মা : 04
নার্সিংহোমে পৌঁছে কারখানার দুচারজন জটলা করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে এগিয়ে যায়, একপাশে জিনা নিজের মনে গজরাচ্ছে যা টাকা লেগেছে যেভাবেই হোক মুখের কাছে এনে যুগিয়েছি, ভালো ছিল মানুষটা, ওকে মেরে ফেলেছে ওরা ইচ্ছে করে, কথাগুলো দ্যুলোকের কানে বাজে, সত্যি বিকাশতো মোটামুটি ভালো ছিল, সেদিন কথা বললো, কি হলো তবে! পাশ থেকে একজন বলে ডাক্তাররা বলছে মাল্টিঅরগ্যান ফেল না কি যেন! পাশে ছোটবাবু দাঁড়িয়ে ছিল,হুম তাই শুনলাম মাল্টিঅরগ্যান ফেলিওর হলে কিছু করার থাকে না। এখন চলো দাদা গাড়ি ঠিক করে দিয়েছে, শশ্মানে চলো,জিনা তুমি বাসায় ফিরে যাবে? জিনা: আমার মেয়েকে আনতে বলেছি,ও বাপের মুখাগ্নি করুক, অভাগী বুঝুক আমাদের ভাগ্য পুড়লো! ছোটবাবু: অতটুকু মেয়ে! ঠিক আছে যা ভালো বোঝো করো। শশ্মানে বিকাশের নগ্ন শরীরটাতে বিকাশ দেখে অনেকগুলো কাটা সেলাইয়ের দাগ! এতো দাগ কেন? কথাটা মনে হলেও কাউকে কিছু বলতে সাহস করে না, শুনলে জিনা হয়তো আবার ক্ষেপে উঠবে,যে যাওয়ার সেতো চলেই গেছে, গরীবের পোড়া কপাল!! এখন কাজ মিটলে সবাই রেহাই পাবে। জিনার মুখের দিকে তাকাতে পারছিল না দ্যুলোক, জিনা দুচোখে জল মুছতে মুছতে চেঁচিয়ে ওঠে,মদের বোতল দিয়ে দেব ; যার জন্য আমাদের ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেছ!! দ্যুলোক ওদের দিকে তাকাতে পারছিল না,কি যেন অজানা আতঙ্কে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছিল।কতটুকু মেয়ে রেখে চলে গেল,এইতো পাঁচ বছরে পড়েছে! শশ্মান থেকে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়,মেরি কোনো কথা না বাড়িয়ে খেতে দিয়ে কোনোরকমে দুটো রুটি খেতে খেতে মেরিকে বলে পরের মাসে ইঞ্জেকশন দেওয়া তো? মায়ের সঙ্গে চলে যাবি, আমার কামাই মানে লোকশান, যতটা ওভারটাইম এখন করে লিব, আগে থেকেই ভাবলে ভালো হতো। মেরি: অত চিন্তা করে কি হবে,যে দিয়েছে সেই খেয়াল রাখবে, ভগবানে একটু বিশ্বাস রাখো। দ্যুলোক মনে মনে বলে বিকাশের কি এখন যাওয়ার সময়! যেভাবেই হোক আমাকে টাকা মজুত রাখতে হবে, খেটে রোজগার
করতেই হবে। রাতে অজানা আতঙ্কে ঘুম আসে না, অদ্ভুত রহস্যময় সময় যেন আবছায়ায় সাংকেতিক সতর্কতার বার্তা…. স্যাঁতসেঁতে বিছানায় শুয়ে দ্যুলোকের নিজেকে বড়ো অসহায় মনে হয়…..