Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মন বাউলের প্রকৃতি পাঠ || Manisha Palmal

মন বাউলের প্রকৃতি পাঠ || Manisha Palmal

আজ দক্ষিণে র মাঠে এসেছি। পান্না সবুজ মাঠ ফসলের পরাণ কথা শোনায়। নয়ানজুলি দুপাশে মরকতমনির দ্যুতি। সবুজের কত রকম বিভিন্নতা। কোথাও কচি কলাপাতা র মিষ্টি ওজ্জ্বল্য কোথাও ঘন শ্যামলিমার গাম্ভীর্য— দুই ই সুন্দর। দূরে ঝিলের পাড়ে নিচে জমিটা তিতপল্লা ,অনন্ত লতা ,কলমি লতা ,শুষনি ,কুলেখাড়া ,হিঞ্চে, কচুর লতায় ঘন সবুজ গালিচা র রূপ নিয়েছে। তিতপল্লা র হলুদ ফুলের কালো ভ্রমর সোহাগ যাচে। হালকা গোলাপী অনন্তলতা ফুল ফোটানোর গরবে গরবিনী। মৌমাছি গোলাপি পুষ্পমঞ্জরি তে উড়ে উড়ে এসে বসছে। ফুলের গরব যে আর ধরে না। ফুলে মধুপে যে মিতালী হয়ে গেল । মাঠের আলে দাঁড়িয়ে আছি। চারপাশে সবুজের সমুদ্র। প্রকৃতির কি অনাবিল সৌন্দর্য। এক ঝাঁক সাদা বক এসে নামল ঝিলের পাশের জমিতে। ওদের সাদা জামায় হলুদ পায়ে ও ঠোঁটে কি সুন্দর বাহার। সবুজ সাদা হলুদ —- এ যে রঙের উৎসব। ঝিল পাড়ে অমর কলমীর জঙ্গল। এটা মাছরাঙাদের আড্ডাখানা। বড় মাঝারি ছোট তিন ধরনের মাছরাঙ্গা কেই দেখা যায় সব সময়। হঠাৎ ঝুপ করে ছো মেরে জল থেকে মাছ মুখে এসে বসে গাছের ডালে। ওদের লাল বা কালো ঠোঁটের সাঁড়াশির মতো আটকে থাকা মাছ রবিরশ্মি তে রুপোর মতো ঝিলিক দিয়ে ওঠে । কী সুন্দর যে লাগে। বারবার অনন্তের পায়ে মাথা নত হয়ে আসে। প্রকৃতির রূপ রস বর্ণে গন্ধে যে কি মহিমা মন ভরিয়ে দেয়। ধানক্ষেতের জলে ছোট্ট ছোট্ট তেচোখো মাছ খেলা করছে। শামুকের দল জলের তলদেশ ছেয়ে রেখেছে— কোনটা ছোট্ট আবার কোনোটা বিরাট। যখন টুকটুক করে চলে কি যে সুন্দর লাগে। নিজের আশ্রয় নিজেই বয়ে নিয়ে চলেছে পিঠে। ভয় পেলেই টুপ করে ঢুকে যায়।
ভারী সুন্দর। আমি দুচোখ মেলে দেখি এই সৌন্দর্য কে। মাঠের আলে ঘাসের সাথে পুনর্নবার লতা গোলাপি ছোট্ট ছোট্ট ফুলে সারা আলপথ আলো করে আছে মাড়িয়ে চলতে কষ্ট হয । নুপুরের মতো সবুজ লতায় সাদা তারা ফুলের মিনাকারি। মনকে ছেলেবেলায় ফিরিয়ে নিয়ে চলে। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম ওখানে— বড় রাস্তা থেকে প্রাত ভ্রমণকারীদের কৌতুহলী দৃষ্টি—- কি হলো দিদি মনি? কিছু না বলে চুপচাপ সরে এলাম। কিন্তু এ প্রকৃতির লীলা ঘর ছেড়ে যেতে মন চায়না। আবার ঝিলের পুবের পাড়ে গিয়ে পৌছালাম। ওমা! একটা বেজি বেরিয়ে ভূত ভৈরবীর ঝোপে ঢুকে গেল। কি সুন্দর পুতির মতো জ্বলজ্বলে কালো চোখ। বুলবুলি দলের কোলাহলমুখর এইঝিল পাড। কাল বকের ঝাঁক এসে পাডের শিরিষ গাছটা ছেয়ে ফেলেছে। নিচে কচুরিপানার জঙ্গলে জলপিপি আর পানকৌড়ির আড্ডা। মাঝে মাঝে জল ছুঁয়ে উড়ে যাচ্ছে রানী ফড়িং। ওর রক্ত লাল শরীর রুপালি স্বচ্ছ ডানা য় রূপের বান ডেকেছে। স্থির জলে জল মাকড়সা আলপনা আঁকছে কলমি লতার ধারে। কলমীর বেগুনি ফুলে কিশোরীর স্বপ্নের পেলবতা। ঝিলের এক কোণে কটা শাপলা ফুটে আছ। মানুষের আগ্রাসী লোভ ওগুলোকে বাঁচতে দেবে না। দেখলাম নালের লোভে শাপলা তুলতে এসেছে লোকজন। মন খারাপ হয়ে গেল গাছগুলো তো মরে যাবে। এইতো জীবন রঙ্গ। দূর থেকে মন্দিরের জাগরণীর ঘণ্টাধ্বনি ভেসে আসছে— এবার তো ফিরতে হবে—-
“যে” ধ্রুবপদ দিয়েছো বাঁধি বিশ্ব তানে
মিলাবো তায় জীবন গানে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *