Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মৃন্ময়ী || Samarpita Raha

মৃন্ময়ী || Samarpita Raha

শালবনী গ্রামের ছোট জমিদার হঠাৎ সাত দিনের জ্বরে মারা যান।
বিধবা স্ত্রী স্বামীর মৃত‍্যুর পর —-মেয়েকে কলকাতায় এক সুপাত্রের সঙ্গে বিবাহ দেন—ও ছেলেকে বর্তমানে কলকাতার কলেজে পড়াচ্ছেন—ছেলের বি এ পরীক্ষার পর আইন নিয়ে পড়ছে।

হঠাৎ মায়ের অসুস্থতার কথা জানতে পেরে ছেলে শালবনীর উদ্দেশ্য রওয়ানা দেয়।

নৌকা থেকে নামতেই কাদায় পড়ে কাদা মাখামাখি হয়ে যতই উঠতেই যায়—এক বালিকার খিলখিল হাসিতে আবার আছাড় খায়।
অপু ভাবে দাঁড়াও মেয়ে তোমার হাসি বার করছি।
অপু ইশারায় মেয়েটিকে ডাকে—যাতে মেয়েটি সাহায্য করে—মেয়েটি এসে হাত বাড়ালেই অপু টেনে ফেলে দেয়—-তারপর গটগট করে চলে যায়—-অপুর খেয়াল হয় নি যে তার সুটকেস কাদায় পড়ে আছে।মনে মনে ভাবে জব্দ করতে পেড়েছে এই।

মেয়েটির ভাই বলে চিনিস দিদি অপুদাকে।
মিনু মাথা নেড়ে বলে আমি কি এখানে থাকতাম??চিনব কি করে??

মিনুর হাতে ঐ অপুদার সুটকেস।ভাইকে মিনু বলে —-বাক্সটা খোল ভাই।
এ মা দিদি পরের ব‍্যাগ কেউ খোলে?
জানতে পারলে চোর ভাববে।মিনু বলে দূর বোকা আমি বলব আপনাকে চিনি না তাই ঠিকানা খোঁজার জন্য সুটকেস খুলেছি।

ভাইকে বলে ফুল বাগান যাব রে ভাই।অনেক প্রজাপতি ধরে টপাটপ সুটকেসে ঢুকিয়ে বাক্স আটকে দেয়।ইচ্ছে করছিল কটা ব‍্যাঙ ঢুকিয়ে দেবার।

ভাই দিদিকে দূর থেকে বাড়িটা দেখিয়ে দিয়ে গাছে দোল খেতে থাকে।মিনু কাদা মাখা হয়ে সুটকেসটা বাড়ির সামনে ফেলে দিয়ে আসে।ব‍্যাস দাড়োয়ান চোর ভেবে ভিতরে টানতে টানতে নিয়ে যায়।অপুর মা বলে ছেলের সুটকেস চুরি করে পালাচ্ছিলি?কোন বাড়ির মেয়ে তুই?বেশ তো দেখতে তোকে।
এই সময় অপু আসল কথাটা মাকে বলে।তারপর দুজনেই মুখ ঘুরিয়ে দেখে মেয়েটি দূরে একটা গাছে একটি ছোট ছেলের সাথে দোল খাচ্ছে।

মা বলে ছোট ছেলেটি প্রাইমারী স্কুলের মাষ্টার হারাধনের ছেলে।
শুনেছি মেয়েটির বাবা বাইরে চাকরি করে।মা কিছুদিন হল মারা গেছে।তাই মেয়েটি মামার বাড়ি থাকে।সারাদিন ধিঙ্গিপানা করে বেড়ায়।
মিনু ছোট মেয়ে—শুধু ছেলেদের মত খেলে বেড়ায়।

অপু সুটকেস খুলতেই কত আধমরা প্রজাপতি দেখে।বুঝে যায় কার কান্ড।

অপু মা কে বলে তোমার তো অসুখ করেনি—এদিকে তারে লেখা “শীঘ্র এসো।মা অসুস্থ”।
মা বলে —এইভাবে না লিখলে তুই তো আসতিস না। শোন বাবা তোকে এবার বিয়ে করতে হবে।

অপুর মিনুকে মনে ধরেছে।মা কে বুঝিয়েছে বিয়ে হলে সব ছেলেমানুষি চলে যাবে।ঐ ঘটনার সাতদিনের মধ্যে বিয়ে হয়।

মিনু শুধু বলে বাড়ি যাবে—বরের সঙ্গে কলকাতায় যাবে না—-বর ঘরের মধ্যেই শাড়ি দিয়ে দোলনা করে দিয়েছে– -মিনু বরকে একটু পছন্দ হয়েছে– -শাশুড়ি কাজ শেখার কথা বললেই চিৎকার করে বলে— সে বাবার কাছে যাবে—-একদিন পালিয়ে যাবার চেষ্টা ও করে।

বর কষ্ট পেয়ে মিনুকে না বলে কোলকাতায় চলে যায়—-একটা চিঠি লিখে যায় তুমি ডাকলেই ফিরব—-তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাও—- মিনু তোমাকে বড্ড ভালোবাসি।

ছেলে চলে যাবার পর শাশুড়ি মিনুকে বলে মামার বাড়ি যাবি??
মিনু না বলে।সব সময় অন্যমনষ্ক থাকে।প্রায় ছয়মাস পড়ে একদিন সকালে ওঠে শাশুড়ি বলে চল কলকাতায় মেয়ের বাড়ি ঘুরে আসি।মেয়ের বাড়ি গিয়ে দেখে ছেলে দিদির বাড়িতে বেড়াতে এসেছে।

মিনুর শীর্ণকায়,শান্ত চেহারা দেখে চমকে ওঠে।মাকে জিজ্ঞেস করে ওর কি হয়েছে?মা বলে ওকে তুই সময় দে বাবা।

অপু মিনুকে নিয়ে সারা কলকাতা ঘুরিয়ে দেখায়।
মিনু বলে —–আমাকে বাবার কাছে বেড়াতে নিয়ে যাবে?
মা মারা যাবার পর বাবাকে দেখিনি—-সত্যি বলছি বাবাকে দেখেই চলে আসব—— তোমাকে ছাড়াও থাকতে পারব না।
অপু এই কথাটা শুনে আত্মহারা হয়ে বলে আমার সোনা মিনু।তোমার সব কথা রাখব।
তোমাকে আমি মিনু বলে ডাকব না।তোমার বড় হবার সাথে সাথেই তোমার নাম বড় করে দিলাম।
মিনু বলে কি রাখলে শুনি??
অপু বলে মৃন্ময়ী।পছন্দ তো ?
মৃন্ময়ী লজ্জায় মাথা নিচু করে দেয়।

অপু ভাবে মেয়েদের কত পরিবর্তন আসে জীবনে।সেই ছটফটে মিনু আজ শান্তশিষ্ট মৃন্ময়ী আর দুই ছেলে মেয়ের মা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress