Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মুখুজ্যের সঙ্গে আলাপ || Subhash Mukhopadhyay

মুখুজ্যের সঙ্গে আলাপ || Subhash Mukhopadhyay

আরে ! মুখুজ্যে মশাই যে ! নমস্কার, কী খবর ?
আর এই লেখা-টেখা সংসার-টংসার এই নিয়েই ব্যস্ত |
তা বেশ | কিন্তু দেখো মুখুজ্যে,
আমার এই ডানদিকটাকে বাঁদিক
আর বাঁদিকটাকে ডানদিক ক’রে
আয়নায় এভাবে ঘুড়িয়ে দেওয়া—
আমি ঠিক পছন্দ করি না |
তার চেয়ে এসো, চেয়ারটা টেনে নিয়ে
জানলায় পা তুলে বসি |
এককাপ চায়ে আর কতটা সময়ই বা যাবে ?

দেশলাই ? আছে |
ফুঃ, এখনও সেই চারমিনারেই রয়ে গেলে |
তোমার কপালে আর করে খাওয়া হল না দেখছি |
বুঝলে মুখুজ্যে, জীবনে কিছুই কিছু নয়
যদি কৃতকার্য না হলে |


আকাশে গুড়গুড় করছে মেঘ—
ঢালবে |
কিন্তু ভয়ের কিছু নেই
যুদ্ধ না হওয়ার দিকে |
আমাদের মুঠোয় আকাশ;
চাঁদ হাতে এসে যাবে |

ধ্বংসের চেয়ে সৃষ্টির,
অন্ধকারের চেয়ে আলোর দিকেই
পাল্লা ভারী হচ্ছে |

ঘৃণার হাত মুচড়ে দিচ্ছে ভালোবাসা |
পৃথিবীর ঘর আলো ক’রে—
দেখো, আফ্রিকার কোলে
সাত রাজার ধন এক মানিক
স্বাধীনতা |
পাজির পা-ঝাড়াদের আগে যারা কুর্নিশ করত
এখন তারা পিস্তল ভরছে |
শুধু ভাঙা শেকলগুলো এক জায়গায় জুটে
এই দিনকে রাত করবার কড়ারে
ডলারে ফলার পাকাবার
ষড়যন্ত্র আঁটছে |

পুরনো মানচিত্রে আর চলবে না হে,
ভূগোল নতুন ক’রে শিখতে হবে |
আর চেয়ে দেখো,
এক অমোঘ নিয়মের লাগাম-পরা
ঘটনার গতি
পাঁজির পাতায় রাজজ্যোতিষীদের
দৈনিক বেইজ্জত করছে |

ধনতন্ত্রের বাঁচবার একটাই পথ
আত্মহত্যা |
দড়ি আর কলসি মজুত
এখন শুধু জলে ঝাঁপ দিলেই হয় |

পৃথিবীকে নতুন করে সাজাতে সাজাতে
ভবিষ্যৎ কথা বলছে, শোনো,
ক্রুশ্চেভের গলায় |

নির্বিবাদে নয়, বিনা গৃহযুদ্ধে
এ মাটিতে
সমাজতন্ত্র দখল নেবে |
হয়তো একটু বাড়াবাড়ি শোনাচ্ছে
কিন্তু যখন হবে
তখন খাতা খুলে দেখে নিও
অক্ষরে অক্ষরে সব মিলে যাচ্ছে |


দেখো মুখুজ্যে, মাঝে মাঝে আমার ভয় করে
যখন অমন সুন্দর বাইরেটা
আমার এই আগোছালো ঘরে হারিয়ে যায় |

যখন দেখি ঠিক আমারই মতন দেখতে
আমার দেশের কোনো ভাই
উলিডুলি ছেঁড়া কাপড়ে
আমাকে কাঁদাতে পারবে না জেনেও
বলে বলে দুঃখের কথাগুলোতে ঘাঁটা পড়ায়–
আমার লজ্জা করে |

পাঞ্চেতের এক সাঁওতাল কুলি দেখতে দেখতে
ওস্তাদ ঝালাইমিস্ত্রি হয়েছিল—
এখন আবার তাকে গাঁয়ে ফিরে গিয়ে পেটভাতায়
পরের জমিতে আদ্যিকালের লাঙল ঠেলতে হচ্ছে |
এক জায়গায় রুগী ডাক্তার অভাবে মরছে,
অন্য জায়গায় ডাক্তার রুগী অভাবে মরছে |
কেন হয়?
কেন হবে ?

আমি দেখে এসেছি নদীর ঘাড় ধ’রে
আদায় করা হচ্ছে বিদ্যুৎ—
ভালো কথা |
কলে তৈরি হচ্ছে বড় বড় রেলের ইঞ্জিন—
খুব ভালো
মশা মাছি সাপ বাঘ তাড়িয়ে
ইস্পাতের শহর বসেছে—
আমরা সত্যিই খুশি হচ্ছি |

কিন্তু মোটেই খুশি হচ্ছি না যখন দেখছি—
যার হাত আছে তার কাজ নেই,
যার কাজ আছে তার ভাত নেই,
আর যার ভাত আছে তার হাত নেই |
তবু যদি একটু পালিশ থাকত |
তা নয়,
মুচির দোকানের লাশে-চড়ানো জুতোর মতো
মাথার ওপর ঝুলছে |

গদিতে ওঠবস করাচ্ছে
টাকার থলি |
বন্ধ মুখগুলো খুলে দিতে হবে
হাতে হাতে ঝনঝন করে ফিরুক |
বুঝলে মুখুজ্যে, সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না
আড় হয়ে লাগতে হবে |


যারা হটাবে
তারা এখনও তৈরি নয় |
মাথায় একরাশ বইয়ের পোকা
কিলবিল করছে :
চোখ খুলে তাকাবার
মন খুলে বলবার
হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দেখবার—
মুখুজ্যে, তোমার সাহস নেই |

আগুনের আঁচ নিভে আসছে
তাকে খুঁচিয়ে গনগনে করে তোলো |
উঁচু থেকে যদি না হয়
নীচে থেকে করো |

সহযোদ্ধার প্রতি যে ভালোবাসা একদিন ছিল
আবার তাকে ফিরিয়ে আনো,
যে চক্রান্ত
ভেতর থেকে আমাদের কুরে কুরে খাচ্ছে
তাকে নখের ডগায় রেখে
পট্ করে একটা শব্দ তোলো ||

দরজা খুলে দাও,
লোকে ভেতরে আসুক |

মুখুজ্যে, তুমি লেখো ||

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *