‘উজাড় করে দিয়েছিলে জীবনের সমস্ত সম্বল ,
শোধিতে পারিনি কিছু ,দিয়েছি শুধুই অশ্রুজল।’
কার্তিকের এক বিনিদ্র রাতে যখন উঠেছিল
অষ্টমীর চাঁদ,
নিস্তব্ধ রাত বিদীর্ণ করে
পোড়োবাড়িটার অন্তরালে ডেকে উঠেছিল দু’টো
রাত জাগা পাখি…
মা আমার উঠোন জুড়ে খইয়ের ধান ছড়াতে ছড়াতে মিশে গিয়েছিলেন আকাশনীড়ে !
আঁধার নেমেছিল তারপর,
হৃদয়জুড়ে আঁধার !
আজ তেমনি রাতে আবার উঠেছে চাঁদ,
বাঁশবনের নিস্তব্ধতার আড়ালে উড়ে চলে নতুন কোনো রাতজাগা পাখি,
এক শীতল হাওয়া এসে ছোঁয় আমার সমস্ত শরীর,
আমি মায়ের তৈরি নকশি কাঁথা
গায়ে জড়িয়ে জানালা দিয়ে গ’লে যাওয়া
চাঁদকে দেখি,
দেখি রুপোলি আকাশ….
ম্রিয়মাণ চাঁদের আলোয় খুঁজি
হারিয়ে যাওয়া এক সহজ সরল
জীবনের অনুচ্চারিত কাব্যগাথা,
অনুচ্চারিত মিথ ,
আজ নকশি কাঁথায় জড়ানো মায়ের আঁচল, রঙিন ফুলে ফুলে গাঁথা…
আজ সারা ঘরময় মায়ের গন্ধ, দু’হাতে জড়িয়ে রেখেছে আমায়, শীতল স্পর্শে
আমার চোখে ঘুম জড়িয়ে আসে…
দেখি মা নিকানো উঠোনে হেঁটে বেড়াচ্ছেন
পরনে লাল পাড় শাড়ি…
পরিচিত পায়ের শব্দের প্রতীক্ষায়
এখনও কি মা জেগে থাকেন?
পাতাঝরা শব্দে কান পেতে
এখনও কি আগের মতই দ্বিপ্রহরে
নিস্তব্ধ রাত চৌচির করে
ভেসে ওঠে ডাক – ‘খোকা এলি?’
এখনো কি সোনালি ধানের উঠোনে
শালিকেরা করে উৎসব?
নীলকন্ঠ পাখিরা খেলা করে কৃষ্ণচূড়ার শাখায় শাখায়…
সবুজ ঘাসের দূর্বা গালিচায়,
পুকুর ঘাটে শাপলার ভিড়ে
পানকৌড়িরা খেলে যায় আগের মতই?
তারপর অষ্টমীর চাঁদ ডুবতে থাকে
বাঁশবন ডিঙিয়ে ,
ধীরে ধীরে ডুবতে থাকে
দূর সীমানার ওপারে।
এভাবেই কি মায়েরা
ধীরে ধীরে ফুরোতে থাকেন
সহস্র আলোকবর্ষ দূরে,
অষ্টমী চাঁদের মতো
আদিগন্ত নক্ষত্র রাতের আঁধারে?