মাতৃ দিবস
মাতৃ দিবসের দিন রঞ্জন সকালবেলায় মাকে ডেকে বললো,’ মা এদিকে এসো একটা ছবি তুলব’। রঞ্জনের মা ঘরে এসে বলল,’ বল কি বলছিলি, আমি এখন রান্নাঘরে কাজ করছি, সকালের জলখাবার করতে হবে ,এরপর দুপুরের রান্না আছে । আজকে তুই অফিস যাবি না ? না মা ,আজ আমাকে অফিসে যেতে হবে না, আজ আমি বাড়ি থেকে কাজ করব। আজ আমার ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’।
মা কাছে আসার পর রঞ্জন মাকে জড়িয়ে একটা সেলফি তুললো। রঞ্জনের মা এরপর নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। মাঝে রঞ্জনকে ব্রেকফাস্ট দিতে গিয়ে লক্ষ্য করলেন যে পুরনো অ্যালবাম থেকে কিছু ছবি বার করে ফটো তুলছিল রঞ্জন। দুপুরে কাজ সেরে রঞ্জনের মা যখন মোবাইলে ফেসবুক খুলে দেখলেন, তার প্রোফাইলে রঞ্জন মাতৃ দিবসের পোস্ট করেছে অনেকগুলো ছবি দিয়ে। ছোটবেলায় রঞ্জনকে খাইয়ে দেওয়ার ছবি, রঞ্জনকে পড়ানোর ছবি, এই ধরনের কয়েকটা ছবি আর আজকে মায়ের সাথে রঞ্জনের ছবি দিয়ে লিখেছে, ‘মাতৃঋণ শোধ করা যায় না।’ এই পোস্টে প্রচুর লাইক আর কমেন্ট পড়েছে। তাঁর ফ্রেন্ড লিস্টের মানুষেরা যেমন রয়েছেন, তেমনি তার বাইরেও অনেক মানুষ রয়েছেন লাইক ও কমেন্ট করেছেন ,যারা তার ফ্রেন্ড লিস্টে নেই। রঞ্জনের মা ওই পোস্ট থেকে রঞ্জন এর সাথে আজকের তোলার ছবিটা শুধু রেখে দিয়ে বাকি ছবিগুলো ডিলিট করে দিলেন। আর রঞ্জন যেটা লিখেছে,’ মাতৃঋণ শোধ করা যায় না,’ সেটার জায়গায় এডিট করে লিখলেন ,’আজ মায়ের সাথে।’
বিকেলে রঞ্জন তার মাকে বলল, ‘মা, আমি আজ তোমার ফেসবুক প্রোফাইলে যে পোস্টটা করেছিলাম তার থেকে পুরনো ছবিগুলো ডিলিট করে দিয়েছো দেখলাম, কিন্তু কেন? পোস্টটাতে কত লাইক আর কমেন্ট হয়েছিল দেখছো? ওই পুরনো ছবিগুলো বাদ দেওয়ার জন্য তো মাতৃ দিবসের ওই পোস্টটা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেল ,তাই না মা?’
রঞ্জনের মা ছেলেকে হালকা ভাবে বকে দেওয়ার ছলে বললেন ,’দূর বোকা ছেলে, এই এখন হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা আর লাইক ও কমেন্টের ছড়াছড়ি! ছেলের জন্য মায়ের কাজ করা তো স্বাভাবিক ,তার জন্য সেই সব ছবি দিয়ে মাতৃদিবসের পোস্ট করতে হয় নাকি? তাও আবার মায়ের প্রোফাইলে ! তোর প্রোফাইলে যদি তোর সাথে আমার শুধু আজকের ছবিটা দিয়ে পোস্ট করে লিখতি ,’মাতৃ দিবসে আজ মায়ের সাথে, ‘তা হলে ঠিক ছিল। মা তার ছেলেকে খাইয়ে দিয়েছেন, পড়াশোনা করিয়েছেন, এইসব ছবি কি প্রচার করার জন্য? এগুলো তো মায়ের দায়িত্ব । যে মা তাঁর গর্ভে সন্তান ধারণ করে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, তার কাছে এইসব না করাটাই তো অস্বাভাবিক । আর একটা কথা ,’মাতৃ দিবস’,’ পিতৃ দিবস’ এসব পালন করা হয়, মা বাবার প্রতি সন্তানদের দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের জন্য সন্তানের সচেতনতা যাতে হয়. কিন্তু ‘সন্তান দিবস’ পালন হয় না কেন জানিস? সন্তানকে বড় করে তোলা, মানুষ করা প্রতিটা মা-বাবার দায়িত্ব ,সেটা মা-বাবাকে মনে করিয়ে দিতে হয় না কোন দিবস পালনের মাধ্যমে , কারণ সেটাই অত্যন্ত স্বাভাবিক।
‘মা’, এক অক্ষরের শব্দ কিন্তু এই শব্দের গুরুত্ব আর ব্যাপ্তি অপরিসীম । আজ আমার মা ইহজগতে আর নেই , কিন্তু প্রতি পলে অনুভব করি , মায়ের স্নেহ ,ভালবাসা ,সন্তানের প্রতি দায়িত্ব ,কর্তব্য কি জিনিস। এসব ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তাই ,মা হওয়া নয় সহজ কথা, বুঝলি কিছু?’