Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মায়াবী || Panchkari Dey » Page 58

মায়াবী || Panchkari Dey

সেই ছাদের দক্ষিণ কোণে আর একটি ছোট ঘর ছিল; রমণী যুবককে লইয়া সেই ঘরে প্রবেশ করিল। ঘরটির চারিদিক্ উত্তমরূপে বন্ধ। এক পার্শ্বে একটি পরিষ্কার ছোট শয্যা ছিল। অপর পার্শ্বে একটি আলমারি;রমণী যুবককে বসিতে বলিয়া সেই আলমারির ভিতর হইতে আপেল, ন্যাসপাতি, নারাঙ্গী, আঙ্গুর প্রভৃতি সুখাদ্য পরিপূর্ণ একখানি রৌপ্যপাত্র বাহির করিয়া দেবেন্দ্রবিজয়ের সম্মুখে ধরিল। সেই সকল আহার্য্য সামগ্রীর সুমিষ্ট গন্ধে জঠরের নিভৃত প্রদেশস্থ পরিতৃপ্ত ক্ষুধাও একবার অত্যন্ত ব্যগ্রভাবে স্বপ্নোত্থিতবৎ চকিতে মাথা নাড়া দিয়া স্পষ্টরূপে নিজের অস্তিত্ব সপ্রমাণ করে।

দেবেন্দ্রবিজয় সেসকলের কিছুই স্পর্শ করিলেন না; এবং যতদূর সম্ভব, বিনীতভাবে অস্বীকার করিলেন। দেবেন্দ্রবিজয়ের দুর্ভাগ্য কি সৌভাগ্যবশতঃ জানি না; কিন্তু রমণী সে অস্বীকার কিছুতেই স্বীকার করিল না; আঙ্গুর গুচ্ছ হইতে একটু সুপক্ক আঙ্গুর ছিঁড়িয়া, দেবেন্দ্রেবিজয়ের মুখে জোর করিয়া চাপিয়া ধরিল। দেবেন্দ্রবিজয় মুখ সরাইয়া লইলেন; কিছুতেই সম্মত হইলেন না। তখন সেই রমণী সহসা দীপ নিবাইয়া দিল, এবং দুই হস্তে দেবেন্দ্রবিজয়ের কণ্ঠদেশ বেষ্টন করিয়া বারংবার সবেগে তাঁহার মুখচুম্বন করিতে লাগিল। রমণীর এইরূপ অসম্ভব, অযথা দুর্ব্যবহারে দেবেন্দ্ৰবিজয়েব হৃদয় হইতে মস্তিষ্ক পৰ্য্যন্ত বৈদ্যুতিক চাঞ্চল্যে আলোড়িত হইয়া উঠিল। রমণীর সেই অজস্র চুম্বন বর্ষণে তিনি বিস্ময় প্রকাশেরও এক বিফল মাত্র অবসর পাইলেন না। অত্যন্ত বিস্ময় তাঁহাকে একেবারে নিঃসংজ্ঞ করিয়া দিল; কারণ একজন অপরিচিতার নিকটে এরূপ অযথা ব্যবহার সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। তাহা হইলেও তাঁহার সেই নিঃসংজ্ঞভাব অনেকক্ষণ স্থায়ী হইতে পারিল না;অকস্মাৎ আলোক-রশ্মির ন্যায়, নিদ্রাভঙ্গে জাগরণের ন্যায়, তাঁহার মনের সেই অন্ধকার অচেতন অবস্থার ভিতর সংজ্ঞার জাগ্রতভাবের সঞ্চার হইল। তিনি রমণীকে জোর করিয়া, অদূরে সরাইয়া দিয়া উঠিয়া দাঁড়াইলেন। রমণী তথাপি তাঁহার দুই হস্তে দৃঢ়রূপে ধরিয়া মৃদুকণ্ঠে বলিল, “অমাকে ক্ষমা করুন- বলুন, ক্ষমা করিলেন, নতুবা আমি আপনাকে কিছুতেই ছাড়িব না। এ হৃদয় যেমনি দুৰ্ব্বল, তেমনি অদম্য, কিছুতেই বশ মানিবার নয়।”

দেবেন্দ্রবিজয়ের বুঝিতে বাকী রহিল না, তিনি পিশাচীর হাতে পড়িয়াছেন, সহজে মুক্তি পাইবার আশা নাই। তখন দেবেন্দ্রবিজয়ের ন্যায় সচ্চরিত্র যুবকের মুখে যাহা ভাল শুনায়, তিনি তাহাই বলিলেন, “আপনি ভদ্রমহিলা, আপনি এ কি করিতেছেন? আমি অপর লোক, আত্মীয় নই, অপরিচিত আমি, আমাকে স্পর্শ করিবেন না; তাহাতে আপনার স্ত্রী-ধর্ম্মের হানি হইবে।”

রমণী দেবেন্দ্রবিজয়ের কথাগুলি মন দিয়া শুনিল। এবং তাড়াতাড়ি প্রদীপ জ্বালিয়া যথাস্থানে রাখিয়া দিল;কিন্তু তাহার কোনরূপ ভাববৈলক্ষণ্য দেখা গেল না;লজ্জিত, না সঙ্কুচিত, না অপ্রতিভ, না বিস্মৃত—কিছুই না! ক্ষণপরে বলিল, “দেবেন্দ্রবাবু, আপনি যেকালে আমাকে সহসা এতগুলি কথা শুনাইয়া দিলেন, আমি সকলের উত্তর করিতেছি। বলুন দেখি, দেবেনবাবু, আপনি যে আমাকে ভদ্রমহিলা বলিলেন, কিসে আমি ভদ্রমহিলা? যে লোক জীবনের শেষ সীমায় দাঁড়াইয়া, মরিতে বসিয়া, আমার মত একজন অযোগ্যাকে বিবাহ করিয়া তাহার ভবিষ্যৎ নারী জীবনের সকল সুখ নষ্ট করিয়া দিতে পারে, সে কিসে ভদ্রলোক? আমার এই বয়স, এই রূপ, এই যৌবন, একি একজন মরণোন্মুখ বৃদ্ধেরই যোগ্য? আর আপনি কিসে অপরিচিত? যিনি একবার সাক্ষাতেই হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করিয়া, সেখানে একটা চিরস্থায়ী আসন পাতিতে পারেন, তিনি কিসে অপরিচিত? সেই এক মুহূর্ত্তের সে পরিচয়—তেমনটি যে সহস্র বৎসরের হয় না। আর ঈশ্বরের নিকটে অপরাধী কিসে আমি? বরং ঈশ্বরই আমার নিকটে অপরাধী। তিনি আমাকে জগজ্জয়ী রূপ দিয়া, উদ্দাম যৌবন দিয়া, তাহার ভিতরে একটা চির-তৃষ্ণাতুর হৃদয় দিয়া, শেষে একটি অযোগ্য বৃদ্ধের হাতে সেই সকল সমর্পণ করিয়া নিশ্চিন্ত হইলেন, সেজন্য কি তিনি আমার নিকটে অপরাধী নহেন? যখন এ সংসারের একজন জ্ঞানবান্ বৃদ্ধের ধর্ম্ম নাই, ঈশ্বরের ধর্ম্ম নাই, তখন আমি একটা সামান্য স্ত্রীলোক বই ত নয়—তুচ্ছাদপি তুচ্ছ—তৃণাপেক্ষাও লঘু, আমার আবার ধর্ম্মাধৰ্ম্ম কি?”

রমণীর এইরূপ দুরভিসন্ধিপূর্ণ অপ্রত্যশিতপূর্ব্ব দীর্ঘ বক্তৃতা শুনিয়া দেবেন্দ্রবিজয় মনে করিলেন, তিনি পরের বিপদে মাথা দিতে আসিয়া নিজের বিপদটা অত্যন্ত গুরুতর ঘনীভূত এবং কাজটা অতিশয় অন্যায় করিয়া তুলিয়াছেন। বলিলেন, “আপনি যাই-হ’ন্ যেরূপ প্রকৃতিরই হন, আমার কাছে ওসকল কথা না বলিলেই ভাল হয়। আমাকে পথ দেখাইয়া দিন্। এমন জানিলে আমি কখনই আপনার সঙ্গে আসিতাম না।”

রমণী বলিল, “না আসিলে আমারও ভাল হইত; কে জানিত, আপনি এত অল্প সময়ের মধ্যে আমার হৃদয়ে এমন একটা সর্ব্বনেশে পরিবর্তন ঘটাইয়া দিবেন? দেবেন্দ্রবাবু, সত্য বলিতে কি, আমি মরিতে বসিয়াছি, আমাকে রক্ষা করুন। আমি আপনার পদাশ্রিতা—আমাকে এরূপ কঠিনভাবে ত্যাগ করিবেন না। তাহা হইলে আমি বাঁচিব না। আপনি আমার বিপদ্ উদ্ধারের জন্য আসিয়া, এখন আমাকে সহস্রটা বিপদের মুখে তুলিয়া দিয়াছেন। আপনি এরূপ নিৰ্দ্দয় জানিতাম না।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress