Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

ঈশানবাবু একজন সৎকুলোদ্ভূত কায়স্থ। অতি ক্ষুদ্র লোক-কেন না, বেতন এক শত টাকা মাত্র-কোন জেলার ফৌজদারী আপিসের হেড কেরাণী। বাঙ্গালাদেশে মনুষ্যত্ব বেতনের ওজনে নির্ণীত হয়-কে কত বড় বাঁদর, তার লেজ মাপিয়া ঠিক করিতে হয়। এমন অধঃপতন আর কখন কোন দেশের হয় নাই। বন্দী চরণ-শৃঙ্খলের দৈর্ঘ্য দেখাইয়া বড়াই করে।

ঈশানবাবু ক্ষুদ্র ব্যক্তি-ল্যাজ খাটো, বানরত্নে খাটো-কিন্তু মনুষ্যত্বে নহে। যে গ্রামে হারাণ অধিকারী সেই অপূর্ব্ব মানভঞ্জন যাত্রা করিয়াছিলেন, ঈশানবাবুর সেই গ্রামে বাস। যাত্রাটা যে সময়ে হইয়াছিল, সে সময়ে তিনি ছুটি লইয়া বাড়ীতে ছিলেন। যাত্রার ব্যাপার তিনি কিছু জানিতেন কি না বলিতে পারি না। যাত্রার পরদিন সন্ধ্যাকালে তিনি পথে বেড়াইতেছিলেন, দেখিলেন, একটি ছেলে-শুষ্কশরীর, দীর্ঘকেশ-অনুভবে যাত্রার দলের ছেলে-পথে দাঁড়াইয়া কাঁদিতেছে!

ঈশানবাবু ছেলেটির হাত ধরিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কাঁদ্‌ছিস্ কেন বাবা?” ছেলে কথা কয় না। ঈশানবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কে?”

ছেলে বলিল, “আমি মুচিরাম |”

ঈশা। তুমি কাদের ছেলে?

মুচি। বামনদের।

ঈশা। কোন্ বামনদের?

মুচি। আমি গুড়েদের ছেলে।

ঈশা। তোমার বাড়ী কোথায়?

মুচি। আমাদের বাড়ী মোনাপাড়া।

ঈশা। সে কোথা?

তা ত মুচিরামের বিদ্যার মধ্যে নহে। যাই হৌক, ঈশানবাবু অল্প সময়ে মুচিরামের দুর্ঘটনা বুঝিয়া লইলেন। “তোমাকে বাড়ী পাঠাইয়া দিব” এই বলিয়া মুচিরামকে আপনার বাড়ী লইয়া গেলেন। মুচিরাম হাত বাড়াইয়া স্বর্গ পাইল। ঈশানবাবু তাহার আহারাদি ও অবস্থিতির উত্তম ব্যবস্থা করিয়া দিলেন।

কিন্তু মোনাপাড়ার ত কোন ঠিকানা হইল না। সুতরাং মুচিরাম ঈশানবাবুর গৃহে বাস করিতে লাগিল। সেখানে আহার পরিচ্ছদের ব্যবস্থা উত্তম, এবং কাণমলার অত্যন্তাভাব, দেখিয়া মুচিরাম বাড়ীর জন্য বিশেষ ব্যস্ত হইল না।

এদিকে ঈশানবাবুর ছুটি ফুরাইল-সপরিবারে কর্ম্মস্থানে যাইবেন। অগত্যা মুচিরামও সঙ্গে চলিল। কর্ম্মস্থানে গিয়াও ঈশান মোনাপাড়ার অনুসন্ধান করিলেন, কিন্তু কোন সন্ধান পাইলেন না। অগত্যা মুচিরাম তাঁহার গলায় পড়িল। মুচিরামও, সেখানে আহারের ব্যবস্থা উত্তম, সেখানে গলায় পড়িতে নারাজ নহে-তবে ঈশানবাবুর একটা ব্যবস্থা মুচিরামের বড় ভাল লাগিল না। ঈশানবাবু বলিলেন, “বাপু, যদি গলায় পড়িলে, তবে একটু লেখা পড়া শিখিতে হইবে |” ঈশানবাবু তাহাকে পাঠশালায় পাঠাইয়া দিলেন।

এখানে মুচিরামের মা অনেক দিন হইতে ছেলের কোন সম্বাদ না পাইয়া, পাড়ায় পাড়ায় বিস্তর কাঁদাকাটি করিয়া বেড়াইয়া, শেষ আহার-নিদ্রা ত্যাগ করিল। আহার-নিদ্রা ত্যাগ করিয়া রুগ্ন হইল। রুগ্ন হইয়া মরিয়া গেল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress