Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

ক্রিং- ক্রিং -ক্রিং
হ‍্যালো মামি,কি করছ?
হ‍্যাঁ সোনা কাজ করছি।তূই স্কুলে যাসনি?
নাগো আজ ছুটি।
কিছু বলবি বাবা?
মা,বাবা অফিসে,তাই পড়া শেষ করে তোমায় ফোন করলাম।জানো মামি কাল মা আমায় মেরেছে।
নিশ্চয়ই দুষ্টুমি করেছিলি,এমনি এমনি কেউ মারে।
নাগো মাকে বলেছি মামি যদি আমার মা হত।কেমন সারাদিন মা -মা গন্ধ পেতাম।
কথাটা শুনে আমার হাতের মধ‍্যে থাকা কাচের গ্লাসটা ঝনঝন করে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।সঙ্গে সঙ্গেই রাতুল চিৎকার করে বলে ,মামি লাগেনিতো।পাকাবুড়োর মত বলে,দেখ বাপু আমি থাকি শিলিগুড়ি আর তুমি থাক বালিগঞ্জ,তাই কিছু হলে আমি ছুটতে পারবনা।
আমি হা -হা -হা করে হেসে কেঁদে ফেলি।মামি তুমি কাঁদছ?
নারে সোনা।জান মামি আমার মনে হল,তুমি কাঁদছ।
এই রকম দিনে কতবার ফোন করে।
আবার ক্রিং ,কি বলতে ভুলেছিস তাড়াতাড়ি বল,প্রচুর কাজ।মামি জাতিস্বর মানে কি?বলে দিলাম।তারপর জিজ্ঞেস করে সারোগেট -মা মানে কি?
এত কঠিন কথা কখনো শুনিনিরে।ভাবলাম এটার উওর ঐ পুচকে কে কিকরে দেব।তাই জানি না বলে কথাটা ঘুরিয়ে বললাম দিদি তো শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে,জানিস সময় আর কাটেনা।
রাতুল বলে তুমি আমার দশবছরের জন্মদিনে এস কিন্তু।চেষ্ঠা করবরে।
ননদ,ননদাই ও ওদের একমাত্র ছেলে রাতুলের পীড়াপীড়িতে আমি ও আমার বর শিলিগুড়ি এসেছি।মেয়ের বিয়ে হবার পর কিছুটা একাকীত্ব লাগছিল।তাছাড়া আমি তো রাতুলের ডাক ফেরাতে পারিনা।
রাতুলের তিনদিন বাদে,দশবছরের জন্মদিন ,বহুলোক নিমন্ত্রিত।ননদ অফিস নিয়ে ব‍্যস্ত,রাতুলের যত আবদার আমার কাছে।আমার কাছে শোওয়া,আমার অজান্তেই আনমনে কত ছড়া বলে ঘুম পাড়িয়ে নিজে ঘুমিয়েছি।ওর কি খিলখিল হাসি।

একটা বড় মঞ্চ ও করা হয়েছে।গান,আবৃত্তি ,তার সাথে দারুন খাবারের আয়োজন।সবাইকে নিয়ে রাতুল কেক কাটে।ও ভূমিকে অর্থাৎ নিজের মাকে কেক খাওয়াতে গিয়ে হঠাৎ দেখি আমার মুখেই কেক দেয়।এই নিয়ে সবাই হাসাহাসি শুরু করে।আমি ননদের মুখের দিকে চেয়ে থাকি।,ননদাই রাতুলকে এবার কিছু বলতে বলেন।
রাতুল মঞ্চেওঠে,একটা কবিতা বলে।তারপর মা সম্পর্কে একটা লেখা পড়তে শুরু করবার আগেই বলে ,মঞ্চে আমি মা দেরকে ডেকে নিতে চাই।সবাই বলে ওঠৈ,ঐ তোর কটা মারে।কথাটা শুনে আমি ননদের দিকে তাকাই।ননদ ভূমির মুখটা অজানা আতঙ্কে কুঁকড়ে ওঠে। ভূমি মঞ্চের দিকে এগিয়ে যেতেই রাতুল মায়ের হাতে হাত রেখে বলে,এই আমার ব‍্যস্ত মা।সারাদিন অফিস করে,একটু ও আমার সাথে খেলে না,শুধু বকে,আর পড়ো পড়ো করে।অফিস করে এত ক্লান্ত থাকে তাই রাতেও কোনদিন আমার সঙ্গে ঘুমানা।
ভূমি ছেলেকে বকা দিয়ে নামিয়ে দেয়।তখন ননদাই এসে বলেন।আমার ছেলের কথাগুলো আমি বলছি।রাতুল কাল জেনেছে ওর ও কৃষ্ণের মত দুটি মা।
রাতুলের আসল গর্ভধারিনী মা হলেন আমার শালার-স্ত্রী।ঐ যে মহিলা ,রাতুলের মামী,উনিই গর্ভধারণকারী মা,সারোগেট- মা।আমার ও ভূমির শুক্রাণু ও ডিম্বানু নিষিক্তকরণ হয় ঐ বৌদির কোখে।
উনি ননদকে সন্তানের সুখ দেবেন বলে আটত্রিশ বছর বয়সে এক সন্তানের জননী হয়েও,শুধুমাত্র মেয়ে ও বরকে জানিয়ে মা হয়েছিলেন।মাতৃত্ব লুকানো যায়না,তাই সকল আত্মীয় ও বন্ধুদের কাছে হাসির খোরাক হয়েছিলেন।এমন কি শাশুড়ি ও কটুকথা বলেছেন।এত বড় মেয়ের মা ,লাজলজ্জা নেয়।ওর দিদিই ভায়ের ল‍্যাক্টোজেন কিনে আনবে।ইত‍্যাদি ইত‍্যাদি কথা।নয় মাসের পর বাচ্চাকে ননদের হাতে তুলে দেয়।
এতটা বৌমার স্বার্থত‍্যাগ,শাশুড়ি মা সহ‍্য করতে না পেরে মারা যান।রাতুলের বাবা বলে আমরা বাচ্চাকে শিলিগুড়িতে আনি।মাতৃদুগ্ধর অভাবে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়লে,ভূমি শিলিগুড়ির থেকে বৌদিকে বলে তোমার মত বয়স্কা মহিলার কোখে জন্মেছে বলেআজ আমার বাচ্চা অসুস্থ।বৌদি ভূমিকে বলেন ,ভূমি আমারএমন কিছু বয়স হয়নি,তার জন্য বাচ্চা অসুস্থ হবে।মাতৃদুগ্ধ না পেলে ,অপুষ্ট হয়।কিন্তু আমি রাতুলের বাবা বলছি,ঐসময় বৌদি ও সন্তান বিয়োগে খুব অসুস্থ ছিলেন।বাচ্চার অপুষ্টির জন্য, একমাস বয়সে মাতৃদুগ্ধের প্রয়োজন,তাই রাতুলকে মামীর কাছে দিয়ে আসি।ঠিক মুখেভাত দিয়েই ভূমি ছিনিয়ে আনে ।বৌদির আবার খুব কষ্ট পায়।ভূমি রাহুলকে এনে আয়ামাসির কাছে দেয়।
তারপর থেকেই ও আয়ার কাছেই মানুষ।আমরা খুব ব্যস্ত,ছেলেকে সময় দিতে পারি না।
কাল হঠাৎআমার ছেলে আমায় প্রশ্ন করে মামীর কাছে শুলে মা -মা গন্ধ পাই কিন্তু মায়ের কাছে আসলে অফিস অফিস গন্ধ।আর মামির জন‍্য রাতুলের অদ্ভূত অনুভব হয় কেন?মাকে বললে জান বাবা,মা মারতে থাকে।
আমি কাল সব ঘটনা রাতুলকে বলি।রাতুল মামিকে মঞ্চে ডাকে।আমি মঞ্চে উঠে বলি,কেউ সারোগেট মা হবার আগে তিনবার ভাববেন,বাচ্চা কে দিয়ে দিলে,কী যে কষ্ট,দুধ জমে গিয়ে কি যন্ত্রণা,হয়ত অন্যের বীজ হতে পারে,কিন্তু সন্তান তো ঐ মায়ের নাড়ি ছেঁড়া ধন।যে নারী মা হয় না,সে বুঝবে কী করে।রাতুল তোর মা বাবার কাছে ভাল থাকিস।আমি তোর গর্ভধারনকারি মামী।মামী তো মায়ের মতন হয়,তাই মা -মা গন্ধ পাস।আর তোকে মায়ায় জড়াতে চাই -না।বারবার তোকে ছিনিয়ে নেবার কষ্ট আর পেতে চাই না বাবা।
ছোট্ট রাতুল এবার গান গেয়ে ওঠে—-ও তোতা পাখিরে,শিকল খুলে উড়িয়ে দেব,মা কে যদিএনে দাও।আমার মাকে যদি এনে দাও।ঘুমিয়ে ছিলাম মায়েরকোলে কখন যে মা গেছে চলে—দুই মা ছুটে জড়িয়ে বলি ,এইতো আছি আমরা ,আর গান করিস না।
সবাই খাবার খাই।বেশ আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠি।তারপর রাতের অন্ধকারে ভূমি আমার ঘরে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলে,বৌদি ক্ষমা করে দাও,আমি আমার ব‍্যবহারে সত‍্যি লজ্জিত।দেখেছ বৌদি সত‍্য
কখনোই চাপা থাকেনা।ননদাই দশবছরের ছেলেকে সারোগেট- মা সম্বন্ধে কি বুঝিয়ে ছিলেন জানা নেই তবে রাহুল আমার গায়ের গন্ধতেই মাতৃভাব খুঁজে পেয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *