Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মন বাউলের অতীতকথা || Manisha Palmal

মন বাউলের অতীতকথা || Manisha Palmal

মন বাউলের অতীতকথা

এক এক দিন মন খারাপের চাদরমোডা সন্ধে যেন দুহাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে— মন যে বড় পিছু টানে! অতীতের পরান কথা চৌহদ্দিতে ঢুকে পড়ি নিজের অজান্তেই!
ঠাম্মি , বড় ঠাম্মি, দাইদি ,নতুন দিদার মুখে শোনা অতীতের গল্পগাছা যেন চোখের সামনে এক এক করে তার আগল খুলতে থাকে। পুকুরপাড়ের পুরোনো ভিটার ধ্বংসস্তূপে ঘুরে বেড়াই— কি যে খুঁজি কে জানে! ভাঙা দেয়ালের কুলুঙ্গিতে পড়ে থাকা সিঁদুর মাখানো কডি মনে করিয়ে দেয় সেই ন বছরের বউ হয়ে আসা মিষ্টি মেয়েটার কথা। যে শ্বশুরবাড়ির বিরাট চৌহদ্দিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল। তার সুন্দর” মৈত্রেয়ী” নামটা সবাই ভুলে বড় বউয়ের তকমা লাগিয়ে দিয়েছিল!
আরো পরে দুই দিকপাল ছেলের মা হবার পর” “সত্যেনের মা”–হয়ে ই কাটিয়ে দিয়েছিল আরো তিন দশক। এরপর তার আরও পদোন্নতি — বড় ঠাম্মা তে!
আমরা সব নাতি-নাতনীরা বুড়িকে বড্ড জ্বালাতাম। মিত্র বাড়ির মেয়ে , কুল রক্ষার জন্য আমাদের বড় দাদুর বাবা অনেক সাধ্য সাধনা করে ওই মেয়েকে বাড়ির বউ করতে পেরেছিলেন! অপূর্ব সুন্দরী দুধে আলতা রং ছোট্টোখাট্টো মা লক্ষ্মীর মত চেহারা তবে বড় দুর্মুখ! কুলীন কায়স্হের মিত্র ঘোষ বসুর চৌহদ্দিতে ঘুরিয়ে মারতেন আমাদের। নিজে মিত্র বাড়ির মেয়ে তাই মিত্রদের শ্রেষ্ঠ তা প্রমাণের জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকতে। মজা লাগতো খুব। রাগিয়ে দিতাম এই বলে—– তোমাকে দেখেই তো বুঝতে পারছি– কি মুখ!! ঘোষ বোসকে ফেল করিয়ে দাও!
তারপর যা হতো রঘুবীর ই জানেন ! খুব গুণবতী ছিলেন! অদ্ভুত সুন্দর ফুলের গয়না তৈরি করতেন। গরমের ছুটিতে দেশের বাড়ি গেলে বিকেলে নিয়ম করে আমাদের চুলে ফুলের গয়না পরতে হতো। “দাইদির”– আদেশ। বড় ঠাকুমা বলতাম না বলে বকতেন—- দাইদি কিরে , বড় ঠাকুরমা বলতে পারিস না! আমি বোস বাড়ির সবচেয়ে বড় জানিস না? মুখে বকলেও মনটা ছিল ফুলের মত নরম।
ওকে ধরলাম– তোমার বিয়ের গল্প বলো না গো, তুমি নাকি শশুর বাড়ি থেকে পালিয়ে- যাচ্ছিলে সেই গল্পটা বলোনা!
বড় ঠাম্মি হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়লেন— শুরু করলেন ওর আত্মকাহিনী—- ন বছরের মেয়ে বিয়ে হয়েছে 23 বছরের পাত্রের সাথে! তার ওপর বরের রং শ্যামলা একটুও পছন্দ হয়নি! ডাক্তার মানুষ কম কথা বলা গোমড়ামুখো! সারাদিন বই মুখে বসে থাকে! দশটা কথার একটা উত্তর! কাঁহাতক ভালো লাগে? ফ্রকের ওপর 10 হাতি বৃন্দাবনী শাড়ি জড়িয়ে সারা “বোসবাখুল” দাপিয়ে বেড়াতেন। পেছনে পেছনে দাসী বিনোদ ছুটতো— ও বউ মনি ছুটো নি গো পড়ে যাবে যে । তোমার লাগলে যে আমার কাজ যাবে আর ছুটো নি—- কে শুনে কার কথা?
খিডকি পুকুর খুব সুন্দর শান বাঁধানো ঘাট পাঁচটা সিঁডি। পুরো পাড জুড়ে ফলের বাগান । ঘর লাগোয়া ফুলবাগান। সিঁড়ির উপর থেকে সটান ঝপাস করে পুকুরের জলে। সাঁতরে এপার-ওপার করতে দেখলে সবাই হা হা করে উঠতো।
পাত্রসায়ের মিত্র বাড়ির একমাত্র আদরের মেয়ে। ঠাম্মির বাবা ও দাদু আইন ব্যবসায়ী। উকিলবাড়ি বলে সবাই খুব মান্য করে। আমাদের ডাক্তারবাড়ী— ভালো মিল হয়েছিল! যা বলছিলাম—- দাদুর চেম্বারে অনেক রোগীর সাথে ঠাম্মির পরিচিত একজন এসেছে। ঠাম্মি তাকে দেখেই ঠিক করে নেয় ওর সাথে বাড়ি পালাবে। তক্কে তক্কে থাকে। যখন ওই ভদ্রলোক বেরিয়েছেন ঠাম্মি পরনের শাড়িটি পোটলা করে বগলে নিয়ে হাটা শুরু করেছেন। আমাদের গ্রাম ছাড়িয়ে বিক্রমপুরের পাকা সড়কের উঠতে ভদ্রলোকের নজরে পড়ে। ঠাম্মিকে কোলে তুলে নিয়ে আবার ফিরে আসেন—- রাস্তায় বাড়ির লোকজনের সাথে দেখা– বউমণিকে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে সবাই খুঁজতে বেরিয়েছে এ তো গেল একবারের কথা। বাড়ির লোকের ওপর রাগ করে সারাদিন ভাঁড়ার ঘরে লুকিয়ে থেকে বাড়ির সব্বাইকে ব্যতিবস্ত করে তুলেছিলেন। আমিও ওনার মত গেছো বলে আমাকে খুব ভালোবাসতেন। মাঝে মাঝে ” কুতার্কিক” বলে গাল দিতেন ঠিকই কিন্তু যে মানবপ্রেমের শিক্ষা আমাকে দিয়ে গেছেন তা কখনো ভুলবো না। মনে পড়ে এক নাচনি র মৃতদেহ কেউ ছোঁবে না শুনে নিজে এগিয়ে এসেছিলেন— বলেছিলেন মৃতের কোন জাত হয়না। উনার সহায়তায় আমাদের বাড়ির লোকজন ওই শিল্পীর সৎকার করে আজও যখন দেশের বাড়ির অঙ্গনে এসে দাঁড়াই — নতুন বাড়ির মাঝে আমি খুঁজে বেড়াই আমার শৈশবের সেই বাড়িটাকে— সেই দরদালান ,সেই মানুষজন, সেই ভালোবাসার সোনালী মোড়কে জড়ানো আমার মেয়েবেলা টাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *