Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মোনালিসার নতুন বন্ধু || Anish Deb

মোনালিসার নতুন বন্ধু || Anish Deb

আজ একজন নতুন বন্ধু মোনালিসার বাড়িতে এসেছে। এই নতুন বন্ধুটা খুব ভালো। কখনও ঝগড়া করে না, আড়ি করে না। এরকম একটা ভালোমানুষ নতুন বন্ধুই তো চেয়েছিল মোনালিসা। এরকম বন্ধু আর কারও নেই। শানু, তোতা, রুবি, বাবাই কারও নেই।

ছাদের কোণে বসে মোনালিসা ওর নতুন বন্ধুর সঙ্গে রান্নাবাটি খেলছিল আর নানান গল্প করছিল। তখন বিকেল শেষ হয়ে আসছে। ছাদের পাশেই উঁকি মারছে তিনটে তালগাছ। মোনালিসার রান্নাবাটি খেলা দেখছে। গাছের পাতার জাফরির ফাঁক দিয়ে সূর্যের লাল আলো দেখা যাচ্ছে। বিকেল শেষ হয়ে আসছে। তাই সূয্যিমামাও খেলাধুলোর পাট সেরে ঘরে ফিরে যাচ্ছে। তারপরই বইখাতা নিয়ে পড়তে বসবে হয়তো।

মোনালিসার নতুন বন্ধুর নাম রবি। কী ফুটফুটে দেখতে! কী ভালো-ভালো কথা বলে। আবার কান পেতে মনোযোগ দিয়ে মোনালিসার সব কথা শোনে। রবি খুব ভালো। কখনও ঝগড়া করে না। তাই ওকে নিয়েই পড়াশোনা করতে বসে মোনালিসা। মাকে বলেছে, রবির সঙ্গেই আমাকে খেতে দেবে। আর ও আমার কাছেই ঘুমোবে।

সত্যি, রবি আসার পর মা আর বাবা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। নইলে রোজই তো শুনতে হয় মেয়ের নালিশ ও বাপি, তোতা ওর বলটা আমাকে খেলতে দিচ্ছে না। ওকে বকে দাও না। অথবা কখনও এসে বলে, মা, মা, জানো বাবাইটা কী খারাপ ছেলে! আমি একটা কী চমৎকার রাখি ওকে দিয়েছি, আর বলে কিনা পচা রাখি! আমি ওর সঙ্গে আড়ি করে দিয়েছি।

মা আর কী বলবেন! বাবা আড়ালে মুখ টিপে হাসেন। সাত বছরের এইটুকু মেয়ের এত ঝগড়া এত নালিশ! মায়ের আর ভালো লাগে না। বাবাকে বলেন, কী করবে করো। দেখবে, তোমার মেয়ে বড় হয়ে ভীষণ ঝগড়ুটে হবে।

বাবা তাতে আরও হাসেন। হাসতে হাসতে চোখের চশমা খুলে যেতে চায়।

মা যখন পুঁচকে মেয়েটাকে বকুনি দিয়ে বলেন, কী রে, তুই সবার সঙ্গে রোজ-রোজ ঝগড়া করিস কেন রে!

মোনালিসা হাত-পা নেড়ে চোখ পাকিয়ে বলে, বা রে, আমি ঝগড়া করি নাকি! শানু, তোতা, ওরাই তো ঝগড়া করে। বারবার আড়ি করে, ঝগড়া করে।

মা গালফোলা মেয়েটাকে দেখেন। চোখ নামিয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে। তখন অভিমানী মেয়েকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করেন মা। চুমু দেন মাথায়। বলেন, তুই রোজ বিকেলে খেলতেও বেরোবি, আবার এসে নালিশও করবি। কী যে করি!

তখন মোনালিসা বলেছে, আমি আর খেলতে বেরোব না, বাড়িতে বসে একা-একা খেলব।

সত্যি তাই করল মেয়েটা। পরপর দুটো দিন একদম বেরোল না বাড়ি ছেড়ে। তাই দেখে মায়ের মুখ শুকিয়ে গেল। বাবাকে বললেন, কিছু একটা করো। মেয়েটা যে ঘরকুনো হয়ে গেল। বাড়িতে বসে একা-একা কখনও খেলতে পারে!

এই ব্যাপার? বাবা আবার হেসেছেন। তারপর বলেছেন, তা হলে দ্যাখো এবার কী করি!

ব্যস। পরদিন বাবা কোথা থেকে যেন কিনে এনেছেন রবিকে। বাচ্চাদের খেলার সাথি বাচ্চা রোবট। যন্ত্রের খেলনা, কিন্তু দেখতে অবিকল মানুষের মতন। মাথায় চকচকে কালো চুল। টকটক করে কথা বলে। বড়-বড় চোখে এদিকে-ওদিকে তাকায়। কী সুন্দর করে হাসে! নাম রবি।

এইভাবেই ওদের বাড়িতে এসেছে রবি। তারপর এক মিনিটের মধ্যে হয়ে গেছে মোনালিসার নতুন বন্ধু।

নতুন বন্ধুর সঙ্গে মোনালিসার কোনও ঝগড়া নেই, কোনও আড়ি নেই। কারণ রবি কখনও মোনালিসার সঙ্গে তর্ক করে না, ওর কাছ থেকে কোনও খেলনা কেড়ে নেয় না, ওর নামে নালিশও করে না। ওরা দুজনে ঘরে, কিংবা বারান্দায়, অথবা ছাদে খেলা করে। ছুটোছুটি করে, লুকোচুরি খেলে, এক্কা-দোক্কা বা ইকড়িমিকড়ি খেলে।

ওদের মিল দেখে বাবা-মা খুব খুশি। বাবা মাকে বলেন, দেখলে তো, কেমন ম্যাজিক দেখিয়ে দিলাম!

মা হেসে উত্তর দেন, সত্যি, এরকম মিল! না দেখলে বিশ্বাসই হত না কখনও।

এইভাবেই দিন যাচ্ছিল বেশ। হঠাৎ একদিন বাবা দেখলেন, মোনালিসা মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়। আর রবি একটু দূরে বসে লুডোর ছক পেতে বন্ধুকে ডাকছে, কী হল মোনালিসা, খেলবে এসো।

বাবা চলে এলেন মেয়ের কাছে। জিগ্যেস করলেন, কী রে, কী হয়েছে?

মোনালিসা বাবার দিকে না তাকিয়েই বলল, রবির সঙ্গে আমার খেলতে ইচ্ছে করছে না, বাপি।

কেন রে? রবি ঝগড়া করেছে?

না। ও কখখনও ঝগড়া করে না। মোনালিসা গম্ভীরভাবে বলল।

ও, তা হলে বুঝি আড়ি করে দিয়েছে তোর সঙ্গে?

না, ও কখখনও আড়ি করে না।

বাবা এবারে হেসে ফেললেন, বললেন, তা হলে ভালোই তো । মন খারাপের কী হল?

মোনালিসা বাবার দিকে তাকাল। বলল, আমি শানু, বাবাই, তোতা ওদের সঙ্গে খেলব, বাপি। রবির সঙ্গে খেলতে আমার বিচ্ছিরি লাগে।

এমন সময় মা এসে পড়েছিলেন বারান্দায়। শুনতে পেয়েছেন মেয়ের শেষ কথাটা। আর ভীষণ অবাক হয়ে গেছেন। রবির সঙ্গে খেলতে ভালো লাগছে না!

মা আর বাবা অবাক হয়ে মেয়েকে দেখছিলেন। গায়ে ফুটফুটে লাল ফ্রক, মাথার চুলে জোড়া বিনুনি, তাতে লাল ফিতের ফুল। শুধু ফরসা মুখটা হাসিখুশি হলেই বেশ মানাত।

সন্ধে এখনও নামেনি। নীচের গলিতে বাচ্চা-বাচ্চা ছেলেমেয়েরা ছুটোছুটি করে কুমিরডাঙা খেলছে। পশ্চিমের আকাশ লালে লাল। আর তার সঙ্গে আরও নানান রং। কয়েকটা পাখি উড়ে যাচ্ছে। সবই ভালো, শুধু মোনালিসার মুখে হাসি নেই।

মা এবার বললেন, রবি তো কখনও তোর সঙ্গে ঝগড়া করে না, আড়ি করে না! তা হলে ওর সঙ্গে খেলতে তোর বিচ্ছিরি লাগছে কেন!

মোনালিসা আর থাকতে পারল না। একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়ল মায়ের কোলে। মাকে জড়িয়ে ধরে মায়ের শাড়িতে মুখ গুঁজে দিল। চাপা গলায় বলল, রবি ঝগড়া করে না, আড়ি করে না। তাই কখনও ভাবও করে না আমার সঙ্গে। তুমিই বলো মা, আড়ি না হলে ভাব হবে কেমন করে? আর ঝগড়া না হলে আড়ি হবে কেমন করে? আমি শানু, বাবাইদের সঙ্গে খেলব কাল থেকে।

মা হাত বুলিয়ে দিলেন মেয়ের মাথায়। তারপর তাকালেন বাবার দিকে। বাবা হেসে বললেন, ও ঠিকই বলেছে, বুঝলে। আড়ি না হলে কি কেউ বুঝতে পারে ভাব করতে কী দারুণ ভালো লাগে!

মা বললেন, তুমি রবিকে কালই দোকানে ফেরত দিয়ে এসো। ভাব করতে জানে না এমন বন্ধু আমাদের দরকার নেই।

সত্যিই তো, যে বন্ধু ভাব করতে জানে না সে আবার বন্ধু কীসের!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress