Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মানুষ || Manisha Palmal

মানুষ || Manisha Palmal

তেলেঙ্গানা (অন্ধ) উড়িষ্যার সীমান্তবর্তী এক প্রান্তিক গ্রাম। কাহিনী সূত্রপাত এখানে। এই গ্রামের সম্পন্ন জোতদার হলো লিঙ্গম রা। গ্রামের বেশিরভাগ কৃষিজমি ওদেরই। ভীষণ প্রতিপত্তিশালী। গ্রামের প্রান্তে মা ভদ্রকালী মন্দির ওদেরই। কালীভক্ত পরিবার। বর্তমান মালিকের একমাত্র ছেলে অকাল মৃত। তার দুটি নাবালক ছেলে এই ভূসম্পত্তির অধিকারী। ছেলে দুটির বয়স 12 ও10। বড় ছেলে টি এখন থেকেই প্রভুত্ব করতে শুরু করেছে। তার শাসনের পাত্র তার ছোটভাইটিও। ছোট ছেলেটি ভীষণ নিরীহ। দাদার অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করে। বড়ছেলেটির নাম রমেশ ছোট ছেলে আশুতোষ। আশুতোষ এর শান্ত দুচোখে অদ্ভুত মায়া জড়ানো। ও সব সময় পশুপাখি গাছপালা এদের সাথে থাকতে ভালোবাসে। ও যেন প্রকৃতির পশুপাখি গাছপালার ভাষা বুঝতে পারে। গাছপালা ও যেন ওর সাথে গল্প করতে ভালোবাসে। বেশ ছিল দুই ভাই—– দুই ভিন্ন জগতের বাসিন্দা! বয়সন্ধিকালে পৌঁছে আশুতোষ এর মধ্যে অন্যরকম একটা পরিবর্তন দেখা দিতে শুরু করলো! এমনিতেই একটু নিরীহ তার ওপরে এই মেয়েলী হাবভাব— বাড়িতে শুরু হল তুমুল অশান্তি! বিশেষ করে দাদা রমেশ ওর উপর অত্যাচার আরম্ভ করলো। ওর পুরুষ শরীরে মেয়েলী মন ওকে সাধারণের থেকে দূরে সরিয়ে দিতে লাগলো। ওদের কালী মন্দিরের পুরোহিত ই একমাত্র ওকে বুঝতে পারত। উনি আশুতোষের দাদুকে বোঝালেন এই বৃহন্নলা বা কিন্নররা ও মানুষ। এদের সাথে দুর্ব্যবহার না করে ওকে সবার সাথে সহজ ভাবে মিশতে দিতে হবে। আশুর মাকে ভীষণ অসম্মান ও অত্যাচারের সম্মুখীন হতে হল। বেচারা বিধবা শেষে মুক্তি পেলেন আত্মহত্যা করে। আশু তখন ক্লাস সেভেন এর ছাত্র। এবার আশুর পালা । কালী মন্দিরের পুরোহিত দাদু ওকে নিয়ে চলে এলেন ওড়িশার চিলকা তে। ওখানেই কালী জাই মন্দিরের এক কালী সাধক ওকে দীক্ষা দিলেন। শুরু হলো আশুর এক অন্য জীবন। কালী জাই দ্বীপেই ওই সাধকের আস্তানা— মন্দিরের পেছনেই! দিন শুরু হতো মন্দিরের পূজার্চনা দিয়ে। বেলা বাড়লে পর্যটকরা আসতো। মন্দির দ্বীপ ,দ্বীপ এর চিড়িয়াখানায় লোকজন গমগম করত! রংবেরঙের নৌকার ভিড়ে সারাদ্বীপ প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠতো। আশুর মতো আরো দুইজনশিষ্য আছে গুরুদেবের। এদের তিনজনকে একসাথে লেখাপড়া শুরু করালেন উনি। আশুতো ক্লাস সেভেনে পডতো। এরা একসাথে প্রাইভেটে দশম শ্রেণীর পরীক্ষা দেবে। আশুর বাকি দুই সঙ্গী রবি ও মোহন হাতের কাজে পারদর্শী। আশুতোষ এরকম কিছু পারেনা। তবে ওর নাচ খুব ভালো লাগে। গুরুদেব একজন” গুটিপুয়া “নাচের গুরুর কাছে আশুকে নিয়ে গেলেন। এই লোক নৃত্যের ছেলেরা মেয়ে সেজে নাচ করে। আশুযেন নিজেকে খুঁজে পেল এই নাচের মাঝে।
সারাদিনের কাজের শেষে যখন কালিজা দ্বীপ নৈঃশব্দ্যের চাদরে ঢেকে ফেলে নিজেকে, সামুদ্রিক পাখিদের দিনশেষের কলকাকলি আস্তে আস্তে কমতে থাকে—- মন্দির প্রাঙ্গণে বেজে চলে নুপুরের সুরেলা নিক্কন। এক ভক্তের নিবেদন তার ইষ্টের উদ্দেশ্যে। নূত্য নৈবেদ্যে সে নিজেকে ভগবানের পায়ে সমর্থন করে।
কালচক্র গড়িয়ে চলে দন্ডপলের হিসেবে কেটে গেছে প্রায় কুড়ি বছর। “গুরু আশুতোষ” আজ উড়িষ্যা সংস্কৃতি জগতের পরিচিত নাম! গুটিপুয়ার মতো আরো লুপ্তপ্রায় লোক নৃত্য শৈলী কে আবার ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের তরফে আজ তাঁকে সম্বর্ধনা জানানো হবে কোণার্ক উৎসবের মঞ্চে।
আশুতোষ এর দুচোখের উপচে পড়া অশ্রুতে ধুয়ে যায় তার এতদিনকার অপমানের কষ্ট। আজ মানুষের শিল্পী র স্বীকৃতি তাকে পিছুটেনে নিয়ে যাচ্ছে তেলেঙ্গানা সেই প্রান্তিক গ্রামে। বারবার মায়ের মুখটা ভেসে উঠছে চোখের সামনে—– তার অভাগিনী মা—- তার জন্মের কলঙ্কমোচনে যাকে আত্মহুতি দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।
আকাশের দিকে মুখ তুলে আশু বলে—” দেখো তোমার কিন্নর সন্তান আছে শিল্পীর মর্যাদা পেয়েছে। পেয়েছে মানুষের সম্মান। তুমি কোন অন্যায় করোনি মা আমাকে জন্ম দিয়ে। ভগবানের দরবারে সব মানুষই সমান—- নারী-পুরুষ কিন্নর– কেউই আলাদা নয়– সবাই ভগবানের সন্তান- মানুষ!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress