আমি বা আমার চেতনা বা অন্য কিছু
আমি বা আমার চেতনা বা অন্য কিছু এখন দিলু রোডের বাড়িতে, আমার নিজের বাড়ি। এখানে কীভাবে উপস্থিত হয়েছি তা জানি না। আমার অবস্থা স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়ার মতো। স্রোত যেদিকে নিয়ে যাবে আমাকে যেতে হবে। নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় কিছু করার নেই। মনে হচ্ছে আমার চিন্তা নিয়ন্ত্রিত।
নিজের বাড়িতে এসে আমি আনন্দে অভিভূত হয়েছি। মনে হচ্ছে কত দীর্ঘ দিবস কত দীর্ঘ রজনীই না আমাকে বাইরে কাটাতে হয়েছে। এখন ফিরে এসেছি। সব আগের মতোই আছে। পলিন তার ঘরে ইন্টারনেটে কী যেন দেখছে। মনে হয় ফেসবুক আপডেট করছে। রুবিনা শাওয়ার ছেড়ে গোসল করছে। সকাল ১০টা বাজে। এই সময় সে একবার শাওয়ার নেয়। শাওয়ার নিয়ে সকালের নাশতা করে। আরেকবার শাওয়ার নেয় রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে আগে।
রান্নাঘরে নতুন একটা কাজের মেয়েকে দেখতে পাচ্ছি। সে রুবিনার ব্রেকফাস্ট রেডি করছে। এক স্লাইস রুটি, এক গ্লাস মালটার রস, এক কাপ দুধ, একটা সেদ্ধ ডিম। টি-পট ভর্তি হালকা লিকারের চা দেওয়া হবে। রুবিনা নাশতা করার ফাঁকে ফাঁকে চা খাবে। দিনের প্রথম সিগারেটটা অবশ্য শুরুতেই খাবে। মালটার রসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে।
কাদের রান্নাঘরে ঢুকেছে। সে গলা নিচু করে বলল, ড্রয়িংরুমে গেস্ট আছে, এক কাপ কফি দেন। চিনি-দুধ অফ, ব্ল্যাক কফি। চিনি-দুধ ছাড়া এই জিনিস মানুষে ক্যামনে খায় কে জানে!
সালমা বলল, কফি আপনি নিজে বানায়া নিয়া যান। আমার হাত বন্ধ।
কাদের বলল, গেস্ট কে আসছে শুনলে হাতের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। ডিবির ইন্সপেক্টর। ম্যাডামকে অ্যারেস্ট করতে আসছে।
কন কী?
মার্ডার চার্জ। ম্যাডাম আমাদের স্যাররে বিষ খাওয়ায়ে মেরেছে। পত্রিকায় খবর চলে এসেছে।
ও আল্লাহ।
আপনের তো ‘ও আল্লা’ বলার দরকার নাই। ম্যাডাম বলবে ‘ও আল্লা’। যত্ন করে কফি বানায়া দেন, নিয়া যাই।
কফির সঙ্গে আর কিছু দিব? কেক দিব?
শুধু কফি চেয়েছে, শুধু কফি নিয়া যাব। বাড়তি যত্ন করলে সন্দেহ করবে। পুলিশের লোক। আমি নিজেও বিপদের মধ্যে আছি। দুনিয়ার প্রশ্ন করতেছে। আপনি বেঁচে গেছেন। আপনি জয়েন করেছেন স্যারের মৃত্যুর পর। তার পরেও টুকটাক প্রশ্ন আপনারেও করবে। ডিবি পুলিশ নিজের বাপরেও ছাড়ে না। এমন খতরনাক জিনিস।
কাদের কফি নিয়ে অতি বিনীত ভঙ্গিতে ডিবি ইন্সপেক্টর খলিলের সামনে রাখল। খলিল বলল, থ্যাংক য়্যু।
কাদের বিয়ে ভেঙে পড়ে বলল, স্যার, নো মেনশন।
খলিল বলল, বসার ঘরে বেশ কয়েকটা অ্যাসট্রে দেখছি। এখানে কি সিগারেট খাওয়া যায়?
জি, খাওয়া যায়। সিগারেট কি আপনার সঙ্গে আছে না এনে দিব?
সিগারেট সঙ্গে আছে।
স্যার, লাইটার কি আছে?
আছে, থ্যাংক য়্যু।
নো মেনশন, স্যার। ম্যাডাম এখন শাওয়ার নিতেছেন। শাওয়ার নিয়ে ব্রেকফাস্ট করবেন, তারপর আপনার কাছে আসবেন।
কোনো অসুবিধা নেই, আমি অপেক্ষা করব। ম্যাডামের মেয়েটি কি বাসায় আছে?
জি আছে। কী করতেছে জানি না, দেখে আসব?
দেখে আসতে হবে না। আপনি আমার সামনে বসুন। আপনার স্যারকে যে রাতে হাসপাতালে নিয়ে যান, সে রাতের ঘটনাটা আপনার মুখ থেকে শুনি। ঘটনা যা ঘটেছে তা-ই বলবেন। নতুন কিছু যুক্ত করবেন না, আবার কিছু বাদও দেবেন না। বলুন কী ঘটেছিল।
কাদের কী ঘটেছিল বেশ গুছিয়ে বলছে। আমি কাদেরের কথা শুনছি। সে কি ভাবছে তাও বুঝতে পারছি। পুলিশ ইন্সপেক্টর খলিল কী ভাবছেন তা বুঝতে পারছি না। মনে হয়, তিনি কিছু ভাবছেন না। কিংবা যা আমাকে নিয়ন্ত্রণ করছে সে খলিলের ভাবনা আমাকে জানাতে চাচ্ছে না।
কাদের বলছে, স্যার, আমি থাকি একতলায়। রাত আনুমানিক দেড় ঘটিকায় ম্যাডাম আমার ঘরে ধাক্কা দিলেন। আমি দরজা খুলতেই ম্যাডাম বললেন, মেইন রোডে গিয়ে দাঁড়াও। তোমার স্যারের শরীর খারাপ। অ্যাম্বুলেন্স আসতে বলেছি। এর মধ্যে চলে আসার কথা। তুমি অ্যাম্বুলেন্সকে বাসা চিনিয়ে নিয়ে আসবে। ম্যাডামের কথা শুনে আমি দৌড়ে রাস্তায় চলে গেলাম।
খলিল বলল, স্যারের কী হয়েছে জানতে চাইলেন না?
তখন জানতে চাই নাই।
অ্যাম্বুলেন্স আসার পর জানতে চেয়েছেন?
জি না। তখন রুগি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি।
অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে হাসপাতালে গিয়েছিলেন?
জি। অবশ্যই।
খলিল সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, ওই রাতে আপনার ম্যাডাম আপনার ঘরে যান নাই। তিনি আপনাকে মোবাইল টেলিফোনে সিগারেট কিংবা গাঁজার পুরিয়া আনতে বলেছেন। আপনি ওই জিনিস নিয়ে ফিরে এসে শোনেন অ্যাম্বুলেন্স এসে আপনার স্যারকে নিয়ে গেছে। আপনি হাসপাতালেও যান নাই।
আমি বুঝতে পারছি কাদের ভয়ে-আতঙ্কে অস্থির হয়ে পড়েছে। পুলিশ ইন্সপেক্টরের প্রতিটি কথাই সত্য। কাদের ভেবে পাচ্ছে না, এই লোক এত কিছু জানল কীভাবে।
খলিল হাই তুলতে তুলতে বলল, সমানে মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন। শরীর থেকে চামড়া খুলে ফেলব। কানে ধরে দশবার উঠবস করুন।
খলিলের কথা শুনে আমি অবাক। মিষ্টি গলায় আপনি আপনি করে কানে ধরে উঠবস করতে বলছে।
কাদের সঙ্গে সঙ্গে আদেশ পালন করল। খলিল বলল, আমি যতক্ষণ এই বাড়িতে থাকব আপনি ততক্ষণ কানে ধরে থাকবেন। আপনার ম্যাডাম যদি কান থেকে হাত নামাতে বলে তার পরেও নামাবেন না।
অবশ্যই। স্যার, বাথরুমে কি যাওয়া যাবে?
যাওয়া যাবে না কেন! কানে ধরে যাবেন।
খলিল আরেকটা সিগারেট ধরাল। সে আনন্দিত এবং উফুল্ল। খলিল চমৎকার প্যাঁচ খেলাচ্ছে। আমি প্রায় নিশ্চিত সে রুবিনাকে প্যাচে ফেলবে। সে প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে।
আপনার নাম যেন কী?
কাদের।
এত লম্বা নামে তো ডাকতে পারব না। এখন থেকে আপনার নাম কাদু।
অসুবিধা নাই স্যার।
এখন যান, আপনার ম্যাডামের ব্রেকফাস্ট টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকুন। ম্যাডাম যখন জিজ্ঞেস করবে কানে ধরা কেন, তখন আমার কথা বলবেন। খবরদার কান থেকে হাত নামাবেন না। কান থেকে হাত নামালে আপনাকে ট্যাবলেটের মতো গিলে ফেলব।
কান থেকে হাত নামাব না স্যার। আপনি যখন বলবেন তখন নামাব, তার আগে না।
খলিল ভুল করেছে। রুবিনা সহজ চিজ না। কাদেরকে কানে ধরিয়ে সে রুবিনাকে ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা করছে। রুবিনা ভয় পাওয়া টাইপ মেয়ে। খলিলের সঙ্গে রুবিনার কথোপকথনের জন্য আমি অপেক্ষা করছি। আনন্দময় অপেক্ষা বলা যেতে পারে। কোনো একটা ভালো সিনেমা দেখার আগের মুহূর্তের আনন্দের মতো আনন্দ।
মৃতদেরও তাহলে আনন্দ-বেদনার ব্যাপার আছে। তবে আনন্দ-বেদনার তীব্রতা কম। কাদের কানে ধরে ঘুরছে—দৃশ্যটি মজার লাগছে। জীবিত মানুষ অন্যের বিব্রত অবস্থায় আনন্দ পায়। এ জগতেও তাই।
রুবিনা সিগারেট হাতে ড্রয়িংরুমে বসতে বসতে বলল, সরি, দেরি করলাম। খলিল উঠে দাঁড়াল, বিনীত গলায় বলল, ম্যাডাম, কোনো সমস্যা নেই। কাদের বলে একজন আমাকে কফি দিয়েছে, কফি খাচ্ছিলাম।
খলিল চাচ্ছিল, কাদেরের প্রসঙ্গ ওঠায় রুবিনা তার কানে ধরে দাঁড়িয়ে থাকা বিষয়ে কিছু বলবে। রুবিনা কিছুই বলল না।
খলিল বলল, আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ড. ইফতেখারুল ইসলাম স্যারের ভিসেরা রিপোর্ট হাতে এসেছে। পাকস্থলীতে টক্সিক বস্তু পাওয়া গেছে। উচ্চমাত্রায় অরগ্যানো ফসফরাস।
রুবিনা সিগারেটে টান দিয়ে বলল, ও আচ্ছা।
খলিল চোখ সরু করে বলল, বিষটা কেউ তাকে খাইয়েছে।
রুবিনা বলল, কিংবা নিজেই খেয়েছে।
খলিল বলল, এই আশঙ্কা অবশ্যই আছে। সে ক্ষেত্রে ভিকটিম ডেথনোট রেখে যাবে। কিংবা মৃত্যুর আগে কাউকে বলে যাবে। আপনাকে কি কিছু বলে গেছেন?
না। তাকে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছি। তিন দিন তিন রাত হাসপাতালে ছিল। মাঝে মধ্যে জ্ঞান ফিরেছে। কথাবার্তা বলেছে, কিন্তু বিষ খাওয়া নিয়ে কিছু বলেনি।
খলিল বলল, আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের খাতাপত্র, ডায়েরি এসব পরীক্ষা করে দেখতে চাই।
রুবিনা শক্ত গলায় বলল, কথায় কথায় আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক এই বুলশিট কপচাবেন না। আপনি কখনো তার ছাত্র ছিলেন না। আপনি যেমন আমার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন, আমিও আপনার বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি। অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্সে আপনি কখনো পড়েননি। আপনি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র। অনার্স পর্যন্ত পড়েছেন। অনার্সে থার্ডক্লাস পাওয়ায় আপনার এমএ পড়া হয়নি। আপনি কবিতা লেখার চেষ্টা করেন। অরুণিমা সেন। ছদ্মনামে কিছু অতি অখাদ্য কবিতা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। যা করবেন নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে করবেন। কোনো মেয়ের নামের আড়ালে করবেন না।
খলিল থতমত ভাব কাটাতে কাটাতে বলল, আমি কি একটা সিগারেট ধরাতে পারি?
রুবিনা বলল, অবশ্যই পারেন। আমি যদি সিগারেট খেতে পারি আপনিও পারেন। ভালো কথা, কাদের কানে ধরে ঘুরছে কেন?
ম্যাডাম, ও আমাকে কিছু মিথ্যা ইনফরমেশন দিয়েছে।
মিথ্যা ইনফরমেশনের শাস্তি যদি কানে ধরা হয়, তাহলে সিগারেট ফেলে আপনারও তো কানে ধরে দাঁড়িয়ে থাকা উচিত। আপনিও আমাকে মিথ্যা ইনফরমেশন দিয়েছেন। বলেছেন, আপনি আমার স্বামীর ডিরেক্ট স্টুডেন্ট। যা আপনি না।
খলিল বলল, ম্যাডাম, কাদের একটি হত্যাকাণ্ডের সাসপেক্ট। আপনিও সাসপেক্ট। আমি তদন্তকারী অফিসার। মামলার তদন্তের সাহায্যের জন্য আমরা সাসপেক্টদের সঙ্গে কিছু মেন্টাল গেম খেলি। তার সঙ্গে আমি এক ধরনের মেন্টাল গেম খেলছি। কাদেরের মোরালিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখন চট করে মিথ্যা বলবে না।
আমি একজন সাসপেক্ট?
জি ম্যাডাম। এ বাড়িতে যারা আছে সবাই সাসপেক্ট। আপনার মেয়ে পলিন, যার বয়স তের বছর, সেও সাসপেক্ট। চালুনি দিয়ে চেলে মূল আসামি বের করা হবে। এই কাজটি আমি ভালো পারি। কবি হিসেবে আমি ব্যর্থ হতে পারি, তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আমার সুনাম আছে।
রুবিনা বলল, আমি যেহেতু সাসপেক্ট, আপনি নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে মেন্টাল গেম খেলবেন বা খেলা শুরু করেছেন।
ম্যাডাম, আপনার সঙ্গে আমি মেন্টাল গেম এখনো শুরু করিনি। তবে অবশ্যই শুরু করব।
কখন শুরু করবেন?
আপনি অনুমতি দিলে এখনই শুরু করতে পারি। ম্যাডাম, আমি আপনার স্বামীর ডেডবডি নিয়ে এসেছি। বারান্দায় দাঁড়ালেই দেখতে পাবেন পুলিশের গাড়ির পেছনে একটা অ্যাম্বুলেন্স আছে। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর কফিনে ডেডবডি আছে। সুরতহাল যেহেতু শেষ হয়েছে, ডেডবডির কাজ শেষ।
খলিল পকেট থেকে হলুদ খাম বের করল। হলুদ খামের ভেতর সরকারি সিলের কাগজ। খলিল সাহেব কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল, ম্যাডাম, এখানেই সই করে ডেডবডি রিসিভ করুন।
রুবিনা সই করল। খলিল বলল, সুরতহালের ডেডবডি এভাবে হ্যান্ডওভার করা হয় না। নানা ঝামেলার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। আমি দৌড়ঝাঁপ করে বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়ে এসেছি। এটাই আমার মেন্টাল গেম। কাদেরকে আমি অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাব ভেবেছিলাম। ওকে আপাতত রেখে যাচ্ছি। বাসায় ডেডবড়ি, আপনাকে অনেক কাজকর্ম করতে হবে। একজন পুরুষের সাহায্য দরকার।
রুবিনার ঠোঁটের কোনায় ক্ষীণ হাসির রেখা দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেল। সে মেন্টাল গেমটা পছন্দ করেছে।
ম্যাডাম, অনুমতি দিলে আমি উঠি। আপনার এখন অনেক ঝামেলা। ডেডবডি দ্রুত কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। অতিরিক্তি গরম—ডেডবডি ডিকম্পোজ করা শুরু হয়েছে।
রুবিনা সিগারেট ধরাল। সে বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে—এ রকম মনে হচ্ছে না। খলিল ডাকল, কাদু কোথায়? কাদু।
রুবিনা বলল, কাদুটা কে?
কাদের অনেক লম্বা নাম তো, এজন্য শর্ট করে কাদু ডাকছি। আপনি যেমন আপনার স্বামীর বন্ধু রবিউলকে রবি ডাকেন অনেকটা সে রকম।
কাদু সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সে এখনো কানে হাত দিয়ে আছে। চোখ লাল। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
খলিল বলল, অনেকক্ষণ তোমার সঙ্গে আপনি আপনি করে কথা বলা হয়েছে। এখন থেকে তুমি, তারপর তুই। ঠিক আছে।
কাদের বলল, জি স্যার, ঠিক আছে।
কাদু, কান থেকে হাত নামাও। তোমার এখন প্রচুর কাজ। তোমার স্যারের ডেডবডি নিয়ে এসেছি। কোথায় রাখবে ঠিক করো। প্রচুর বরফ লাগবে। বরফের ব্যবস্থা করো। গ্রামের বাড়িতে ডেডবডি নিতে চাইলে মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা করো। চা-পাতা-ফাতা কী কী যেন লাগে। কোনো একটা শেষ বিদায় স্টোরে চলে গেলে সবকিছু পাবে।
রুবিনা বলল, উইল ইউ প্লিজ লিভ আস নাও!
খলিল দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, অবশ্যই ম্যাডাম! এক্ষুনি চলে যাচ্ছি। আমার ধারণা, কেউ টেলিফোন করলে আপনি এখন ধরবেন না। দয়া করে আমারটা ধরবেন। আপনার নিজেকে ক্লিয়ার করার একটা পথ আছে। যদি আপনার স্বামীর লেখা কোনো কাগজ পান। যদি লেখা থাকে আমি স্বেচ্ছায় বিষপান করেছি। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। এ রকম কিছু যদি না পান আপনি উদ্ধার পেতে পারেন। এখন একটা সৎ পরামর্শ দেব।
রুবিনা বলল, কী রকম?
এনায়েত নামে একজন লোক আছে, কারওয়ান বাজারে থাকে। মানুষের সই জাল করার ব্যাপারে তার দক্ষতা অসাধারণ। জাল পাসপোর্ট, জাল দলিলে তার ওপর কেউ নেই। তার টেলিফোন নাম্বার কি দেব?
রুবিনা জবাব দিল না। কঠিন চোখে তাকিয়ে রইল। এই প্রথম আমি খলিল কী চিন্তা করছে তা ধরতে পারলাম। এনায়েত নামের লোকটিও তার ফাদের অংশ। এনায়েত ডিবি পুলিশের লোক। রুবিনা তার কাছে জাল কাগজ তৈরি করতে যাবে এটাই ফাঁদ। কফিন রাখা হয়েছে শোবার ঘরের উত্তরের বারান্দায়। বাড়িতে থমথমে আতঙ্ক। কাদের মাথায় টুপি পরে ফেলেছে। টুপি মাথায় কাদেরকে কখনো দেখিনি। তাকে অদ্ভুত দেখাচ্ছে। টুপির কারণেই হয়তো মুখ লম্বাটে হয়েছে। কাদের কাপভর্তি চালে আগরবাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে। আগরবাতিগুলো হয় ভেজা কিংবা কোনো ভেজাল আছে। একটু জ্বলেই নিভে যাচ্ছে। কাদের ব্যস্ত আগরবাতির তদারকিতে।
সালমা মাথায় ঘোমটা দিয়ে রান্নাঘরে সময় কাটাচ্ছে। ধোয়া বাসন আরেকবার ধুয়ে ফেলছে। মুখে বিড়বিড় করছে, আল্লাহ রহম করো। দুপুরে এই বাড়িতে রান্না হবে কি না তা বুঝতে পারছে না। মরা-বাড়িতে চুলা জ্বালানোর নিয়ম নেই, তবে বড়লোকের বাড়ির নিয়মকানুন থাকে। আলাদা। দুপুরে ম্যাডাম যদি বলেন, ‘খানা লাগাও, তখন সে কী করবে? কাদেরের কাছে সে পরামর্শ চেয়েছিল। কাদের মুখ ঝামটা দিয়ে বলেছে, আমারে দিক করবেন না। আমার সব বুদ্ধি শেষ। যা করার নিজের বুদ্ধিমতো করেন।
সালমা বলল, রাইস কুকারে চাল দিয়ে রাখি আর ফ্রিজ থেকে ইলিশ মাছ বার করে রাখি। ম্যাডাম খানা দিতে বললে দশ মিনিটের মধ্যে খানা দিতে পারব। রান্না খাসির মাংস আছে, মাইক্রোওভেনে গরম করে দিব। চলবে না?
কাদের বলল, চলবে কি না জানি না। আমি বাঁচি না নিজের যন্ত্রণায়।
কাদের অবশ্যই নিজের যন্ত্রণায় অস্থির। সে পালিয়ে যাওয়ার ধান্ধায় আছে। বাগেরহাটে থাকে তার স্কুলজীবনের বন্ধু শামসুদ্দিন। শামসুদ্দিনের কাঠ চেরাইয়ের কল আছে। তার কাছে মাসখানিক পালিয়ে থাকা যায়। প্রয়োজনে সেখান থেকে ইন্ডিয়া চলে যাওয়া। ডিবি পুলিশের ভাবভঙ্গি তার কাছে মোটই ভালো লাগছে না। এই হারামজাদা অবশ্যই তাকে রিমান্ডে নিয়ে যাবে।
পালিয়ে যেতে হলে তাকে যেতে হবে এক কাপড়ে। ব্যাগ নিয়ে বের হলেই সবাই সন্দেহ করবে। খালি হাতেও যাওয়া যায় না, টাকা-পয়সা দরকার। কাদের তার মানিব্যাগ খুলে টাকা গুনল। এক হাজার টাকার একটা নোট আছে। ভাংতি টাকা আড়াই শয়ের মতো। এত অল্প টাকা নিয়ে রওনা হওয়া ঠিক না। কয়েকটা জরুরি জিনিস কেনা দরকার এই বলে সে কি ম্যাডামের কাছে টাকা চাইবে? ম্যাডাম এখন দুঃখ-ধান্ধায় আছে। এই অবস্থায় কত টাকা যাচ্ছে তা কেউ খেয়াল করে না।
রুবিনা আধঘন্টার ওপর শোবার ঘরের রকিং চেয়ারে বসে আছে। তার হাতে মোবাইল ফোন। আধঘণ্টা আগে সে রবিকে টেলিফোন করেছিল। খলিল ঠিকই বলেছে, রবির আসল নাম রবিউল। রুবিনা ছোট করে ডাকে রবি। রুবিনাকে ছোট করলে হয় রুবি, রবিউল ছোট করলে হয় রবি। রুবি রবিতেও মিল।
প্রথম দুবার কলে রবি ধরেনি। তৃতীয়বারে ধরল।
রুবিনা বলল, এক্ষুনি বাসায় আসো। পুলিশ ওর ডেডবডি বাসায় দিয়ে গেছে। এখন আর আমার মাথা কাজ করছে না। তোমাকে ব্যবস্থা করতে হবে।
রবিউল বলল, তোমার বাসায় আসা সম্ভব না। পত্রিকায় নিউজ হয়েছে জানো? সেখানে আমার নাম আছে। খুবই ফালতু পত্রিকা, কেউ পড়ে—সাতসকাল নাম। হেডিং করেছে—স্ত্রী কর্তৃক অধ্যাপক স্বামী খুন। তোমাকে পড়ে শোনাব?
পড়ে শোনাতে হবে না। পত্রিকা নিয়ে চলে এসো।
বললাম তো আসা সম্ভব না। আবার নিউজ হয়ে যাবে। ডিবি পুলিশও আমাকে সন্দেহ করছে। কিছুক্ষণ আগে ডিবি পুলিশের এক ইন্সপেক্টর টেলিফোন করেছে, নাম খলিল।
তুমি তা হলে আসতে পারছ না?
না। সম্ভব না। তোমাকে বাস্তব বুঝতে হবে। তোমার বাড়ির সামনে নিশ্চয় সাংবাদিক ঘুরঘুর করছে।
আমার বাড়ির সামনে কোনো সাংবাদিক ঘুরঘুর করছে না।
ওরা আড়ালে-আবডালে থাকে। সুযোগমতো উদয় হয়। এদের আমি সুযোগ দেব না।
আচ্ছা, ঠিক আছে।
রুবিনা, সরি।
সরি হওয়ার কিছু নেই।
রুবিনা মোবাইল হাতে রকিং চেয়ারে দুলছে। বেচারিকে দেখে মায়া লাগছে। কেউ তার পাশে নেই, অবশ্য সে চাচ্ছেও না কেউ তার পাশে থাকুক। তার বাবা-মা আমেরিকায় থাকলেও বেশ কিছু আত্মীয়স্বজন ঢাকায় থাকেন। পুলিশের একজন অ্যাডিশনাল আইজি তার চাচাতো ভাই। রুবিনা কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করছে না।
রকিং চেয়ারের দুলুনি বন্ধ করে রুবিনা ডাকল, কাদের!
কাদের সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত হলো। এখন তার হাতে তসবি। সে তসবি ঘোরাচ্ছে, কিন্তু মনে মনে কিছু পড়ছে না। পড়লে আমি বুঝতে পারতাম। কাদেরের কর্মকাণ্ডে আমি মজা পাচ্ছি। মৃত্যুর পরেও মজা পাওয়ার বিষয়টা নষ্ট হচ্ছে না, এটা ভালো।
কাদের! সিগারেট নিয়ে আসো।
এক কার্টুন নিয়ে আসি, ম্যাডাম?
আনো।
সালমা দুই-একটা টুকটাক জিনিস চেয়েছে। চা-পাতা, চিনি, কফি। আনব?
আনো।
দুপুরে কি ঘরে পাক হবে, ম্যাডাম?
পাক হবে না কেন? মানুষের মৃত্যু হয়, ক্ষুধার মৃত্যু হয় না।
কাদের বলল, আপনার আর কিছু লাগবে ম্যাডাম?
একটা পত্রিকা নিয়ে আসতে পারো, সকাল না কী যেন নাম?
সাতসকাল।
হ্যাঁ, সাতসকাল। থাক, পত্রিকা আনতে হবে না।
টাকা দেন, ম্যাডাম। দুই হাজার দিলেই চলবে।
আমার খাটের ডান দিকের ড্রয়ারে টাকা আছে। তাড়াতাড়ি আসবে। আমার সিগারেট শেষ।
ড্রয়ার খুলে কাদের ৫০ হাজার টাকার একটি বান্ডিল পেল। ব্যাংকের সাটা কাগজ নেই, বান্ডিল থেকে কিছু হয়তো খরচ হয়েছে। কাদের বান্ডিল নিয়ে বের হচ্ছে। আমি ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার করছি। আমার চিক্কার রুবিনার কানে গেল না। যাওয়ার কথাও না।
আমি কাদেরের সঙ্গে আছি। কাদের লক্ষ্য করছে না আমাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন তাকে অনুসরণ করছে। সে ইন্সপেক্টর খলিলের লোক। তাকে রাখা হয়েছে বাড়ির ওপর নজরদারির জন্য। সে মোবাইলে খলিলের সঙ্গে যোগাযোগ করল।
কাদের রাস্তার পাশের এক চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়ানো। চায়ের অর্ডার দিয়েছে। কাদের সিগারেট খায় না। একটা সিগারেটও সে ধরিয়ে খুক খুক করে কাশল। সে ভয়াবহ আনন্দে আছে। মুক্তির আনন্দ।
খুব ইচ্ছে ছিল কাদেরের সঙ্গে সঙ্গে থাকার। সেটা সম্ভব হলো না। আমি এখন পলিনের ঘরে। পলিন তার ফেসবুকে ইংরেজিতে তথ্য দিচ্ছে। তথ্যের বাংলাটা এমন:
আমার সত্ত্বাবার শবদেহ এখন বারান্দায় রাখা আছে। কফিনের ভেতর তিনি আছেন। আমার খারাপ লাগছে। কান্না পাচ্ছে। আমার এই সবাবা আমাকে খুব আদর করতেন। তিনি অত্যন্ত জ্ঞানী ছিলেন। আমাকে বিজ্ঞানের অনেক কিছু বলতেন। তিনি অঙ্ক করে একবার আমাকে দেখিয়েছেন যে ৩ সমান ২ হতে পারে। তিনি কীভাবে করেছিলেন আমার মনে নেই। তিনি বেঁচে থাকলে তাঁর কাছে শিখে নিতাম।
রুবিনা রান্নাঘরে, তার হাতে এক হাজার টাকার একটা নোট। রুবিনা সালমাকে বলল, আমাকে এক প্যাকেট সিগারেট এনে দাও, কাদের দেরি করছে। সিগারেট আনতে পারবে না? ড্রাইভার আসেনি। ড্রাইভার থাকলে তাকে পাঠাতাম।
সিগারেট আনতে পারব আপা। আপনি গেটে দারোয়ানরে বলে দেন। দারোয়ান আটকাবে।
বলে দিচ্ছি। তাড়াতাড়ি এসো। বেনসন অ্যান্ড হেজেস আনবে—লাইট।
জি আচ্ছা। যাব আর আসব।
সালমা তার ব্যাগ নিয়ে বের হলো। আর ফিরল না।
পলিনের ফেসবুকের আপডেট:
আজ আমাদের বাসায় রান্না হয়নি। আমি আর মা অরেঞ্জ জুস এবং দুধ খেয়েছি। আর ডিম সিদ্ধ খেয়েছি। কাদের চাচা আর সালমা খালা বাজার করতে গিয়ে ফিরে আসেননি। মায়ের ধারণা, তারা দুজনেই পালিয়ে গেছে।
.
সন্ধ্যাবেলা ডিবি ইন্সপেক্টর খলিল টেলিফোন করল। রুবিনা টেলিফোন ধরল। খলিল বলল, ম্যাডাম, আপনাদের বাড়ির কেয়ারটেকারকে মহাখালী বাসস্টেশন থেকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে। তাকে থানা হাজতে নিয়ে যাব, না কি আপনার কাছে পাঠিয়ে দেব?
রুবিনা বলল, আমার কাছে পাঠিয়ে দিন।
আপনার বাসার কাজের মেয়ে সালমার মোবাইল ফোন আমরা ট্র্যাক করছিলাম। তাকেও ধরা হয়েছে। তার ব্যাগে বেশ কিছু জিনিসপত্র পাওয়া গেছে। তাকেও কি পাঠিয়ে দেব।
হ্যাঁ। রাতে রান্না করবে।
খলিল বলল, ম্যাডাম, আমি আমার জীবনে অনেক অদ্ভুত মানুষ দেখেছি, আপনার মতো দেখিনি।
রুবিনা বলল, আমার চেয়েও অনেক অদ্ভুত আমার স্বামী। তিনি মারা গেছেন, তাঁর সব অদ্ভুতের সমাপ্তি হয়েছে। আমি কি আপনাকে একটা অনুরোধ করতে পারি?
পারেন। স্বা
মীর ডেডবডি নিয়ে আমি বিপদে পড়েছি। ভালো বিপদে পড়েছি। আপনি কি কোনো গতি করতে পারেন?
কী ধরনের গতি?
ডেডবড়ি তাঁর গ্রামের বাড়িতে পাঠাতে পারেন?
হ্যাঁ, পারি।
সাসপেক্ট হিসেবে আপনারা কি আমাকে অ্যারেস্ট করবেন?
এখনো না। আপনি তো পালিয়ে যাচ্ছেন না, আমাদের নজরদারিতেই আছেন। তবে আপনার বন্ধু রবিউলকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে। যাকে আপনি আদর করে রবি ডাকেন।
ও, আচ্ছা।
আপনার জন্য আরেকটি দুঃসংবাদ আছে। আপনার হাজব্যান্ডের বড় মামা কিছুক্ষণ আগে মারা গেছেন। সরি।
রুবিনা বলল, আপনি সরি হচ্ছেন কেন? আপনি তো তাকে মারেননি।
আপনাকে একটি দুঃসংবাদ দিয়ে কষ্টের কারণ হয়েছি বলে সরি বললাম।
ঠিক আছে।
আমার কাছ থেকে আর কোনো সাহায্য কি আপনি চান।
চাই। এনায়েত নামের একজনের টেলিফোন নাম্বার দেবেন বলেছিলেন। টেলিফোন নাম্বারটা চাই। তার আগে জানতে চাই আমি আপনার প্রধান সাসপেক্ট। আমাকে সাহায্য করতে চাচ্ছেন কেন?
আপনার মতো রূপবতী একজন ফাঁসিতে ঝুলবে ভাবতে কষ্ট লাগছে বলেই হয়তো বলছি।
আমি কুরূপা হলে কি এনায়েতের নাম্বার আপনি দিতেন না?
হয়তো না। নাম্বারটা লিখুন।
একটু ধরুন, আমি কাগজ-কলম নিয়ে আসছি।
রুবিনা কাগজ-কলম আনতে গেছে আমি আর্তচিৎকার করছি—রুবিনা ভুল করবে না। ভয়ংকর ফাঁদে পা দেবে না। খবরদার খবরদার খবরদার।
রুবিনা শান্ত ভঙ্গিতে টেলিফোন নাম্বার লিখল। রুবিনা ফাঁদে পা দিতে যাচ্ছে, আমি তাকে আটকাতে পারছি না। আমি একজন অবজার্ভার ছাড়া কিছুই না। শুধু দেখা ছাড়া আমার কিছু করার নেই।
রুবিনার ঠোটের ফাঁকে বাঁকা হাসি। এই হাসি আমার পরিচিত। কোনো দুষ্টু বুদ্ধি তার মাথায় এসেছে। ভয়ংকর কোনো দুষ্টু বুদ্ধি। দুষ্টু বুদ্ধিটা কী হতে পারে।
রুবিনা এনায়েত নামের ডিবি পুলিশের এজেন্টের কাছে টেলিফোন করছে। আমি আতঙ্ক নিয়ে অপেক্ষা করছি।
আপনি এনায়েত।
হুঁ।
শুনেছি, আপনি মানুষের দস্তখত নকল করতে পারেন। আসলেই কি পারেন?
আপনার কী দরকার সেটা বলেন। ধানাই-পানাই কথা না। কাজের কথায় আসুন।
আমার স্বামীর দস্তখত নকল করতে পারবেন?
না পারার কারণ দেখি না।
একটা কাগজে লেখা থাকবে, আমার মৃত্যুর জন্য ডিবি ইন্সপেক্টর খলিল দায়ী। এর নিচে আমার স্বামীর দস্তখত করে দিবেন। পারবেন? দস্তখতের নমুনা ডিবি ইন্সপেক্টর খলিল সাহেবের কাছে আছে। তার কাছ থেকে নিয়ে নেবেন। এই কাজের জন্য কত টাকা নেবেন?
আমি বললাম, সাবাস।
আফসোস আমার সাবাস বলাটা রুবিনা শুনতে পেল না। রুবিনার বুদ্ধিতে চমকৃত হয়ে আমি একজীবনে অনেকবার বলেছি, সাবাস।
একবার আমার দামি একটা মোবাইল ফোন হারিয়ে গেল। মোবাইল ফোনটা বাথরুমের বেসিনের ওপর রেখে মুখ ধুয়ে শোবার ঘরে ঢুকেছি।
তখন মনে পড়ল মোবাইল ফোন বাথরুমে রেখে এসেছি। বাথরুমে ঢুকে দেখি ফোন নেই। শুধু বাথরুমে কেন সারা বাড়িতে কোথাও নেই।
রুবিনা বলল, শোবার ঘরে আমি বসে আছি। তুমি বাথরুম থেকে বের হওয়ার পর সেখানে কেউ ঢোকেনি।
আমি বললাম, মোবাইল ফোনটা বাথরুমের বেসিনে আমি রেখেছি। বেসিন সামান্য ভেজা ছিল, টাওয়েল দিয়ে মুছে তার ওপর রেখেছি।
রুবিনা বলল, তাহলে এই কাজটা তুমি করেছ তোমাদের ইউনিভার্সিটির বাথরুমে। তোমার ব্রেইন ইউনিভার্সিটির বাথরুম আর বাড়ির বাথরুমে গুলিয়ে ফেলছে। টেলিফোন করে খোঁজ নাও।
খোঁজ নিয়ে ইউনিভার্সিটির বাথরুমে মোবাইল ফোন পাওয়া গেল। আমি মনে মনে বললাম, সাবাস!