নবম পরিচ্ছেদ : গুপ্তদ্বার
অনেকক্ষণ পরে সিরাজউদ্দীন বলিলেন, “আপনি কি এইখানে ফুলসাহেবকে বাঁধিয়া রাখিয়াছিলেন? আমি ত মধ্যে এই ঘরে একবার আসিয়াছিলাম, কই, তখন এ ঘরে কাহাকেও দেখি নাই।”
অরিন্দম বলিলেন, “এই ঘরটাই ঠিক। দেখিতেছেন না, কবাট ভাঙা রহিয়াছে। এই ঘরটার মহৎ গুণ আছে, এই ঘরে ঢুকিয়া ছায়াবাজীর ন্যায় জুমেলিয়া অন্তর্হিত হইয়াছিল; এখন আবার এই এক অসম্ভব ব্যাপার দেখিতেছি।”
সিরাজ বলিলেন, “এ ঘরের একটা গুণ আছে বৈকি। আমি সেই অন্ধকারময় সুঁড়িপথ দিয়া এই ঘরেই উঠিয়াছিলাম। এ যে আমারিটা দেখিতেছেন, উহার ভিতর দিয়া একটা পথ আছে। আমি আপনাকে যে গুপ্তদ্বারের কথা বলিয়াছিলাম, সেই গুপ্তদ্বার এই আলমারির ভিতরে আছে। এই দেখুন,” এই বলিয়া আলমারিটা টানিয়া খুলিয়া ফেলিলেন এবং ভিতরকার কাঠখানায় একটু ধাক্কা দিতেই সেটা ভিতরদিকে খানিকটা সরিয়া গেল; এবং ভিতরকার সেই অন্ধকার পথ দৃষ্টিগোচর হইল। সিরাজউদ্দীন বলিলেন, “এই পথ দিয়াই জুমেলিয়া তখন আপনার নিকট হইতে অন্তর্হিত হইয়া আমার ঘরে গিয়া উঠিয়াছিল।”
অরিন্দম বলিলেন, “হ্যাঁ, এখন তা বেশ বুঝিতে পারিতেছি।”
এই বলিয়া অরিন্দম দেবেন্দ্রবিজয় ও সিরাজউদ্দীনকে সঙ্গে লইয়া সেই আলমারির গুপ্তদ্বার দিয়া ভিতরে প্রবেশ করিলেন। নিজে যে ঘরে বন্দী ছিলেন, সিরাজউদ্দীন অরিন্দমকে সেই রুদ্ধ গৃহে লইয়া গেলেন। সে- রুদ্ধ গৃহ হইতে বাহির হইবার কোন উপায় না থাকায় সেই গুপ্তপথ অবলম্বনে সকলে বাহিরে আসিলেন।
তাহার পর তিনজনে মিলিয়া, পাতি পাতি করিয়া বাড়ীখানার সমুদয় অংশ অনুসন্ধান করিয়া বেড়াইলেন। ফুলসাহেব কিংবা জুমেলিয়াকে কোথাও দেখিতে পাইলেন না।
এদিকে সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হইতে দেখিয়া, রাত্রির অন্ধকার নিবিড়তর হইয়া সমগ্র বনভূমি আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিল। এবং দূরগ্রামের কলরব ক্রমশঃ মন্দীভূত হইয়া আসিল। তখন সকলে নিরুদ্যমচিত্তে সেই বাগানবাটী ত্যাগ করিয়া বাহিরে আসিলেন।
সেদিনকার অনুসন্ধানের সেখানে সমাপ্ত। সকলে হুগলী যাত্রা করিলেন।