Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মায়াবী || Panchkari Dey » Page 78

মায়াবী || Panchkari Dey

ফুলসাহেবের যন্ত্রণাটা এই দীর্ঘকালে অত্যন্ত অসহ্য হইয়া উঠিয়াছিল; তথাপি সে নীরব, এবং তাহার মুখ চোখ লাল হইয়া গিয়াছিল।

অরিন্দম বলিলেন, “ডাক্তার সাহেব, তোমার মুক্তির বিলম্ব আছে। আমি যে কথাগুলি জিজ্ঞাসা করিব, যদি তুমি সত্য কথা না বল, তা’ হলে তোমাকে এইরূপ অবস্থায় সারারাত এখানে কাটাইতে হইবে। সিন্দুকের ভিতরে যে বালিকাটির লাস পাঠাইয়াছিলে, সে কে?”

ফুলসাহেব হাসিতে চেষ্টা করিল; কিন্তু যন্ত্রণায় তাহা একটা ক্ষণস্থায়ী বিকৃত মুখভঙ্গিতে পরিণত হইল মাত্ৰ।

ফুলসাহেব বলিল, “তুমি যে রেবতীকে আমার হাত থেকে বাহির ক’রে নিয়েছ, সেই রেবতীর ছোট বোন্—রোহিণী।”

“কে তাহাকে খুন কুরিয়াছে?”

“আমি—স্বহস্তে।”

“কেন খুন করিলে?”

“খুন করা আমার একটা নেশা।”

“নেশাটা এখন ছুটেছে কি?”

“যতক্ষণ না ফাঁসীর দড়িতে আমি ঝুল্‌ছি ততক্ষণ নয়।”

“রেবতীর কাকা কেমন লোক?”

“আমার চেয়ে ভয়ানক লোক।”

“কেন?”

“যে বিষয়ের লোভে নিজের ভ্রাতুষ্পুত্রীকে হত্যা করিতে চায়, সে কি আমার চেয়ে ভয়ানক লোক নয়? আমি ত অপর লোক—আমার তাতে কষ্ট কি?”

“তুমি রেবতীর কাকার নিকটে এই কাজের জন্য কত টাকা পারিশ্রমিক ঠিক করিয়াছিলে?”

“বিশ হাজার।”

“কত আদায় হইয়াছে?”

“কিছুই না।”

“কেন?”

“রেবতীকে খুন করিতে পারি নাই বলিয়া।”

“পার নাই কেন?”

“তুমি আমার মুখের অন্ন কাড়িয়া লইয়াছ।”

“এতদিন খুন কর নাই কেন?”

“রেবতীর রূপ দেখিয়া ভুলিয়াছিলাম—আরও একটা উদ্দ্যেশ্য ছিল;মনে করিয়াছিলাম, রেবতীকে হস্তগত ও মনের মত করিয়া গড়িয়া তুলিতে পারিলে রেবতীর কাকা ফাঁকে পড়িবে—সমস্ত বিষয়টা আমারই ভোগ-দখলে আসিবে।”

“রেবতী ও তাহার কাকার কাছে তুমি কেশববাবু নামেই পরিচিত?”

“হাঁ, আমি একটা লোক, কিন্তু কাজের খাতিরে আমার অনেকগুলি নাম আছে।”

“মোহিনী তোমার কে হয়?”

“তুমি এত খবর কোথায় পাইলে?”

“মোহিনী তোমার স্ত্রী?’

“মোহিনী আমার যম।”

“কেন এ কথা বলিতেছ?”

“নতুবা আমার এ দুৰ্দ্দশা হইবে কেন?”

“মোহিনী কিসে তোমার এ দুর্দ্দশার কারণ হইল?”

ফুলসাহেব উত্তেজিত কণ্ঠে বলিতে লাগিল, “অরিন্দম, আমার কাছে লুকাইতে চেষ্টা করিও না। তোমার মুখে মোহিনীর নাম শুনিয়া এখন আমি বেশ বুঝিতে পারিতেছি, রাক্ষসী মোহিনীই স্বহস্তে আমার এ মৃত্যুর আয়োজন করিয়াছে; নতুবা এখন ইহার ঠিক্ বিপরীত ঘটনা ঘটিত—তুমি যেমন আমাকে এই দুরবস্থায় রাখিয়া নিশ্চিন্তমনে উপরে দাঁড়াইয়া কর্তৃত্ব করিতেছ; তেমনি তোমাকে ভয়ানক মৃত্যুমুখে তুলিয়া ধরিয়া এখন আমিও তোমার উপরে কর্তৃত্ব করিতে পারিতাম। সর্ব্বনাশী মোহিনী আমার সে সাধে বাদ সাধিয়াছে। নিশ্চয় সে এখানে আসিয়া আমাদের গুপ্তমন্ত্রণার কথা তোমার নিকট প্রকাশ করিয়া দিয়াছে; অরিন্দম, আর না—তুমি আমাকে আপাততঃ এ অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দাও—প্রাণ যায়—বড় কষ্ট—”

অরি। আর একটু অপেক্ষা কর। তুমি রেবতীর কাকার সম্বন্ধে যে সকল কথা বলিলে, সকলই সত্য?

ফুল। এক বর্ণও মিথ্যা নহে। মরিতে বসিয়া মিথ্যা বলিয়া লাভ কি?

অরি। আর একটি কথা সত্য বলিবে?

ফু। কেন বলিব না?

অ। তুমি সিন্দুকে রেবতীর ভগিনীর লাস পাঠাইবার সময়ে একখানা পত্রে লিখিয়াছিলে যে, সৰ্ব্বশুদ্ধ তুমি তখন আঠারোজনকে খুন করিয়াছ, তাহার একটা তালিকা দাও দেখি?

ফু। ইহা ত আমার গৌরবের কথা। কেন মিথ্যা বলিব? যখন দেখিতেছি, আমার মৃত্যু নিশ্চিত, তখন আর এ গৌরবের কথাটা অপ্রকাশিত না রাখাই ভাল। আঠারোটা খুনের জন্য আমাকে ত আঠারোবার ফাঁসী যাইতে হইবে না। আমার বাড়ী এলাহাবাদ—আমি দরিদ্র ব্রাহ্মণ। নাম বিনোদলাল চট্টোপাধ্যায়। বোধহয়, খুনী বিনোদ চাটুয্যের কথা তুমি শুনিয়াছ। যে বিনোদ চাটুয্যেকে ধরিবার জন্য কত পুলিস-কৰ্ম্মচারী, কত সুদক্ষ গোয়েন্দা এ পৃথিবী হইতে অন্তর্হিত হইয়া গিয়াছে—আমি সেই লোক! যে মোহিনীর কথা তুমি বলিতেছ, ঐ মোহিনীর বাপ, কাকা, মামা, ভাই একরাত্রে আমার হাতে খুন হয়। সে আজ দশ বৎসরের কথা। বিধবা মোহিনীকে আমি কুলের বাহির করিয়া আনি —অবশ্যই অর্থলোভে; কারণ আমার মনের ভিতরে প্রেম, ভালবাসা, স্নেহ, মমতা এসকল বড় একটা স্থায়ী হ’তে পারে না। মোহিনীদের বাড়ী আমাদের পাড়ার ভিতরেই ছিল। মোহিনীকে বাহির করিয়া আনিলে মোহিনীর বাপ রাগে আমাদের ঘর জ্বালাইয়া দেয়। আমি সেই প্রতিশোধে মোহিনীর বাপ, কাকা, মামা, আর ভাইকে এক রাত্রে খুন করি। সেই রাত্রেই আমি মোহিনীকে নিয়ে সেখান হ’তে স’রে যাই। তাহার পর নয়জন পুলিসের লোককে খুন করি—অবশ্যই যাহারা আমার সন্ধানে দুঃসাহসিক হইয়া উঠিয়াছিল। তাহার পর আর এক মুসলমানের মেয়েকে অর্থলোভে বিবাহ করিয়া তাহার বাপকে খুন করি—তাহাকে খুন করি। কুলসমের মাকে, ভাইকে খুন করি; রেবতীর ভগিনীকে খুন করি, এই ত গেল আঠারো জন; এ ছাড়া পরে তমীজউদ্দীনকে খুন করিয়াছি, জেলখানার প্রহরীকে খুন করিয়াছি, আরও যদি কিছুদিন বাঁচিয়া থাকিতে পারিতাম,—আরও অনেক খুন করিতে পারিতাম। বিশেষতঃ তোমাকে আর যোগেন্দ্রনাথকে খুন করিবার বড় ইচ্ছা ছিল। তোমরা বাঁচিয়া থাকিতে আমার মরণে সুখ হইবে না। উঃ বড় যন্ত্রণা! অরিন্দম, প্রাণ যায়—আমার শরীর অবসন্ন হ’য়ে এসেছে—কি ভয়ানক!

অরিন্দম দেবেন্দ্রবিজয়কে ইঙ্গিত করিলেন। দেবেন্দ্রবিজয় ফুলসাহেবের হাতে ডবল হাতকড়ি ও পায়ে ডবল বেড়ি লাগাইয়া দিলেন।

দেবেন্দ্রবিজয়ের প্রতি নারী-পিশাচী জুমেলিয়ার তীব্র প্রতিহিংসার ভীষণ কাহিনী গ্রন্থকারের “মনোরমা” ও “মায়াবিনী” নামক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে।—প্রকাশক।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress