কে বাঁচতে “—
“একদম ঠিক কথা। তবে তোমরা জুতোর অপব্যবহার কর কেনো —কেনো জুতো ছুঁড়ে লোককে অপমান করো আঘাত করো। যে জুতো নিজে গায়ে সমস্ত নোংরা, ধূলো মেখে তোমাদের আঘাতের হাত থেকে বাঁচায় আর তোমরা কিনা তাকে ছুঁড়ে অন্যকে আঘাত করো।ছিঃ এই তোমরা মানুষ –এই তোমরা নাকি জগতের শ্রেষ্ঠ জীব ” ম্যাজিক ইঁদুরের কথায় লজ্জিত হয়ে গ্রামবাসী ক্ষমা চাইতে থাকে। আর এমন কাজ কক্ষনো করবে না বলে।

ম্যাজিক ইঁদুর বলে “যাও তোমার সঙ্গী সাথীকে গিয়ে হরিমুচির কাছে মাফ চাইতে বলো ” গ্রামের লোকেরা হরিমুচির কাছে মাফ চায়।মাফ চাইতেই সকলের পুরোনো জুতোগুলো একদম নতুন হয়ে গেল। সবাই খুশি মনে বাড়ি ফিরে গেলো।
ওদিকে পাঁইপাঁই করে উড়তে উড়তে চরণ দাস নাজেহাল হয়ে হাতজোড় করে “হরি ভাই খুব অন্যায় হয়ে গেছে, এবারের মতো মাফ করে দাও — কখনো এমন ভুল করবো না কথা দিচ্ছি “।

নীচ থেকে ম্যাজিক ইঁদুর একটা তার ছুঁড়ে সেটা দিয়ে পেঁচিয়ে চরণ দাসকে আকাশ থেকে নামিয়ে আনে। চরণ দাস নিজের ভুল বুঝে নাক কান মলে প্রতিজ্ঞা করে কখনো অন্যায় ভাবে কারো কোন অনিষ্ট করবে না।

সেই থেকে সেই গ্রামের লোকেরা সুখে, শান্তিতে আনন্দে বসবাস করতে শুরু করে। হরিমুচিকে ম্যাজিক ইঁদুর কথা দেয় গরমকালে তার দলবল নিয়ে হরিমুচির কাছেই থাকবে। এইবলে ম্যাজিক ইঁদুর তার দলবল নিয়ে অন্য গ্রামের পথে যাত্রা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress