Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মায়াবী || Panchkari Dey » Page 57

মায়াবী || Panchkari Dey

দেবেন্দ্রবিজয়কে সঙ্গে লইয়া রমণী সেই সুদীর্ঘ বারান্দার শেষ সীমা পর্যন্ত পশ্চিমদিকে অগ্রসর হইল। সেখানে একটি ঘরে চাবি বন্ধ ছিল। রমণীর নিকটে চাবি থাকায়, তখনই খুলিয়া ফেলিল উভয়ে সেই ঘরের ভিতরে প্রবেশ করিল। এবং রমণী ভিতর হইতে দ্বার অর্গালাব্ধ করিয়া দিল। সেখানে উপরে উঠিবার একটা কাঠের সিঁড়ি ছিল, সেই সিঁড়ি দিয়া উভয়ে উপরে উঠিলেন। সেখানে মুক্ত প্রকৃতির এক অপূৰ্ব্ব শোভা! জ্যোৎস্নালোকপূর্ণ উন্মুক্ত ছাদ অনেকদূর অবধি বিস্তৃত। সেখানে আসিয়া দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “আমাকে কোথায় লইয়া যাইতেছেন?”

রমণী মৃদু হাসিয়া, দেবেন্দ্রবিজয়ের প্রতি একটা অত্যন্ত তীব্র কটাক্ষপাত করিয়া বলিল, “আপনি এত ভীত হইতেছেন কেন? আমি কি আপনাকে খাইয়া ফেলিব? আমি স্ত্রীলোক, আপনি পুরুষ—আপনার সে ভয় নাই, আসুন।”

দেবেন্দ্রবিজয় তাহার প্রশ্নের এরূপ অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপূর্ব্ব সদুত্তর পাইয়া নিরুত্তরে রমণীর সহিত চলিতে লাগিলেন। তাঁহার মস্তিষ্ক তখন অসম্ভবরূপে বিচলিত হইয়া উঠিয়াছিল, কাজেই কিছুই ঠিক করিয়া উঠিতে পারিতেছিলেন না। এসকলই যেন একটা অভাবনীয় ও অনপেক্ষিত স্বপ্নের মত তাঁহার মনোহর বোধ হইতেছিল—হইবারই কথা। সেই নির্জ্জন নদীতীরে, প্রস্ফুটচন্দ্রালোকে, মধুর জলকলতানে, সহসা যে মোহ একবার মুহূর্ত্তের মধ্যে যুবকের হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশাধিকার পাইয়া তাহার বুকের মধ্যে যেরূপ স্ফীত হইয়া উঠিয়াছে, তাহা এখন তেমনই শীঘ্র অপনীত হইবার নহে।

কিছুদূর অগ্রসর হইয়া রমণী বলিল, “আপনি অপরিচিত, রূপবান্ যুবক, বিশেষতঃ পরপুরুষ; আর আমি স্ত্রীলোক, আমারও রূপ আছে, যৌবন আছে বিশেষতঃ পরস্ত্রী; এরূপ সময়ে কেহ যদি আমাদিগকে এই রাত্রে নির্জ্জন ছাদের উপরে দেখিতে পায়, সে কি মনে করে, বলুন দেখি?”

এ কি প্রশ্ন? ইহার কি উত্তর করিবেন, ভাবিয়া না পাইয়া দেবেন্দ্রবিজয় মনে মনে অস্থির হইতে লাগিলেন। বুঝিলেন, কুলস্ত্রী বোধে তিনি যাহার বিপদে মাথা দিয়াছিলেন, সে অসচ্চরিত্রা পিশাচী অপেক্ষাও ভযঙ্করী। রমণী দেবেন্দ্রবিজয়ের মনোভাব অনেকটা বুঝিতে পারিয়া, সহসা নিজেকে সাম্‌লাইয়া লইয়া অন্যসুরে বলিল, “আপনি হয়ত আমার এরূপ ব্যবহারে আমাকে মনে মনে দোষারোপ করিতেছেন। আশ্চর্য্য নয়, ইহা আপনার দোষ নয়—নারীজাতিরই হৃদয় বড় দুৰ্ব্বল। সামান্য আঘাতে ভাঙিয়া পড়িতে চায়—আপনার কর্ত্তব্য ঠিক রাখিতে পারে না। যাই হ’ক্ আপনি আমাকে অত্যন্ত নির্লজ্জ ভাবিতেছেন, সন্দেহ নাই। কি করিব, আমার এইরূপ বাচালতার জন্য আমি আজন্মকাল নিন্দাভোগ করিয়া অসিতেছি। বাল্যকাল হইতে এখনও পর্য্যন্ত চেষ্টা করিয়া আমার এ নিন্দনীয় স্বভাবের হস্ত হইতে আমি কিছুতেই মুক্তি পাইলাম না। এজন্য আপনি আমাকে দোষী ভাবিবেন না।”

তখন সরলচিত্ত দেবেন্দ্রবিজয়ের মনের উপর হইতে সহসা একখানা মেঘ কাটিয়া গেল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress