Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মধ্যমার প্রতি || Shamsur Rahman

মধ্যমার প্রতি || Shamsur Rahman

ক’দিন থেকে আমার ডান হাতের মধ্যমা এক অর্থহীন হরতাল
শুরু করেছে। কোনও কাজই করবে না আর। আজ সকালে
হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সে টেবিলের ওপর দাঁড়িয়ে গেছে
উদ্ধত ভঙ্গিতে। কোনও নেপথ্যাচারী স্বৈরাচারীর লেলিয়ে দেওয়া
দালালের মতো আমার বিরুদ্ধে লাগাতার শ্লোগান দিতে
শুরু করেছে। প্রেমের কবিতা লেখার সময় সে আমার কলম
স্পর্শ করবে না-এই ওর ঘরফাটানো দাবি। বুঝতে পারি না,
কেন এই না-হক দাবি মধ্যমার? আমার দিকে সরোষে এক
স্মারকলিপি ছুঁড়ে দিয়েছে সে। স্মারলিপি পড়ে হতবাক আমি ফ্যালফ্যাল
তাকিয়ে থাকি সেই লুম্পেনের দিকে। বিশেষত প্রেমের কবিতা লেখার
সময় সহযোগিতার দরজায় সে ডবল তালা ঝুলিয়ে দেবে। টেবিলে
দাঁড়ানো মধ্যমাকে বললাম, “দ্যাখো হে, বড্ড বাড়াবাড়ি শুরু
করেছ। কী না করেছি আমি তোমার জন্যে? তোমার কষ্ট হবে
ভেবে কখনও কখনও লেখা মাঝ-পথে থামিয়ে দিয়েছি। তোমাকে
গোলাপের মখমল-পাপড়ি ছোঁবার, শিশুকে আদর করবার, আমার
দয়িতার গাল, গলা, স্তন, কোমর স্পর্শ করবার অধিকার দিয়েছি অকুণ্ঠচিত্তে।
‘গীতবিতানে’র পাতা সমুদয়, গ্রিক ট্রাজেডি, প্লেটোর ‘রিপালিক’, রিল্কের
‘ডুইনো এলিজি’, জীবনানন্দের ‘সাতটি তারার তিমির’-এর পাতা
ওল্টানোর অসামান্য সুযোগ কি দিইনি তোমাকে?”

হে প্রিয় মধ্যমা আমার, কে তোমাকে আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে
দিয়েছে আজ? আমার কোনও কোনও প্রবীণ বন্ধু প্রেমের কবিতার
সঙ্গে আমার এত লদকালদকি পছন্দ করেন না। ‘লদকালদকি’
শব্দটি অবিশ্যি তাদেরই মুখনিঃসৃত। ভাবলে কী করে তুমি অসহযোগ
আন্দোলন শুরু করলেই আমি প্রেমের কবিতার দেশ থেকে নির্বাসিত হব
হে মধ্যমা? তোমার অজানা নয় যে স্বদেশ, জ্ঞানান্বেষণ, কবিতা এবং
ভালোবাসার প্রতি চিরনিবেদিত। যার ঠোঁটে হাসির ঝিলিক দেখতে
না পেলে, যার সঙ্গে একদিন দেখা না হলেই হৃদয় হয় আহত পাখি,
যার সঙ্গে কথা বলতে না পারলে কবিতার ভাষা ভুলে যাই, তাকে
নিয়ে কবিতা লিখব না কারও ফরমানের ধমকে এমন উদ্ভট চিন্তা
তোমার মাথায় ঢোকাল কে?

দেখ, তোমার স্মারকলিপি কুটি কুটি ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছি বাজে
কাগজের ঝুড়িতে। তুমি কোন্‌ ছার, তোমরা দশজন সঙ্গী ঐক্যজোট
বেঁধে ধর্মঘট করলেও মাথা নত করব না, মানব না হার। যত কষ্টই হোক
দাঁত দিয়ে কলম চেপে ধরে কবিতা লিখব, প্রেমের কবিতাই লিখব।
দেখে নিও, প্রেমের দেবতা হবেন আমার পরম সহায়। আমার
খাতার পাতা-জোড়া এক নন্দিনীর হরফে-গড়া প্রতিমার মুখের হাসির
ঝর্ণাধারা দেখে তোমাদের ধর্মঘটী মুখ চুন হয়ে যাবে। তোমাদের
ঘিরে ছেয়ে আসবে ঘোর অমাবস্যা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *