নেই বা হলেম যেমন তোমার অম্বিকে গোঁসাই । আমি তো , মা , চাই নে হতে পণ্ডিতমশাই । নাই যদি হই ভালো ছেলে , কেবল যদি বেড়াই খেলে তুঁতের ডালে খুঁজে বেড়াই গুটিপোকার গুটি , মুর্খু হয়ে রইব তবে ? আমার তাতে কীই বা হবে , মুর্খু যারা তাদেরই তো সমস্তখন ছুটি । তারাই তো সব রাখাল ছেলে গোরু চরায় মাঠে । নদীর ধারে বনে বনে তাদের বেলা কাটে । ডিঙির ' পরে পাল তুলে দেয় , ঢেউয়ের মুখে নাও খুলে দেয় , ঝাউ কাটতে যায় চলে সব নদীপারের চরে । তারাই মাঠে মাচা পেতে পাখি তাড়ায় ফসল - খেতে , বাঁকে করে দই নিয়ে যায় পাড়ার ঘরে ঘরে । কাস্তে হাতে চুবড়ি মাথায় , সন্ধে হলে পরে ফেরে গাঁয়ে কৃষাণ ছেলে , মন যে কেমন করে । যখন গিয়ে পাঠশালাতে দাগা বুলোই খাতার পাতে , গুরুমশাই দুপুরবেলায় বসে বসে ঢোলে , হাঁকিয়ে গাড়ি কোন্ গাড়োয়ান মাঠের পথে যায় গেয়ে গান , শুনে আমি পণ করি যে মুর্খু হব বলে । দুপুরবেলায় চিল ডেকে যায় ; হঠাৎ হাওয়া আসি বাঁশ - বাগানে বাজায় যেন সাপ - খেলাবার বাঁশি । পুবের দিকে বনের কোলে বাদল - বেলার আঁচল দোলে , ডালে ডালে উছলে ওঠে শিরীষফুলের ঢেউ । এরা যে পাঠ - ভোলার দলে পাঠশালা সব ছাড়তে বলে , আমি জানি এরা তো , মা , পণ্ডিত নয় কেউ । যাঁরা অনেক পুঁথি পড়েন তাঁদের অনেক মান । ঘরে ঘরে সবার কাছে তাঁরা আদর পান । সঙ্গে তাঁদের ফেরে চেলা , ধুমধামে যায় সারা বেলা , আমি তো , মা , চাই নে আদর তোমার আদর ছাড়া । তুমি যদি মুর্খু বলে আমাকে মা না নাও কোলে তবে আমি পালিয়ে যাব বাদলা মেঘের পাড়া । সেখান থেকে বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে দেব চুল । ঘাটে যখন যাবে , আমি করব হুলুস্থূল । রাত থাকতে অনেক ভোরে আসব নেমে আঁধার করে , ঝড়ের হাওয়ায় ঢুকব ঘরে দুয়ার ঠেলে ফেলে , তুমি বলবে মেলে আঁখি , ' দুষ্টু দেয়া খেপল না কি ?' আমি বলব , ' খেপেছে আজ তোমার মুর্খু ছেলে । '