Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মাতৃত্বের কোনো বিশেষ রূপ নেই || Desha Mishra

মাতৃত্বের কোনো বিশেষ রূপ নেই || Desha Mishra

পুতুল যখন অনেক ছোট তখন একটা বাস দূর্ঘটনায় কিছু যাএী সহ ওর বাবা মা ও মারা যায়। পুতুলের কিন্তু কিছুই হয়নি। সেই বাসে মলয়ও যাচ্ছিল তার বাড়ি।মলয় ওর নাম হলেও ও নিজেকে মালা করে সাজিয়ে নিয়েছে এখন ।ঈশ্বর ওকে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ করে পাঠিয়েছেন এই নিয়ে তার কোনো দুঃখ নেই।
সেদিনকার অনাথ হয়ে যাওয়া সেই পুতলকে মালা কোলে তুলে নেয়।তার বাড়ি নিয়ে যায়,তার সেই বাড়িতে মালার মা ছাড়া আর কেউ থাকেনা। মালার বাবা মালাকে জন্ম থেকেই সহ‍্য করতে পারতনা,দিন দিন অত‍্যাচার বাড়তে থাকলে ওর মা ওকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে।
পুতুল সেই থেকেই মালার কাছে থাকে।মালাকেই সে ছোট্ট বেলা থেকে মা বলে ডাকে,আর মালার মা হল দিদুন সোনা।
স্কুলের বন্ধু পাড়া প্রতিবেশী সকলের মধ‍্যেই মালা কে নিয়ে নানা আলোচনা পুতুল ছোট থেকেই শুনতো কিন্তু সে কিছু বুঝতে পারতনা।বড় হওয়ার সাথে সাথে ও বুঝতে পারত সব।
এই সমাজ শুধু নারী পুরুষ চেনে,এই সমাজে মলয় দের মালা হয়ে যাওয়া বা তার ঠিক উল্টোটা হলেই সকলের ঠোঁট বেঁকে যায় ভুরু কুঁচকে একটা ঘৃণার দৃষ্টি পড়ে।
পুতুলের সব চাহিদা সব আবদার মালা পূরণ করে।সে দিন রাত পরিশ্রম করে পুতুলকে পড়াশোনা শেখায়,নাচ আবৃত্তি সব শেখাতে নিয়ে যায় আর পাঁচটা ছেলে মেয়ের মা বাবারা যেমন শেখায়।
পুতুল তার সব জমানো মনের কথা মালাকে রাত্রে বেলায় বলে।মালা পুতুলের চুলে আলতো করে নক্সা আঁকে পুতুল ঘুমিয়ে পড়ে।মালার তখন মনে পড়ে তার মা যদি কোনো সময় আদর করত মালার বাবা মালাকে মারত আর ওর মা কে ভীষন গালিগালাজ করত।মালার দুচোখ বেয়ে জল পড়তে থাকে।অতীতের দিন গুলো মুছে ফেলতে গেলেই আরো বেশি স্পস্ট হয় কেন কে জানে?
এসব দুই যুগে আগের কথা,অনেক ঝড় সামলে উঠে আজ পুতুল একটা স্কুলের টিচার।স্কুল জয়েনের প্রথম দিন ওর জন‍্য স্কুলের হেড মিস্ট্রেস ও অন‍্যান‍্য স‍্যার ম‍্যামরা একটা ছোট্ট অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল,সেই অনুষ্ঠানে পুতুল মালা কে নিয়ে যায় যদিও মালার একটুও ইচ্ছে ছিল না।
পুতুল সবার সামনে মালা কে প্রণাম করেআর ওর পাওয়া ফুলের তোড়াটা মালার হাতে তুলে দিয়ে বলল -‘আপনাদের কাছে আজ আমি একজন প্রতিষ্ঠিত দিদিমণি শুধু আমার এই মায়ের জন‍্য।যিনি নারী পুরুষেরও উর্ধে।সেই ছোট বেলায় এক মা কে হারিয়েছি আমার মায়ের মুখ মনে পড়েনা কখোনো,ইনি এই অনাথ মেয়ে কে সব দিক দিয়ে আগলে রেখে, সমাজের সব লাঞ্চনা গঞ্জনা সহ‍্য করে,আদপেট খেয়ে আমাকে যোগ্য করে তুলেছেন।
আর সামনে বসে থাকা বাচ্চাদের উদ্দেশ্য পুতুল বলে-‘বাচ্চারা মনে রাখবে মায়ের কোনো বিশেষ রূপ হয়না,যিনি সন্তান গর্ভে ধারন করেন তিনিও মা আর যিনি সেই সন্তান কে হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসে আগলে রেখে লালন পালন করেন তিনিও মা।
সকলেই মালা দেবীর দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে নমস্কার জানালেন।একই সাথে বাচ্চারাও নমস্কার করল।মালা ও সকলের প্রতি নমস্কার জানিয়ে, পুতুল কে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *