Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মা উপহার || Samarpita Raha

মা উপহার || Samarpita Raha

মা উপহার

স্বামী ও স্ত্রী দুজনে চাকরি করলে খুব অসুবিধা হয়। তারমধ্যে যদি শ্বশুর-বাড়িতে কেউ না থাকে। রীতেশ বলে আমি তোমাকে চাকরি করতে বারণ করব না কারণ তুমি ইলেকট্রিকাল নিয়ে বি,টেক,এম টেক পড়েছো। দুজনের ডিগ্রি মোটামুটি এক। বরঞ্চ তোমার রেজাল্ট প্রতিটা সেমিস্টারে টপ ছিল। ছাড়তে হলে দুজনে ছাড়ব। তখন আমি বলি তাহলে খাবো কি!! দুজনে এইভাবেই প্রতিদিন কষ্ট প্রকাশ করি। আবার যে যার কাজে ছুটি।

তবে বিয়েতো প্রায় তিন বছর হলো, এরমধ্যে ভবিষ্যতটা ভাবা দরকার।এমন কপাল আমাদের দুজনের’ই বাবা, মা নেই। রাতে অনেক সময় দুজনে ‘মা ‘নিয়ে গল্প করি।রীতেশ মন দিয়ে আমার মায়ের কথা শুনত।রীতেশ যখন খুব ছোট তখন মা মারা যায়।তাই রীতেশ বিয়ের পর আমাদের বাড়িতে প্রথম এসে আমার মা’কে জড়িয়ে ধরেছিল।আর আমাকে বলেছিল তোমার মাকে ভাগ দিও। কিন্তু আমাদের দ্বিরাগমনের দিন বাবা ও মা দুজনেই সকালে বাজার করতে গিয়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় শেষ। তখন রীতেশের বাবা আমাকে মেয়ের মতোই আগলে রেখেছিল।গত বছর হঠাৎ দুপুরে খেতে বসে শ্বশুর মশায় হার্টফেল করেন।ব্যাস আমরা দুজন একদম অনাথ।

কিছু দিন বাদে রীতেশ অফিসের কাজে গিধনি যায়।সম্ভবত খরগপুরের দুটো স্টেশন পরে,ঝাড়গ্রামের আগে। আমি আমার মতো একাই অফিস করছি । বালিগঞ্জ থেকে সাঁতরাগাছি। সাঁতরাগাছি স্টেশনে নামতেই আমার মনটা অদ্ভুত খুশিতে ভরে ওঠে। কেননা রীতেশ আজ সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছে। হঠাৎ এক ভদ্রমহিলা আমাকে জিজ্ঞেস করে , তোমার কাছে একটু জল হবে মা। দেখে ভদ্রঘরের বিধবা বুড়ি মনে হচ্ছে। জলের বোতলটা খুশি খুশি দিয়ে দিই ওনাকে।আর বলি মাসীমা আপনি রেখে দিন।

ভদ্রমহিলা বললেন ছোট ছেলে প্রায় এক ঘন্টা হলো আমাকে প্ল্যাটফর্মে বসিয়ে কিছু জিনিষ কিনতে গেছে।জানো মা এবার বড় ছেলের বাড়ি থাকতে যাচ্ছি।ভাগের মা গঙ্গা পায় না।সার্টেল কর্কের মতো একবার ছোটো ছেলের বাড়ি আরেক বার বড়ো ছেলের বাড়িতে। অচেনা অজানা মাসীমার সঙ্গে #অনেক কথা হলো। আমি অফিসে গিয়ে কাজে মন দিই।তিনঘন্টা কাজ করে হনহন করে সাঁতরাগাছি স্টেশনে আসি।তখনো মাসিমা দুই ব্যাগ নিয়ে বসে। আমার বোতল থেকে টুক টুক করে জল খাচ্ছেন। হঠাৎ আমি এগিয়ে গিয়ে বলি ,সেই জল এখনো চলছে! ছেলে কোথায়!

ফোন নম্বর বলুন আমি ফোন করছি।স্পীকারে দিয়ে বললাম, আপনার মা’কে স্টেশনে বসিয়ে চলে গেলেন!মাকে নিয়ে যান। হঠাৎ ছেলে বলে উঠল আপনাকে একটি ফোন নাম্বার দিচ্ছি,আজ থেকে ওনার কাছে থাকবেন।তাই আমার দায় দায়িত্ব নেই। বড় ছেলেকে ফোন করতেই জানালো তার মা বহু পূর্বে মারা গেছেন। ভদ্রমহিলা হাউমাউ করে কেঁদে বলে বাড়ি জমি সব বিক্রি করে তিরিশ লক্ষ টাকা পান। দুই ছেলে সব টাকা ভাগাভাগি করে নিয়ে নেয়। ওদের মতে আমি দুই ছেলের কাছে বিনা পয়সায় খাবো। আমার টাকার কি কাজে লাগবে!

ভদ্রমহিলা বললেন তোমার বাড়িতে নিয়ে যাবে মা ,ঝিয়ের কাজ করব। আমি খুশি খুশি বাড়িতে নিয়ে আসি। রীতেশ খুব খুশি হয়। নতুন মাসীমা খুব আলাপী। আমরা বলি আজ থেকে মায়ের চাকরি পেলে। সারাদিন মা একাই থাকেন তাই ভয়ভয় লাগে। অফিস থেকে এসে মা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। আমি বলি আমার মা। আমি এনেছি। দুজনের অত্যাচারে মা নিজের সন্তানদের ভুলে বসেছেন। আমি আর রীতেশ মাকে নিয়ে ভালো আছি। এইভাবে দু বছর অতিবাহিত হয়।

আমাদের পুচকু তো দিদার কাছে থাকতে ভালোবাসে। সবাই জানে মাসীমা আমার মা। মাসীমা থেকে আমরা দুজনে কবে যে মা বলে ডাকি সঠিক মনে নেই। আমাদের সুখের সংসার। তবে মা লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদেন সেটা বুঝতে পারি। সন্তান মায়ের নাড়ি ছেঁড়া ধন।মা কখনো ভুলতে কি পারেন! দুই কুলাঙ্গার সন্তান মায়ের খোঁজ কোনোদিন করে নি। আমার ফোন নম্বরটা দেওয়া ছিল।যতই হোক উনিতো ওদের মা। পুলিশকে ও জানানো ছিল। কেননা কে কখন ফাঁসিয়ে দেয়। আমরা আমাদের সুখের সংসারে ” মা ও পুচকু”কে নিয়ে বেশ ভালো আছি।
“এমনি করে দিন যাক না”
যাদের মা থাকে না তারা মায়ের অভাব বোঝে, মায়ের গন্ধ খুঁজে চলে। আর যাদের মা আছে ,তারা অবহেলায় হারায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress