Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

মন্দাকিনী কেমন নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। কী করবে ঠিক বুঝতে পারছে না। সে ভারি চঞ্চল হয়ে পড়ছে। পা টিপে টিপে কোথাও যেতে না পারলে শরীরের জ্বালা মিটবে না। চোখ মুখ জ্বলছে। শরীরে এটা যে কী থাকে। কিছুতেই মরে না। স্বামীর মুখ সে ক’বার ধ্যানে দেখার চেষ্টা করল। যদিও কিছু ব্যভিচার ছিল মানুষটার, তবু যখন কাছে আসত ঠিক থাকতে পারত না। আসলে এই শরীর তাকে খুব সহজেই সহনশীল করে রেখেছিল। রাতে ফিরে মানুষটা অপরাধী মুখে তাকালেই কেমন জল হয়ে যেত সব রাগ! অভিমানটা শরীরে বেশিক্ষণ পুষে রাখতে পারত না। অথবা জ্বালা বলা যেতে পারে—মন্দাকিনীর যে চরম আকাঙ্ক্ষা বীজ বীজ করছে! কতক্ষণে শরীর জুড়াবে। সে দুটো একটা অভিমানের কথা বলেই হাত পা ছড়িয়ে পড়ে থাকত। মানুষটা তখন তাকে লুটেপুটে খেলে সে পরম শান্তি বোধ করত এবং ঘুমিয়ে পড়ত।

এখন তেমনি জ্বলছে। স্বামীর মৃত্যুর পর; কিছুদিন শরীরটা বেশ ঠান্ডা ছিল। শোকতাপ বোধহয় কিছুদিনের জন্য শরীর ঠান্ডা করে রাখতে পারে। কিন্তু প্রকৃতি কত উদার—সে কোনো শোকতাপই গায়ে জড়িয়ে থাকতে দেয় না। ক্রমে কেমন সব ফিকে হয়ে যায়।

ভানু আগেও আসত এ—বাড়িতে। তখন থেকেই ক্ষণে ক্ষণে মনে হত একটা প্রতিশোধ নেওয়া যেতে পারে সহজেই। কারণ সে সহজেই জানে কী আকর্ষণ এ—বাড়িতে ভানুর, কেন সময় পেলেই চলে আসে, মানুষটাকে সে দাদা দাদা করত। মানুষটা খুব একটা গ্রাহ্য করত না। কতটা আর লুটে খাবে। কিংবা এমনও হতে পারে, আমি যখন আর একটা লাট্টু ঘোরাচ্ছি, তখন এই পুরনো লাট্টু তোমাকে দিয়ে দিলাম বাপু। ইচ্ছে করলে ঘোরাতে পারো।

এবং তখনই মনে হত মন্দাকিনীর তবু মানুষের শেষ পর্যন্ত কিছু একটা থেকে যায়, ইচ্ছে হলেই হাত পাতা যায় না! কী যেন সংকোচ থাকে। অথবা শালীনতাবোধ মন্দাকিনীকে এতদিন পর্যন্ত পবিত্র রাখতে সক্ষম হয়েছে। পবিত্র কথাটা তার কাছে এ সময় খুবই হাস্যকর। তবু শ্বশুরমশাইর প্রতি এটা একটা কর্তব্য, অথবা শৈশবের কিছু ধর্মাধর্ম, যার ভেতর সে বড় হয়ে উঠেছিল, যার থেকে বের হয়ে আসা খুব সহজ নয় বলে মনে হয়েছে, এই বেলা তার মনে হল, সব ভেঙে তছনছ করে দেওয়া যেতে পারে।

সে পর্দা তুলে দেখল একবার। ভানু পাশ ফিরে শুয়ে আছে। ঘুমিয়ে আছে কী না বোঝা যাচ্ছে না। কেউ কী এমন একটা নিরিবিলি সুযোগ উপেক্ষা করে বসে থাকতে পারে! আর যে—দিনই সে ভানুর সঙ্গে রাত করে ফিরেছে, কিছু কোথাও খেয়ে যখন ফিরছে, সবসময় একধরনের সাধাসিধে কথা। অধিক কিছু না। অথচ কত কিছু সহজেই হতে পারত।

মন্দাকিনী কিছুতেই মুখ খুলতে পারছিল না। আর ভানু নিজে থেকে কোনো কথা তুলতে পারছিল না। কোনো অঘটনের আশায় দু’জনেই বসে আছে। যে ভাবেই হোক সহসা সেটা ঘটে যাবে! এমন সুযোগ ভানু অবহেলায় নষ্ট করে দিচ্ছে কেন, ভানু ভানু! সে চিৎকার করে উঠত প্রায়, তখনই প্রিয়নাথের নাকের শব্দ আরও প্রবল, ভানু তুমি কী করছ, কেউ নেই। তুমি কী ঘুমোচ্ছ! মন্দাকিনীর শরীর কেমন অবশ হয়ে আসছিল। সে দ্রুত পায়ে পর্দার ভেতর ঢুকে আরও সতর্ক হয়ে গেল। ভানু পাশ ফিরে তেমনি শুয়ে আছে। একটা কাপুরুষ! সামান্য সাহসটুকু নেই। একজন মেয়ের পক্ষে এটা খুবই অশোভন। নীচে মনে হল কেউ সিঁড়ি ভাঙছে। সে ফের দরজায় মুখ বাড়াল। না মনের ভুল। এবং নিজেকে ভারি বেহায়া মনে হচ্ছে। সে তো চেয়েছিল একজন পুরুষমানুষ যেমন বেড়ালের মতো ওৎ পেতে থাকে, ভানুও মাছ খাবার লোভে তেমনি ওৎ পেতে থাকবে। সময় এবং সুযোগের অপেক্ষা। তারপর বেশ আরামে আহার।

আহারের কথা মনে হতেই মন্দাকিনীর প্রবল জ্বর এসে গেল শরীরে। চোখ জ্বালা করছে। তবু অশোভন, খুবই অশোভন, কিন্তু শরীর ক্রমে নিরালম্ব হতে থাকলে সমাজ সংস্কার বিনষ্ট হয়ে যায়। সে ডাকল, ভানুবাবু ঘুমোলে!

ভানু বলল, ওম।

ঘুমোলে!

না—আ!

পুরুষমানুষের অত ঘুম ভালো না।

মন্দাকিনী আর কী বলবে! বসবে পাশে! মানুষটা কী! উঠতে পারছে না। সে আর কতদূর এগোবে।

মন্দাকিনী বলল, তুমি এবারে বিয়ে করো ভানুবাবু।

করব ভাবছি। বাবা ঠিকুজি কোষ্ঠী মেলাচ্ছে।

করব নয়। করে ফেলো। নিশ্চিত হই।

তোমার কী চিন্তা।

পুরুষমানুষ বিয়ে না করে থাকে কী করে!

করব।

না, করে ফেলো।

ভানু এবার মন্দাকিনীর দিকে চোখ তুলে তাকাল। তাকাতে পারছে না। মন্দাকিনীর চোখের পাতা জড়িয়ে আসছে, এবং কেমন অভিমানীর মতো জানালায় ঠেস দিকে দাঁড়িয়ে আছে। ভানু উঠে বসল। মাথাটা তার ধরেছে। সে ঠিক করতে পারছে না কী করবে! একবার প্রথম দিকে ভানুর একটু হাত লাগতে মন্দাকিনীর প্রবল ধমক খেয়েছিল। মন্দাকিনীর হয়তো তা মনে নেই। কিন্তু বেচারা পুরুষ মানুষ সেই যে মনে করে বসে আছে আর এগোতে পারছে না। কোনো ভুল বোঝাবুঝি হলে আবার ঠিক প্রিয়নাথকাকার কানে উঠাবে। এখানে আসাই বন্ধ হয়ে যাবে। কী যে আছে এ বাড়িতে! কাকলি এবং মন্দাকিনী দুজনেই তাকে ভারি বশে রেখেছে। বরং কাকলীর সঙ্গে সম্পর্কটা বেশ খোলাখুলি। সে যদিও খুব একটা বাড়াবাড়ি করতে পারে না, কারণ সেই ধার্মিক পিতা ভুবনবাবুর মুখ মাঝে মাঝে অসহায় করে রাখে তাকে। লম্পট নিজে হলে ক্ষতি নেই, কিন্তু লম্পটের ছেলে লম্পট হয়, এবং ভুবনবাবু নামক ব্যক্তিটি তবে হয়তো আত্মহত্যা করেই বসবেন। মুহূর্তে ভানুর মগজের ভেতর এতগুলো চিন্তা ভাবনা করাত চালাচ্ছিল। তার সামনে সেই লাস্যময়ী নারী, শুধু বুকের কাপড় আলগা করে নেই, যেন দু ফুট মতো জায়গায় পা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে মন্দাকিনী! এবারেও যদি বেড়াল লাফ না দেয় তবে মন্দাকিনী আর কতটুকু সাহায্য করতে পারে। মন্দাকিনীর এ হেন দৃশ্য দেখে ভানুবাবুর চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। এবং তখন মন্দাকিনী সরল বালিকার মতো ভানুর হাত ধরে কাছে টেনে নিল। লেপ্টে যেতে গিয়ে মনে হল ও—ঘরে প্রিয়নাথ নামক ব্যক্তিটি হাই তুলছে। মা তারা করুণাময়ী। বউমা ও বউমা। জল দাও ওষুধ খাব।

দৌড়ে ছুটে মন্দাকিনী কাপড়চোপড় সামলে—যাই বাবা, আপনিতো খুব যা হোক ঘুমোলেন। কাকলি কখন গেছে ফেরার নাম নেই, ও ভানুবাবু ওঠো, বেলা যেতে দেরি নেই—সহসা এত সব কথা বলে মন্দাকিনী চোখে মুখে বাথরুমে ঢুকে জল দিতে লাগল। ভানুবাবু ফের সটান শুয়ে পড়েছে। এবং যত জোরে সম্ভব নাক ডাকাবার চেষ্টা করছে!

প্রিয়নাথই শেষ পর্যন্ত উঠে এসে ভানুবাবুর ঘুম ভাঙালেন। কী হে খুব যে ঘুম। তা হবে। এই বয়সে সব কিছুই বেশি বেশি থাকে। ঘুম, আহার, তারপর কী বলতে গিয়ে থেমে গেলেন প্রিয়নাথ কাকা। প্রিয়নাথকাকা কি শেষ কথাটা মৈথুন ভেবেছিলেন! সে উঠে পড়তেই মন্দাকিনী এক কাপ চা রেখে গেল। মুচকি হেসে গেলে বোঝা গেল দু’জনের ভেতর শেষ পর্যন্ত যখন জানাজানি হয়ে গেছে তখন সময় বুঝে আহারে বসে গেলেই হবে।

প্রিয়নাথকাকা তাঁর ঘর থেকে হাঁকলেন, হবে নাকি আর এক হাত।

ভানুবাবুর মন মেজাজ কেমন তিরিক্ষি হয়ে গেছে। এবং ভেতরে অসহ্য কষ্ট—বোধ, যেন যেটা হবার কথা ছিল, সেটা শেষ পর্যন্ত এই স্বার্থপর লোকটার জন্য হল না, তার সঙ্গে খেলতে তার আদপেই আর ইচ্ছে নেই। কিন্তু না খেললে সারাটাক্ষণ থাকে কী করে! এই একটা বড় রকমের সুবিধা প্রিয়নাথকাকা এ বাড়িতে আসার জন্য করে রেখেছে। হেলায় হারানো ঠিক না। সে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে প্রিয়নাথকাকার ঘরে ঢুকে গেল। প্রিয়নাথ একবার মুখ তুলেও দেখল না। হাত তুলে ইশারায় বসতে বলল। তারপর কী ভেবে বললেন, বেশিক্ষণ খেলব না।

এবং কাকলী ফিরে এলেই খেলা বন্ধ করে উঠে পড়লেন। বললেন একটু ঘুরে আসি।

প্রিয়নাথকাকার এই ব্যবহারটা ভানু বুঝতে পারে। কাকলী ওর মায়ের প্রহরী। কিন্তু প্রিয়নাথকাকা কী জানে আজই মন্দাকিনী বউদি তাকে সাপটে ধরেছিল! এতদিন সে যেটা চাইছিল, কারণ ভানু বুঝতে পারে, তার ভেতর ভুবনবাবুর কাপুরুষতা বেশ বর্তে গেছে। কাপুরুষ না হলে এক স্ত্রীতে কেউ বেশিদিন মত্ত থাকতে পারে না। সব সময় মুখে সাধু সাধু ভাব, যেন গোল্লায় যাচ্ছে সব, এবং আহাম্মুকির এক শেষ। ভানু এ কারণেই নিজে সাহস করে সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। সে যুবতীদের সঙ্গে খুব একটা মেলামেশাও করেনি। তাছাড়া মেয়েদের চরিত্র সে ঠিক বোঝেও না। অনেক সুযোগ এ বাড়িতে সে আজ বুঝতে পারল, হেলায় হারিয়েছে। আজই স্পষ্ট বুঝতে পারল, সে যে লোভে এ বাড়িতে আসে মন্দাকিনী বউদির সেই লোভ। কেবল দুজনেই সাহসের অভাবে পরপর এতগুলো দিন অকারণে কাটিয়ে দিয়েছে।

প্রিয়নাথকাকা এখন ধর্মসভায় বসে ঈশ্বর সম্পর্কিত ভাবনায় ডুবে আছেন, না বাড়িতে বউমা কাকলী ভানুবাবু তিনজন কে কী করছে তার একটা ছায়াছবি চোখে তাঁর ভাসছে।

মন্দাকিনী তাড়া লাগাচ্ছিল, কাকলী পড়তে বসগে। ভানুবাবু এঘরে এসো। তুমি থাকলে ও পড়তে চায় না।

ভানু বলল, এই কাকলী পড়তে বোস। তোর মা বকছে আমাকে।

তুমি যাবে না। গেলে পড়ব না বলছি।

বউদি তোমার মেয়ে পড়বে না বলছে।

চুপ করো ভানুকাকা। সে মুখে দুহাত চাপা দিল ভানুর। তারপর কী ভেবে কেমন অভিমানের গলায় বলল, আচ্ছা পরে দেখবে। বলেই সে টেবিলে চলে গেল। ভানু দরজা পার হয়ে মন্দাকিনীর ঘরে ঢোকার মুখে বলল, যাই। খুব চিন্তা করবে।

মাসিমা জানে তুমি কোথায় আছো। মায়েরা সব বোঝে।

ভানু বলল, তবু এখন যাওয়া উচিত।

বাবা এসে খোঁজাখুঁজি করবেন।

বলবে চলে গেছি।

বোস না!

বসে কী হবে?

মন্দাকিনী মুচকি হাসতে পারল না এবার। ভেতরের দাহ আগুনের ফুলকির মতো দু চোখে ভেসে উঠল। কী যে করে! কিছু করতে না পারলে এই মহামূল্য সময় তার হাত ছাড়া হয়ে যাবে। খুব বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছিল মন্দাকিনী। যেন এক্ষুনি পারলে কাকলীকে নীচের তলায় অথবা অন্য কোথাও ছলছুতোয় পাঠিয়ে এই সর্বনাশা আগুনের প্রজ্বলন থেকে রেহাই পায়। পবিত্র আধারে প্রবিষ্ট হতে না পারলে কারও আজ রেহাই নেই। সে দুবার উঁকি দিল। এবং কতটা বেপরোয়া হলে সে ঝাঁপিয়ে টেনেহিঁচড়ে ভানুবাবুকে তুলে নিতে পারে, এবং কাকলী যে ও ঘরে পড়ছে, মাথায় তাও কোনো বিদঘুটে শব্দ তুলছে না, কেমন একটা মাতাল রমণীর মতো দরজার পাশে আড়াল তৈরি করে ডুবে গেল তারা। কোনো পরোয়া নেই। প্রায় পাগলিনীর মতো সাপটে ধরেছে ভানুবাবুকে। এবং অতীব পবিত্রতা বিরাজ করছিল চোখে—মুখে। পৃথিবীর সবকিছু এখন এই নারী এবং পুরুষের কাছে অকিঞ্চিৎকর।

ও—ঘরে কাকলীর সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। বাথরুমে যাবার সময় মন্দাকিনী কেমন সতর্ক। এবং অপরাধীর মতো চোখ তুলে একবার দেখতেই বুকটা হিম হয়ে গেল। জানালায় চোখ কাকলীর। কেমন উদাস চোখমুখ। কাকলী কি…….আর ভাবতে পারছিল না। যেন এতক্ষণে চৈতন্য হয়েছে, কাকলী বাড়িতেই ছিল। কাকলী যদি……আর এসব মনে হতেই ভানুবাবুর উপর কেন যে মনটা ভীষণ বিষিয়ে গেল। সে হাতে মুখে জল দিয়ে বাইরে বের হয়ে দেখল, ভানুবাবু চলে যাচ্ছে। যাবার সময় কাকলীর সঙ্গে কোনো কথা বলে গেল না। কতকাল থেকে এই বাড়িটা ধ্রুবতারার মতো কেবল ভানুর মগজের ভিতর দপ দপ করছিল। সব চেনাশুনা হয়ে গেলে বুঝি রহস্য মরে যায়। মন্দাকিনী সিঁড়ি ধরে নিচে নেমে ডাকল, ভানুবাবু।

ভানুবাবু ভালোভাবে তাকাতে পারছে না।

তুমি চলে যাচ্ছ?

ভানু চোখ না তুলেই বলল, হুঁ।

কবে আসছ।

আসব ঠিক।

কাকলীর সঙ্গে কথা বলে গেলে না।

ভয় লাগছে।

কীসের ভয়?

ঠিক জানি না।

এসো ওপরে এসো বসো! এখন চলে গেলে ভালো দেখাবে না। উনি আসুন।

ভানু কেমন বাধ্য ছেলের মতো ওপরে উঠে এল। মন্দাকিনীর বুকটা সেই যে কেমন হিম হয়ে আছে আর স্বাভাবিক হচ্ছে না। সে করিডোর দিয়ে যেতে যেতে বলল, খুকু দেখ ভানুকাকা চলে যাচ্ছিল।

কাকলীকে কখনও আদরের গলায় ডাকলে মন্দাকিনী খুকু বলে ডাকে। মন্দাকিনী দেখল কাকলী কিছু বলছে না। সে ভানুর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপল। ভানুবাবু আর কী করে, সে কাকলীর ঘরে ঢুকে বলল, কিরে পড়ছিস না।

কাকলী এবার চোখ তুলে তাকাল। কিছু বলল না।

মন্দাকিনী ওপাশ থেকে বলল, তোর অঙ্ক কটা দেখে রাখ না।

কাকলী অঙ্কের খাতা বার করে ছুড়ে দিল ভানুবাবুর দিকে।

কত প্রশ্নমালা?

কাকলী উঠে গিয়ে দেখাল সব।

ভানুবাবু অন্য সময় হলে বলতে পারত। কাকলীর মন খারাপ আরও কতবার হয়েছে। ভানুবাবু তার স্বাভাবিক কথাবার্তায় ওকে সহজেই উৎফুল্ল করে তুলতে পারত। এবং কী কী কথা বললে, কাকলীর মেজাজ আবার স্বাভাবিক হবে সে জানে। অথচ কী একটা সংকোচ ভিতরে রয়ে গেছে। কাকলীর সঙ্গে সে খুব স্বাভাবিক কথা বলতে পারছে না। অঙ্ক বই—এর পাতা উলটে যাচ্ছে কেবল।

কাকলীই বলল, তুমি ভানুকাকা ভালো না।

কেমন চমকে গেল ভানু।

তুমি মার সঙ্গে আর মিশবে না।

ভানুর, এতটুকু মেয়ের এমন স্পষ্ট কথা শুনে, কান লাল হয়ে উঠল। এই মুহূর্তে আর বসতে ইচ্ছে করছে না।

কাকলী বলল, তুমি আমাকে ভালোবাসতে পারতে!

এত সহজ করে এমন কথা মেয়েটা কী করে বলতে পারল!

কিছু বলছ না কেন?

ভালোবাসব।

কবে!

দেখি কবে পারি।

কথা দিতে হবে।

ভানু বলল, অঙ্ক করো। তোমার মা শুনতে পাবে!

তোমরা এতক্ষণ ও—ঘরে কী করছিলে!

কই কিছুই না তো।

সত্যি বলছ!

সত্যি।

তিন সত্যি।

তারপর ভানু কেমন মরিয়া হয়ে বলল, কী করছিলাম উঠে গিয়ে দেখলেই পারতে।

আমার সাহস হয়নি। একবার উঠেও কী ভেবে বসে পড়লাম। তোমরা ছোট হয়ে গেলে আমার কিছুই থাকবে না ভানুকাকা। বলে ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলল কাকলী।

ভারি বোকা মেয়েতো! বলে ভানু সেই স্বাভাবিক ভানুবাবুর মতো কাকলীর চুল এলোমেলো করে দিয়ে শিস দিতে দিতে নিচে নেমে গেল। মন্দাকিনী আর ভানুবাবুকে আটকে রাখল না।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *