Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মার্কসবাদী কলমে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য || Sanjit Mandal

মার্কসবাদী কলমে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য || Sanjit Mandal

মার্কসবাদী কলমে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য

কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্য র প্রয়াণ দিবসের প্রাক্কালে প্রথমেই প্রণাম জানাই কবি সুকান্তকে,গভীর শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়, অনুরাগে আর কৃতজ্ঞতায়। আজ আমি নি:শব্দে চোখ বুজে বহু পুরাতন এক স্মৃতির পাতা খুলি। সেখানে তিনি আছেন এক ঋক সঙ্গীতে, এক অনন্য মায়ায়, হৃদয়ের প্রত্যন্ত গহীনে। আত্মনিবেদন করেই বলি, সেটা ছিল ১৯৬৮ সাল। বেহালা আর্য বিদ্যা মন্দির বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহাশয় সুমহান শ্রী যুক্ত নীলমণি মুখোপাধ্যায় এর হাত থেকে একাদশ শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকারের পুরস্কার স্বরূপ যে পুস্তকটি আমার হাতে সমর্পিত হল , সেই পুস্তকটির নাম, সুকান্ত সমগ্র। তারিখ লেখা আছে, বেহালা ১৮ই আশ্বিন,১৩৭৬, ইংরেজী ১৯৬৮ সাল। সারস্বত লাইব্রেরীর প্রকাশক শ্রী প্রশান্ত ভট্টাচার্য। দাম ১৫/- টাকা মাত্র।
বইটি সযত্নে বুকের কাছে এতোদিন তুলে রেখেছি, কেননা, আমার শিক্ষা জীবনে ওটা আমার ২য় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। প্রথমটি অবশ্যই জীবনস্মৃতি, সেটিও একই কারণে একই বিদ্যালয় থেকে দশম শ্রেণীরর জন্য পাওয়া। সে কথা থাক, কবি সুকান্তকে ভালোবাসার সেই শুরু। তখন আমার বয়স ১৫ বছর। ঘরে ফিরে প্রথমেই যে কবিতা পড়ে চমকে উঠেছিলাম তার নাম, ছাড়পত্র। ওই বয়সে কেন চমকে উঠেছিলাম তার একটু নমুনা দিই :–
ছাড়পত্র

যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাতে
তার মুখে খবর পেলুম ;
সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,
নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার
জন্মমাত্র সুতীব্র চীৎকারে।
খর্বদেহ নি:সহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত
উত্তোলিত, উদ্ভাসিত
কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।
সে ভাষা বোঝে না কেউ,
কেউ হাসে,কেউ করে মৃদু তিরস্কার।
আমি কিন্তু মনে মনে বুঝেছি সে ভাষা
পেয়েছি নতুন চিঠি আসন্ন যুগের —
পরিচয় পত্র পড়ি ভূমিষ্ঠ শিশুর
অস্পষ্ট কুয়াশা ভরা চোখে।
এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তুপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব– তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি–
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

কি মনে হল, গঙ্গাস্নান করলাম কি না?
এর পরে কবি আর কিছু না লিখলেই বা কি হোত? এই ছোট্ট ছাড়পত্রে কি নেই,এতে তো ছাড়পত্র দেওয়াই আছে, আছে সাম্যের গান, আছে কলুষমুক্ত পৃথিবী গড়ার আহ্বান, আছে মুষ্টিবদ্ধ হাতে লড়াই করে অধিকার ছিনিয়ে নেবার গান, আছে সুকুমার মনে বিপ্লবের আহ্বান। এ সবই তো সাম্যবাদীদের গান, জীবনকে নতুন করে গড়ার, নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনকে গড়ে তোলার গান। এটাই সাম্যবাদের দান, যা মার্কসবাদের অবদান। মার্কসবাদইতো শেখায়, শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান প্রতিবাদের গান, অন্যায়,অবিচার, জুলুমের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার গান। কবি সুকান্ত, প্রিয়কবি, প্রাণের কবি সুকান্ত চেয়েছিলেন গাইতে এমনিই এক গান, যে গানে মানুষের দুর্দশার হবে অবসান।
কবি গুরু সম্বন্ধে কি বলেছেন আমাদের এই কিশোর কবি?
আসুন শুনি:–
রবীন্দ্রনাথের প্রতি
এখনো আমার মনে তোমার উজ্জ্বল উপিস্থিতি,
প্রত্যেক নিভৃত ক্ষণে মত্ততা ছড়ায় যথারীতি,
এখনো তোমার গানে সহসা উদ্বেল হয়ে উঠি,
নির্ভয়ে উপেক্ষা করি জঠরের নি:শব্দ ভ্রূকুটি।
—————————————————–
যদিও রক্তাক্ত দিন,তবু দৃপ্ত তোমার সৃষ্টিকে
এখনো প্রতিষ্ঠা করি আমার মনের দিকে দিকে।

কবিগুরুর লাইন উদ্ধৃত করে তিনি বলেন
তাই আজ আমারো বিশ্বাস,
“শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস”।
তাই আমি চেয়ে দেখি প্রতিজ্ঞা প্রস্তুত ঘরে ঘরে,
দানবের সাথে আজ সংগ্রামের তরে।

কবিতা টির ব্যাখ্যা করার কোনো প্রয়োজন আছে কি?
অত্যন্ত ক্ষণজীবী কবির জন্ম ৩১শে শ্রাবণ ১৩৩৩. আর প্রয়াণ ২৯শে বৈশাখ,১৩৫৪। স্বল্পায় কবি মাত্র ২১ বছর বয়সেই দেহ রাখেন।
পেটের ভ্রূকুটি তিনি উপেক্ষা করলেও ক্ষয়রোগের মারণ ভ্রূকুটি তাকে ছাড়পত্র দেয়নি। যাদবপুরে, টি বি হাসপাতালে মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেন। মাত্র ওইটুকু বয়সেই তার কাব্যগ্রন্থ গুলো বিস্ময় জাগায়, যেমন, ছাড়পত্র, ঘুমনেই, পূর্বাভাস, গীতিগুচ্ছ, মিঠেকড়া, অভিযান, হরতাল, পত্রগুচ্ছ ইত্যাদি। তারই নামকরনে যাদবপুর এ সুকান্ত সেতুর নামকরণ হয়েছে তার স্মৃতিফলক এ কবি রয়েছেন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
তার মহাজীবন নামক কবিতাটা স্মরণ না করলে কবিতায় তার জীবনাদর্শ অধরা থেকে যাবে,
হে মহাজীবন, আর এ কাব্য নয়
এবার কঠিন কঠোর গদ্যে আনো,
পদ-লালিত্য-ঝঙ্কার মুছে যাক
গদ্যের কড়া হাতুড়িকে আজ হানো।
প্রয়োজন নেই কবিতার স্নিগ্ধতা–
কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি,
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়;
পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।।
স্বল্প পরিসরে তার সামগ্রিক কাজের পর্যালোচনা করা দুরূহ ব্যাপার।
শেষে এটুকু না বললেই নয়,যে, মার্কসবাদ তথা সাম্যবাদের নিরিখে কবি সুকান্তের অবদান বিস্ময়কর। তিনি যেন এক প্রজ্বলিত ধূমকেতু, নি:শব্দে ক্ষয়রোগে ক্ষয়ে গেলেন, রয়ে গেলেন আমাদের মনে, দৈনন্দিনতার গ্লানি টেনে, লড়াইয়ের ময়দানে তিনি এখনো জনমানসে শ্রদ্ধার আসনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress