মায়ের ভালবাসা
সকালবেলা। পাহাড়ের কোলে ছোট্টো বাড়িটা সূর্যের মিষ্টি আলোর স্নিগ্ধতায় ভরে গেছে। মোরগের ডাক আর পাখির কূজন মিলে যেন বাড়ির আসে পাসে এক মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। মায়ের মমতামাখা ডাক শোনা গেল, “রিমি, ওঠো বাবা, সকাল হয় গেছে জলখাবার রেডি।” রিমি বিছানায় আধশোয়া হয়ে চোখ মুছল। আজ তার স্কুলে বড় প্রেজেন্টেশন। মা আগেই বলে দিয়েছিলেন, “সকালের খাবার খাওয়া খুব জরুরি। খালি পেটে মন ভালো থাকবে না, আর কাজে মনোযোগ দেবে না।”
ধীরে ধীরে রিমি উঠে কলগেট পেস্ট ব্রাশ নিয়ে ডাইনিং টেবিলের দিকে গেল। টেবিলে পৌঁছেই সে দেখল, মায়ের হাতে সাজানো পুষ্টিকর জলখাবার। ম্যাট চটের উপর একটি ট্রেতে রাখা আছে খাবারগুলো। প্রথমেই চোখে পড়ল দুটো ঘি মাখানো গরম রুটি। ধোঁয়া ওঠা রুটিগুলো দেখে তার মুখে হাসি ফুটে উঠল। মায়ের তৈরি এই রুটি যেন তার কাছে মায়ের মমতার প্রতীক। রুটির পাশেই এক বাটি রাজমা তরকারি রাখা। রিমি মাকে জিজ্ঞেস করল, “মা, রাজমা কেন দিচ্ছো আজ?” কালকে তো খেইচি আর আবার আজকেও
মা হাসতে হাসতে বললেন, “রাজমা শরীরের জন্য প্রোটিন আর ফাইবার দেয়। তুই তো জানিস, প্রোটিন আমাদের শরীরের কোষ মেরামত করে, আর ফাইবার হজমশক্তি বাড়ায়। আজ তোর গুরুত্বপূর্ণ দিন, তাই শক্তি দরকার।” রিমি মুখ ধুয়ে এসে মন দিয়ে খেতে শুরু করল।
পাশেই রাখা ছিল এক বাটি তাজা সালাদ। সসা আর গাজর ছোট ছোট গোল গোল করে কাটা, তার উপর একটুখানি লেবুর রস মেশানো এক টুকরো লেবু কাটা। সালাদটা দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও তেমন মজাদার মনে হল। রিমি খেতে খেতে বলল, “মা, এই লেবু সালাদ মাখিয়ে খেতে কেমন লাগে?” মা হেসে মাথায় হাত রেখে বললেন, “লেবু শরীর ঠান্ডা রাখে আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আর তাজা সবজি শরীরের জন্য সবসময়ই ভালো।”
আর এক পাশে কিছু টুকরো পানির রাখা আছে রিমি ভাবলো এইটা তো খাবোনা
টেবিলে আরও ছিল দুটি পাকা কলা। রিমি একটি কলা তুলে নিয়ে এক কামড় দিল। মিষ্টি স্বাদে তার মন ভরে গেল। সে বলল, “মা, কলা খেতে খুব ভালো লাগে। এর মিষ্টি স্বাদে মন ভালো হয়ে যায়।” মা মাথা নেড়ে বললেন, “হ্যাঁ রে, কলা শরীরকে তাড়াতাড়ি শক্তি দেয়। তোর প্রেজেন্টেশনের আগে এটা খাওয়া খুব দরকার।”
সবশেষে মায়ের হাতে বানানো মাখানার পায়েস। দুধ, মাখানা আর চিনির মিশ্রণে তৈরি এই পায়েস খেতে রিমির দারুণ লাগে। প্রথম চামচ মুখে দিতেই তার চোখ বন্ধ হয়ে গেল। সে বলল, “মা, এই পায়েস তো স্বর্গীয় স্বাদের মতো!” মা হেসে বললেন, “তোর পছন্দ জানি বলেই তো বানালাম। মাখানা শরীরের জন্য খুব উপকারী আর দুধ তো সবসময়ই স্বাস্থ্যকর।”
রিমি খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়াল। মাকে বলল, “মা, আজ তোমার বানানো জলখাবার আমার মন আর শরীর দুটোই ভালো করে দিল।” মা মৃদু হেসে বললেন, “সকালের খাবারটা কখনো এড়িয়ে যাস না। এটা আমাদের শরীর আর মনকে কর্মক্ষম রাখে।”
মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে রিমি স্কুলের দিকে রওনা দিল। তার মনে শক্তি আর আত্মবিশ্বাস। কারণ, মায়ের ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে বানানো পুষ্টিকর জলখাবার তাকে দিন শুরু করার সেরা প্রস্তুতি দিয়েছে। পথে যেতে যেতে রিমি ভাবল, মায়ের যত্ন আর খাবারের পুষ্টি তাকে শুধু সুস্থ রাখে না, বরং তার জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ দিনকে সফল করার মঞ্চ তৈরি করে।