মা : 05
কারখানায় জটলা চলতে থাকে বেশ কিছুদিন, দ্যুলোক যতটা সম্ভব বিতর্ক পাশ কাটিয়ে চলতে চেষ্টা করে, তবে সব বিষয়ে অধৈর্য হয়ে ওঠে যেন, কারখানায় যাওয়ার পথে বাসে বা সবজি বিক্রেতার সঙ্গে অকারণ ঝগড়া বাধিয়ে বসে! ঘরেতে মেরি কাজের মাঝে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, দ্যুলোকের থেকে কাজে কোনোরকম সহযোগিতা পায় না, বরং অকারণ খুঁত ধরার প্রবণতা যেন বেড়েই চলেছে! মেরিকে হাভাতে ঘরের মেয়ে তুই, আমার জীবনটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিলি, এখন পেটের টাকে ঠিক ভাবে রাখতে না পারলে ঘর থেকে দূর করে দেবো বলে গালিগালাজ করতে থাকে, সাথে সাথেই শাশুড়ি গলা মেলায় , বাপের বাড়ি থেকে তো কেউ উঁকি দিতেও আসে না, ফল মিষ্টি দূরের কথা!!মেরি অভ্যস্ত গালিগালাজে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবে যত্ন নেবে কি ভাবে! অভাবের সংসারে দুবেলা দুমুঠো ভাত জোটে,দুধ,ফল মিলবে কোথায়!! পাশের বাড়ির বুড়ি বিধবা মাসি মাঝে মাঝে ফল দিলে লজ্জা হলেও নিয়ে নেয়, মাসি হেসে বলে তুইতো আমার মেয়ের মতো, নিজের শরীর, নিজের যত্ন নিতে হবে, আমি কম বয়সে বরের মার অনেক সহ্য করেছি, পোয়াতি কালে পেটে সজোরে লাথি মেরেছিল, অনেক কষ্টে বেঁচে ছিল মেয়েটা! মেয়েছেলের কই মাছের জান!! তুই ওষুধ, ইঞ্জেকশন ঠিক করে নিবি, হাসপাতালের কার্ড ঠিক করে রাখবি। আনমনে মাথা নেড়ে মেরি ভাবে টানাটানির সংসারে বাচ্চাটাকে ভালো ভাবে মানুষ করতে পারবে তো! যদি পড়ালেখা শিখাতে পারি তবে ওদের মতো মাথা ঠুকতে হবে না দুমুঠো অন্নের জন্য, মানুষের মতোই বাঁচবে। অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস, ক্লান্ত দুটো চোখ দূরের আকাশের দিকে চেয়ে থাকে।