মুরারিবাবুর আলমারি
মুরারিবাবুর একটা আলমারি কেনার দরকার ছিল। কাঠের আলমারি আজকাল কেউ পছন্দ করে না। স্টিলের আলমারির রেওয়াজ বেড়েছে। ওঁর বন্ধুরা পরামর্শ দিয়েছিলেন-ভালো কোম্পানির নতুন স্টিলের আলমারির যা দাম, তার চেয়ে বরং টেরেট্টি বাজার কিংবা চীনাবাজারে গিয়ে নিলামি জিনিস খুঁজে কেনো। দাম কম পড়বে। জিনিসও পাবে খাঁটি। আজকাল ভেজাল জিনিসে বাজার ছেয়ে গেছে।
মুরারিবাবুর মনে ধরেছিল কথাটা। খোঁজ নিয়ে জানলেন, ওই এলাকায় চ্যাং চুং ফুঃ কোম্পানির নিলামি কারবার আছে। ফিরোববার সেকেলে নায়েবি আমলের আসবাবপত্র নিলাম হয়।
অতএব এক রোববার সকাল নটায় গিয়ে হাজির হলেন চ্যাং চুং ফুঃ কোম্পানির দোকানে। বিশাল দোকান। হরেকরকম বনেদি আসবাবে ভর্তি। তার মধ্যে খুঁজে খুঁজে কোণার দিকে একটা ছাইরঙা স্টিলের আলমারি পছন্দ হল। বেশ বড় আলমারি। একটা আয়নাও লাগানো রয়েছে। দোকানের চীনা কর্মচারী মুরারিবাবুর আগ্রহ দেখে বলল,–পছন্দ যখন হয়েছে, এক কাম করুন বাবু। বড়সাকে গিয়ে বোলেন, দু দশ রুপেয়া জাস্তি দিলেই আপনার হয়ে যাবে।
মুরারিবাবু অবাক হয়ে বললেন,–কেন? এটা বুঝি নিলামে বেচা হবে না?
না বাবু। কর্মচারীটি জানাল। এটা বাড়তি মাল আছে। দেখছেন না, সেজন্যেই এটা একধারে তফাত করে রাখা হয়েছে?
মুরারিবাবু ভাবলেন, তাই বটে। আলমারিটা সেজন্যই আলাদা রাখা আছে এবং এটার ধারেকাছে কেউ আসছে না। কিন্তু নিলামি জিনিস না হলে যে দাম বেশি পড়ে যাবে। তাহলে নতুন কেনাই তো ভালো। বললেন, তাহলে এটার দরকার নেই। নিলামি জিনিস কোথায় আছে দেখা যাক।
চীনা কর্মচারী এবার ওঁর কানে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল, আমার কথা শুনুন বাবু। এ বহুত ভালো মাল আছে। আজকাল এমন আলমারি পাবেন না কোথাও। বড়াসাবকে গিয়ে ধরুন, কম দামে মিলে যাবে।
মুরারিবাবু অবাক হলেন। ব্যাপারটা বেশ সন্দেহজনক। বললেন, কই, খুলে দেখাও তো, দেখি ভেতরটা কেমন?
কর্মচারীটি পকেট থেকে চাবি বের করে আলমারিটা খুলতেই ঘ্যাঁ-অ্যা-চ করে মারাত্মক আওয়াজ হল। এমন বিতিকিচ্ছিরি আওয়াজ যে, ঘরসুদ্ধ লোক চমকে উঠল। মুরারিবাবুরও পিলে চমকে ওঠার দাখিল। কর্মচারীটি একগাল হেসে বলল, মাত ঘাবড়াইয়ে বাবু। ভালো আলমারির এটাই তো গুণ। চোর-ডাকু খুললেই আপনি জানতে পারবেন। ধরা পড়ে যাবে সঙ্গে-সঙ্গে। হাঃ-হাঃ-হাঃ।
আলমারিটা ওয়াড্রোবিও বটে। কাপড়জামা টাঙানোর ব্যবস্থা আছে। টাকাপয়সা, সোনাদানা রাখার লকার আছে। দলিলপত্র, ফাইল রাখার তাক আছে। ভেতরে কেমন একটা মিষ্টি গন্ধ। মাথা ঝিমঝিম করে ওঠে। যেন নেশা ধরে যায়। দেখেশুনে মুরারিবাবু যেন বড্ড মায়ায় পড়ে গেলেন আলমারিটার। ঝোঁক চেপে গেল, এটা কিনতেই হবে।
চীনা কর্মচারীটি বলল,–পসন্দ হল তো হবেই তা জানা কথা! এখন চলেন, বড়সাহেবের কাছে নিয়ে যাই আপনাকে।
আলমারির পাল্লা বন্ধ করতে কিন্তু একটুও শব্দ হল না। এ তো ভারি অবাক আলমারি! মুরারিবাবু খুশি হলেন। খুললে বিকট আওয়াজ হচ্ছে! হোক না। ক্ষতি কী? যখনই অন্য কেউ তার অজান্তে খুলতে যাবে, তিনি টের পাবেন। তার ওপর আসল কথা, তিনি একা মানুষ। বাড়িতে থাকবার মধ্যে এক ওই গুণধর ভাগ্নে বীরু, আর ঠাকুর কাম-ভৃত্য জটিল ওরফে জটা। দুটিই মহা ধড়িবাজ চোর। সেজন্যেই তো এই আলমারি কেনার কথা মাথায় এসেছিল। কিন্তু এবার? এবার তোরা কীভাবে চুরি-চামারি করবি দেখা যাবে। মুরারিবাবু যত একথা ভাবলেন, তত জেদ চড়ে গেল মাথায়। যত টাকা লাগুক কিনতেই হবে আলমারিটা।
পার্টিশনের আড়ালে একটা চেম্বারে তাঁকে নিয়ে গেল কর্মচারীটি। মুরারিবাবু দেখলেন, ইয়া হোঁতকা মোটা গোলগাল প্রকাণ্ড আর একজন চীনা-ভদ্রলোক বসে আছেন। একটু হেসে খুব খাতির দেখিয়ে ইংরাজিতে বললেন, বসুন স্যার। বলুন, কী করতে পারি?
মুরারিবাবু বললেন,–ওই আলমারিটা…
কথা কেড়ে ভদ্রলোক বললেন,–বুঝেছি, বুঝেছি। বেশ তত নিয়ে যান।
বলে কী! বিনিদামে দেবে নাকি–এমনভাবে বলছে কথাটা?
মুরারিবাবু বললেন, কিন্তু দাম-টাম কীরকম লাগবে যদি বলেন!
চীনা-ভদ্রলোক কুমড়োর মতো রাঙা ও বৃহৎ মুখে বিরাট হাসি ফুটিয়ে বললেন, আপনার যা খুশি দেবেন! ব্যস! আমি কিছু বলব না!
সে কী!–ফ্যালফ্যাল করে তাকালেন মুরারিবাবু। ঠাট্টা করছে নাকি?
–হ্যাঁ স্যার। পছন্দ যখন হয়েছে, নিয়ে যান।
তার মানেটা কী বুঝিয়ে বলবেন?–মুরারিবাবু জিগ্যেস করলেন।
এবার চীনা-ভদ্রলোক গম্ভীর হয়ে বললেন,–ওই আলমারির মালিক ছিলেন হো হো হুয়া নামে আমার এক বন্ধু। এখন তিনি হংকংবাসী। যাওয়ার আগে ওটা আমাকে দিয়ে বলে গেছেন যেন জিনিসটার দাম নিয়ে কারও সঙ্গে দরাদরি না করি। কেউ যদি খুব পছন্দ করে কিনতে চায়, সে হাতে তুলে যা দেবে, আমাকে নিতে হবে।
মুরারিবাবু অবাক হয়ে বললেন, তা আমি ছাড়া আর কারুর পছন্দ হয়নি বুঝি?
ঘাড় নাড়লেন ভদ্রলোক, হয়নি।
কেন পছন্দ হয়নি? জিনিসটা তো ভালোই মনে হল। মুরারিবাবু বললেন।
চীনা-ভদ্রলোক বললেন,–এই বিশ্রী আওয়াজটার জন্যে। বুঝলেন কিনা? আজকাল লোকের যেন ভারি অদ্ভুত মনোভাব। আলমারি হোক, আর মোটরগাড়ি হোক আওয়াজ বরদাস্ত করতে পারে না। সাইলেন্সর লাগায় গাড়ির ইঞ্জিনে। বুঝলেন কিনা?
মুরারিবাবু বুঝলেন আবার বুঝতেও পারলেন না। আওয়াজের কথা বলছে কিন্তু পাড়ায় যে অষ্টপ্রহর মাইকে হিন্দি গান বাজে, তার বেলা? তখন তো দিব্যি সয় সবার। বললেন,–একটু তেল-টেল দিলেই তো আওয়াজটা বন্ধ হয়ে যায়। এটা কারুর মাথায় আসেনি?
ভদ্রলোক আবার হাসলেন, না স্যার। ও আওয়াজ দু-চার কুইন্টাল তেল ঢেলেও বন্ধ হওয়ার নয়! ওটাই তো ওর মজা। কিন্তু কে কাকে বোঝায়? তাছাড়া আলমারির এরকম আওয়াজ থাকা তো ভালোই। চোর-ডাকাত যদি…
বাধা দিয়ে মুরারিবাবু বললেন,–দেখুন। আমার যখন পছন্দ হয়েছে, জিনিসটা আমি নেব। ন্যায্য দাম দিয়েই নেব।
বলে পাঞ্জাবির ভেতর পকেট থেকে যা হাতে এল, চোখ বুজে টেবিলে রেখে দিলেন। তারপর উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, আশা করি, আলমারিটা এখন আমি নিয়ে যেতে পারি।
স্বচ্ছন্দে। –বলে চীনা-ভদ্রলোক ঘণ্টার বোম টিপলেন। একজন কর্মচারী এসে ঢুকল, তখন বললেন, ইনি আলমারিটা কিনেছেন। যাও, কুলির ব্যবস্থা করো।
আলমারি তো পৌঁছে গেল। মুরারিবাবুর শোওয়ার ঘরে জায়গামতো দাঁড় করিয়ে চ্যাং চুং ফুঃ কোম্পানির কুলিরা চলে গেল। ভাড়া দিতে গেলেন, ওরা নিল না। ক্যারিং চার্জ কোম্পানির। বাড়তি পয়সা নিলে ওদের ছাঁটাই করে দেবে কোম্পানি। এমনই কড়া নিয়ম।
জটিল আর বীরু আলমারিটা দেখে খুব প্রশংসাই করল। মুরারিবার তাদের ব্যাপারটা টের পাইয়ে দিতে চাবি বের করলেন। তারপর পাল্লার হাতল ধরে টান দিলেন। অমনি মনে হল, কানের ভেতর গরম সীসে ঢুকে যাচ্ছে। বাড়িসুদ্ধ একেবারে কেঁপে উঠেছে। জটিল দুকানে হাত ঢেকে বাপ রে–বলে লাফিয়ে উঠেছে। বীরু প্রায় ভিরমি খাওয়ার দশা। সে চেঁচিয়ে উঠল,–ও মামা। এ যে সাংঘাতিক ব্যাপার।
মুরারিবাবু চমকে গিয়েছিলেন। এ-বাড়ি এসে যেন আওয়াজটা তিনগুণ বেড়ে গেল! দোকানে তো এত বেশি আওয়াজ হয়নি। কিন্তু কথাটি আর বললেন না। মুচকি হাসলেন শুধু।
বীরু বলল, মামা, অয়েলিং করা দরকার। নয়তো আর সব ফ্ল্যাটের লোক থানা-পুলিশ করে বসবে। ডিসটার্ব হবে যে!
মুরারিবাবু তাচ্ছিল্য করে বললেন,-হাতি করবে। ঘোড়া করবে। আমি কারুর ডিসটার্ব হবে বলে আলমারি খুলতে পারব না? আবদার আর কী।
বীরু আবার বলল–অয়েলিং করলেই তো হয়।
মুরারিবাবু ফাঁচ করে হেসে বললেন,–বেশ তো, অয়েলিং করে দ্যাখ না তুই। যদি আওয়াজ বন্ধ হয়, তো হোক!
বীরু দৌড়ে কিচেন থেকে নারকেল তেলের শিশি নিয়ে এল। তারপর পাল্লার কবজাগুলোতে ঢেলে দিল। পাল্লা বন্ধ করে বলল,-দেখছ? আর কোনও শব্দ নেই?
মুরারিবাবু মিটিমিটি হেসে বললেন, । এবার খোল তো দেখি।
বীরু যেই হাতল ধরে টেনেছে, অমনি যেন আবার কানে গরম সীসে ঢুকে পড়েছে। এবার আওয়াজটা আরও বেশি। আরও বাড়িকাঁপানো। যেন প্লেন ঢুকে পড়েছে ঘরের মধ্যে। ওদিকে সারা বাড়ি হুলুস্থুল। অন্য ফ্ল্যাটের লোকেরা বেরিয়ে পড়েছে। তাদের ধারণা, ওপরতলার ছাদ বুঝি ধসে পড়েছে। সে এক হইহই কাণ্ড। চ্যাঁচামেচিতে রাস্তায় ভিড় জমে গেল দেখতে-দেখতে। কারা চেঁচিয়ে বলতে থাকল, দমকল! পুলিশ!
মুরারিবাবু থ। একেবারে কাঠপুতুল। মুখে কথা নেই। হ্যাঁ, এজন্যেই চ্যাং চুং ফুঃ কোম্পানি আলমারিটা তাঁকে গছিয়ে দিয়েছে। সব রহস্য বোঝা গেল বটে।
ওদিকে লোকেরাও অবাক। কোথাও তো কিছু ভেঙে পড়েনি। অথচ আওয়াজটা ঠিকই শোনা গেছে। এক ফ্ল্যাটের লোকেরা অন্য ফ্ল্যাটের লোককে জিগ্যেস করে বেড়াচ্ছে, কীসের শব্দ হল বলুন তো? মুরারিবাবুর ফ্ল্যাটেও এল কেউ-কেউ। বুদ্ধিমান জটিল দরজা থেকে বিদায় করে বলল,-প্লেন যাচ্ছিল। আবার কী?…..
এই অদ্ভুত আলমারি কিনে মুরারিবাবু সমস্যায় পড়ে গেলেন। কোনও কাজেই লাগানো যাবে না যে! জিনিসপত্র রাখতে হলেই খুলতে হবে। এবং যা বোঝা যাচ্ছে খুললেই প্রতিবার আওয়াজ ক্রমশ বাড়তে থাকবে। প্রথমবারের চেয়ে দ্বিতীয়বার তিনগুণ বেড়েছে। তৃতীয়বার বেড়েছে আরও তিনগুণ যেন। চতুর্থবার খুললে না জানি কী প্রলয়ঙ্কর কাণ্ড হবে। তাই বন্ধ করে রেখে দিয়েছেন। একটা কাজ অবশ্য হচ্ছে। চুল আঁচড়ানো আর দাড়ি কামানো। আয়নাটা খুব ভালো। পরিষ্কার প্রতিমূর্তি ফোটে। বরং চেহারা যেন সুন্দরতর দেখায়। মুরারিবাবু নিজের চেহারা সম্পর্কে এতকাল খুঁতখুঁতে ছিলেন। তার নাকটা বেজায় লম্বা এবং ডগাটা থ্যাবড়া। স্বাস্থ্যও লিকলিকে। কিন্তু এখন এই আয়নার সামনে দাঁড়ালে কী চমৎকার না দেখায়।
আলমারিটা ফেরত দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু শুধু আয়নাটার খাতিরেই রেখে দিলেন!
এক রাত্রে মুরারিবাবু শুতে যাওয়ার আগে অভ্যাসমতলা চুল আঁচড়াচ্ছেন। হঠাৎ চমকে উঠে দেখলেন আয়নার মধ্যে, তাঁর পিঠের কাছে একটা বেঁটে চীনা লোক দাঁড়িয়ে আছে।
মুরারিবাবু সঙ্গে-সঙ্গে ঘুরলেন। কিন্তু আশ্চর্য! চীনা কেন, কোনও লোকই তাঁর পিঠের কাছে দাঁড়িয়ে নেই! তাহলে কি চোখের ভুল? আয়নার দিকে আবার ঘুরলেন! আর ঘুরেই চমকে উঠলেন। হ্যাঁ, দিব্যি পিঠের কাছে চীনা লোকটা দাঁড়িয়ে আছে এবং মিটিমিটি হাসছে।
ভয়ে বুক ঢিপঢিপ করে উঠল। এ যে মারাত্মক ভুতুড়ে কাণ্ড! মুরারিবাবু বরাবর সাহসী এবং জেদি মানুষ। কিন্তু ব্যাপারটা দেখে তাঁর গাঁয়ের রক্ত হিম হয়ে গেল। তক্ষুনি দুহাতে চোখমুখ ঢেকে কাঁপতে কাঁপতে খাটে গিয়ে বসে পড়লেন।
একটু পরে ধাতস্থ হয়ে ভাবলেন, নাঃ, চোখের ভুল ছাড়া কিছু নয়। হ্যাঁলুসিনেশান নামে একটা ব্যাপার আছে। মানুষ অনেক সময় ভুল দেখে। কারুর কারুর ওই একটা স্থায়ী মানসিক ব্যাধি। তাঁর সেই ব্যাধি-ট্যাধি হয়নি তো?
তা কেন হবে? দিব্যি সুস্থ মানুষ। কোনও রোগবালাই নেই। মাথাও ধরে না। ঘুমও ভালো হয়। খিদে হয়।
মুরারিবাবু আবার সাহস করে আয়নার সামনে গেলেন। তারপর তাকালেন। ওরে বাবা! এবার যে আরও সাংঘাতিক ব্যাপার। সেই বেঁটে চীনা লোকটির গলার কাছটা কাটা এবং গলগল করে রক্ত বেরুচ্ছে। অথচ সে কেমন মিটিমিটি হেসে তাকিয়ে আছে। আর সহ্য করতে পারলেন না মুরারিবাবু! পরিত্রাহি আর্তনাদ করে উঠলেন, খুন! খুন! খুন!
সে-রাতেও খুব হইহই কাণ্ড হয়েছিল। বীরু ও জটিল ভেবেছিল, মুরারিবাবুকে ডাকাতে বুঝি খুন করেছে। পাড়াসুদ্ধ লোক জড়ো হয়েছিল। পুলিশও এসেছিল। কিন্তু কোথায় খুন–ডাকাতই বা কোথায়! মুরারিবাবু অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন আলমারিটার সামনে। ডাক্তারবাবু এসে ওষুধ দিলে জ্ঞান ফিরল। চোখ খুলেই বললেন,–আলমারি হটাও।
পরের দিন টেম্পো ভাড়া করে আলমারিটা নিয়ে গেলেন চ্যাং চুং ফুঃ কোম্পানির দোকানে। সেই চীনা কর্মচারীটি একগাল হেসে বলল, আসুন বাবু! এত দেরি হল যে?
মুরারিবাবু তেতো হয়ে বললেন…কীসের দেরি?
–এর আগে যারা নিয়ে গেছেন পরদিনই ফেরত এনেছেন। আপনি বাবুজি পাঁচদিন পরে আনলেন যে?
আমার খুশি! বলে মুরারিবাবু আলমারিটা আগের জায়গায় রাখবার ব্যবস্থা করে চলে আসছেন–চীনা কর্মচারী তার সঙ্গে সঙ্গে দরজা অবধি এল, ফিসফিস করে জানাল,–জিনিস ভালো। তবে বড্ড গোলমাল করে। হো হো হুয়া সাহেবের আলমারি। ডাকাতেরা ওঁকে খুন করে ওর মধ্যে ভরে রেখে গিয়েছিল। একবছর পরে তালা ভেঙে তবে ব্যাপারটা জানা যায়। মরচে ধরে গিয়ে খুব আওয়াজ হয়েছিল খোলার সময়। পালিশ করে সব ঠিকঠাক হয়েছে। শুধু আওয়াজটা বন্ধ করা যায়নি। আচ্ছা বাবু, আবার আসবেন। নমস্কার!…