Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মৃত্যুর পরের যাত্রা: এক আত্মার অভিজ্ঞতা || Pallav Sanyal

মৃত্যুর পরের যাত্রা: এক আত্মার অভিজ্ঞতা || Pallav Sanyal

জীবন চলছিল একদম স্বাভাবিক। কাজের চাপ, সংসারের দায়িত্ব আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু এক সন্ধ্যায়, বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ বুকের বামদিকে তীব্র ব্যথা অনুভব করলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম সামান্য ক্লান্তি, কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমার দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়ল। চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে এলো।

যখন জ্ঞান ফিরল, তখন নিজেকে মাটিতে শুয়ে থাকতে দেখলাম। চারপাশে সবাই ভিড় করে ছিল। আমার স্ত্রী পূর্ণিমা, ছেলে পুষ্পল আর আত্মীয়-স্বজনদের মুখগুলো বিষণ্ণ। কেউ কাঁদছিল, কেউ হতবাক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, আমি তাদের দেখতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু তারা আমাকে দেখছিল না।

আমি এগিয়ে গিয়ে পুষ্পলের মাথায় হাত বুলাতে চাইলাম, কিন্তু আমার হাত যেন শূন্যে মিশে গেল। আমার গলা শুকিয়ে আসছিল, কিন্তু আমি কথা বলতে পারছিলাম না। আমার চিৎকার তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছাল না। সেই মুহূর্তে প্রথমবারের মতো আমি বুঝতে পারলাম, আমি আর বেঁচে নেই।

পরের কয়েক ঘণ্টা আমার আত্মার জন্য ছিল অস্থির। আমি দেখলাম, পুষ্পল মাটিতে বসে আমার হাত ধরে আছে, আর পূর্ণিমা রান্নাঘরে গিয়ে এক গ্লাস জল আনতে চেষ্টা করছিল। কিন্তু ততক্ষণে ডাক্তার এসে বলে দিয়েছেন, “সব শেষ।” বাড়ির পরিবেশ ভেঙে পড়ল শোকের ভারে।

কিছুক্ষণের মধ্যে প্রতিবেশী আর আত্মীয়স্বজনরা বাড়ি ভরিয়ে দিল। শোকের পরিবেশের মধ্যেই আমি দেখলাম, কিছু মানুষ ভিন্ন কাজে ব্যস্ত। কেউ বাজারে দাহসামগ্রী আনতে গেল, কেউ ফোনে অন্য আত্মীয়দের খবর দিতে শুরু করল। আমি বুঝতে পারলাম, এই পৃথিবী থেমে থাকে না, এমনকি মৃত্যুর শোকেও।

অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাকে সাদা কাপড়ে মোড়া হলো। আমার দেহ শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে পড়ে ছিল, আর আত্মা তা নির্লিপ্তভাবে দেখছিল। আমি চেষ্টা করলাম নিজেকে বোঝাতে, কিন্তু পারলাম না। এই বিচ্ছেদ অপ্রত্যাশিত।

কিছুক্ষণ পরে, একটি পুরোনো ভ্যানে করে আমার দেহ শ্মশানের দিকে নিয়ে যাওয়া হলো। রাস্তার পাশে গুটখা চিবানো ড্রাইভার তার কাজ করছিল নির্বিকারভাবে। আমি ভাবলাম, এত নিষ্ঠুর! যিনি আমাকে নিয়ে চলেছেন, তার তো কোনো অনুভূতি নেই। ভ্যানে শুয়ে শুয়ে আমি দেখলাম, পরিচিত জায়গাগুলো একে একে পেরিয়ে যাচ্ছে। স্কুল, যেখানে একসময় পড়িয়েছিলাম। মাঠ, যেখানে ছোটবেলায় খেলা করতাম।

শ্মশানে পৌঁছে, দাহসামগ্রী প্রস্তুত করা হলো। কাঠের স্তূপে আমাকে রাখা হলো। আমি নিজেকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু এই অনুভূতি সহ্য করা কঠিন। চিতার আগুন যখন ছড়িয়ে পড়ল, তখন আমার অস্তিত্বের শেষ চিহ্ন মিশে যেতে শুরু করল। আমি দেখলাম, পুষ্পল আর পূর্ণিমা একে অপরের হাত ধরে দাঁড়িয়ে। শোক তাদের চোখে স্পষ্ট। কিন্তু আশেপাশে কিছু লোক হাসাহাসি করছিল, মোবাইল ঘাটছিল।

আমার হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে গেল। এটাই কি মানুষের জীবন? এত সংগ্রামের পর, আমাদের স্মৃতি আর সম্পর্কের গভীরতাও কি হারিয়ে যায় সময়ের স্রোতে?

আগুনের শিখা যখন আমাকে পুরোপুরি গ্রাস করল, তখন আমি ধীরে ধীরে অন্ধকারে মিশে গেলাম। এই যাত্রা ছিল এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। হয়তো এই শেষ নয়। হয়তো নতুন কোনো পথ খুলে যাবে। কিন্তু যা কিছু দেখলাম, তা আমাকে শিখিয়ে গেল—জীবনের মূল্য শুধুমাত্র স্মৃতিতে। ভালোবাসার সম্পর্কগুলো যতদিন টিকে থাকে, ততদিনই আমরা বেঁচে থাকি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *