Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মায়াবী || Panchkari Dey » Page 83

মায়াবী || Panchkari Dey

গোপালচন্দ্র অরিন্দমকে বলিলেন, “আপনি আমারই লোক হইয়া আমারই হাতে হাতকড়ি দিলেন।”

অরিন্দম বলিলেন, “আমি আপনার নই—তাহার নই—আমি পুলিস কর্ম্মচারী। যিনি দোষী, তাঁহার সহিত বাধ্য হইয়া আমাকে এইরূপ অভদ্র ব্যবহার করিতে হয়।”

গোপালচন্দ্র চক্ষু রক্তবর্ণ করিয়া বলিলেন, “কি প্রমাণে আপনি আমাকে দোষী স্থির করিলেন?” অরিন্দম। “প্রমাণ আমার নিকটেই আছে” বলিয়া একখানি পত্র বাহির করিলেন। সেই পত্রখানি গোপালচন্দ্রের সম্মুখে ধরিয়া বলিলেন, “মহাশয়, এ পত্রখানি কা’র—চিনিতে পারেন কি?”

এই পত্রখানি অরিন্দম ফুলসাহেবের নিকটে পাইয়াছিলেন। সহসা সম্মুখে সর্প দেখিলে পথিক যেরূপ ভীতিব্যঞ্জক ভঙ্গী করিয়া পশ্চাতে হটিয়া যায়, পত্রখানি দেখিয়া গোপালচন্দ্রের অবস্থা অনেকটা সেই রকমেরই হইল। গোপালচন্দ্র গৰ্জ্জন করিয়া উঠিলেন; দৃঢ়স্বরে বলিলেন, “কখনই না-এ পত্র আমার নয়!”

অরিন্দম বলিলেন, “চুপ্ করুন, বেশী গোলমাল করিবেন না। এ পত্রখানি কি আপনার হাতের লেখা নয়? আর নীচে যে সহিটি রহিয়াছে দেখুন দেখি, এই সহিটি ঠিক আপনার কি না?”

গোপালচন্দ্র বলিলেন, “না, এ লেখা আমার হাতের নয়—এ সহিও আমার নয়।”

গোপালচন্দ্র ইতিপূর্ব্বে অরিন্দমকে যে চুক্তিনামা লিখিয়া দিয়াছিলেন, তিনি তখন সেই চুক্তিনামাখানি বাহির করিয়া বলিলেন, “এ লেখা ত আপনার? না, ইহাও আপনার লেখা নয়? দেখুন দেখি, আপনার হাতের লেখার সঙ্গে সহির সঙ্গে বেশ ক’রে সব মিলাইয়া দেখুন দেখি?”

তথাপি গোপালচন্দ্র সেইরূপভাবে বলিলেন, “জাল—জাল—এ পত্র জাল—আপনারা বড় ভয়ানক লোক!”

অরিন্দম মৃদুহাস্যে বলিলেন, “আপনার অপেক্ষা নয়।” তাহার পর গম্ভীর মুখে বলিলেন, “বিষয়ের লোভে পড়িয়া যে নিজের ভ্রাতুষ্পুত্রীকে হত্যা করিতে পারে, সে মনুষ্য-মূৰ্ত্তিতে দানব।”

যে-পত্র অবলম্বন করিয়া অরিন্দম গোপালচন্দ্রকে বন্দী করিলেন, সেই পত্র আমরা এখানে উদ্ধৃত করিলাম। পত্রখানি এইরূপ—

“কেশববাবু,

আজ দুইদিন গত হইল, তোমার কোন সংবাদ পাই নাই। সেজন্য অতিশয় উদ্বিগ্ন আছি, খুব সাবধান! যত শীঘ্র পার, রেবতী ও রোহিণীকে খুন করিবে। আমাকে খুনের কোন নিদর্শন পাঠাইলেই, আমি তখনই তোমার প্রাপ্য মিটাইয়া দিব। ইতি।

গোপালচন্দ্র বসু।”

আর দুইখানি—

“কেশববাবু,

গোরাচাঁদের মুখে যেরূপ শুনিলাম, তাহাতে বেশ বুঝা যায় তুমি আমাকে অবিশ্বাস করিতেছ। এখন আমি তোমাকে একটি পয়সা দিতে পারিব না—দিতে পারিব না কেন—দিব না—আগে কাজ শেষ হওয়া চাই। আমাকে তুমি সন্তুষ্ট করিতে পারিলে, তোমাকে যে টাকা পারিশ্রমিক স্বরূপ দিতে স্বীকৃত আছি, তাহা তৎক্ষণাৎ দিব;তা’ ছাড়া তোমাকে আরও কিছু পুরস্কার দিব। তুমি শীঘ্রই রেবতী ও রোহিণীকে খুন করিয়া যত শীঘ্র পার, গোরাচাঁদ মারফৎ প্রমাণ পাঠাইবে। তোমার এই অযথাবিলম্বে আমাকে সাতিশয় উৎকণ্ঠিত হইতে হইয়াছে। তুমি একজন পাকা কাজের লোক হয়ে কাজের কিছুই করিতে পারিতেছ না—বড়ই দুঃখের বিষয়। আশা করি, তুমি আগামী সপ্তাহের মধ্যে তোমার প্রাপ্য আমার নিকট হইতে আদায় লইবে। ইতি।

শ্রীগোপালচন্দ্ৰ বসু।”

“কেশববাবু,

তুমি অদ্যাবধি রেবতীর কিছুই করিলে না। পত্রপাঠ মাত্র রেবতীকে খুন করিবে এবং তাহার একটা প্রমাণ শীঘ্র পাঠাইবে। রোহিণীর লাস থানায় পাঠাইয়া যেমন বাহাদুরী দেখাইতে গিয়াছিলে, রেবতীর লাস লইয়া যেন সে-রকমের কোন একটা বাহাদুরী দেখাইতে যাইয়ো না। তাহাতে কোন প্রয়োজন নাই, বরং বিপদের সম্ভাবনা। রেবতীর লাস একেবারে গোপন করিয়া ফেলিবে। তুমি রোহিণীকে খুন করিয়া চুক্তির অর্দ্ধেক টাকা পাঠাইতে বলিয়াছ। রোহিণীকে খুন করায় আমার যদি কাজের অর্দ্ধেক সুবিধা হইত, তাহা হইলে তৎক্ষণাৎ তোমার অর্দ্ধেক টাকা পাঠাইতে পারিতাম। রোহিণীকে খুন করিয়া তুমি আমার কিছু সুবিধা করিতে পার নাই সুতরাং আমি তোমাকে এখন কিছুই দিব না। রোহিণীর অবর্তমানে রেবতীই সমস্ত বিষয়ের মালিক হইবে, ইহাতে রেবতীরই বরং সুবিধা হইয়াছে। আমার তাহাতে লাভ কি? রোহিণীর মৃত্যু সপ্রমাণ করিতে তুমি যে তাহার একখানা হাত পাঠাইয়াছিলে সেটা আমি আমাদের ভিতর-বাটীর বাগানে পুঁতিয়া ফেলিয়াছি। রোহিণীর ন্যায় রেবতীর একখানা হাত পাঠাইলে চলিবে না। রোহিণীর হাতে একস্থানে একটা দগ্ধ চিহ্ন ছিল বলিয়া সহজে চিনিতে পারিয়াছিলাম, রেবতীর ছিন্ন মস্তক পাঠাইবে। ইতি।

শ্রীগাপাল চন্দ্র বসু।

একান্ত যত্ন, আদর ও আগ্রহের সহিত শ্রীযুক্ত গোপালচন্দ্ৰকে আপাততঃ স্থানীয় থানায় চালান দেওয়া হইল।

অধর্ম্মের পরিণাম এইরূপই শোচনীয় হয়।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *