মধুচন্দ্রিমা
মধুচন্দ্রিমায় কোথায় যাওয়া হবে এই নিয়ে রাঘব ও তৃষার বিয়ের তিনমাস আগে থেকে নানান ভাবনা আসে।কোন ড্রেস পরবে। আসলে একটানা দশবছর মেলামেশা করে ভালভাবে দুজনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে,দুই বাড়ি চাপাচাপি করার পর হচ্ছে বিয়ে। অবশেষে এত জল্পনা কল্পনা করে ঠিক করে গোয়া যাবে। কেননা দুজনে বিয়ে উপলক্ষ্যে বাজার করার জন্য এত ছুটি নিয়ে ফেলেছে। এবার বেশি ছুটি নিলে টাকা কাটা যাবে।সব বন্ধুরা হাসাহাসি করে আরে তোদের বিয়ের চেয়ে হ্যানিমুনের বেশি চিন্তা। যথারীতি পয়লা অগ্রহায়ণ আঠারো নভেম্বর মহাধুমধামে বিবাহ হয়।
অষ্টমঙ্গলা করে সোজা গোয়া।গোয়াতে চারদিন থেকে তারপর রাঘবের বড় মাসীর বাড়ি দুদিন থেকেই বাড়িতে ফিরবে।বড় মাসী, মেশোর অসুস্থ থাকার জন্য রাঘবের বিয়েতে আসেন নি।গোয়ায় রঙিন জীবন কাটিয়ে মাসীর বাড়িতে ওরা গিয়ে দেখে মেশোর অবস্থা খুব খারাপ। এদিকে রাঘবের যদিও বা ছুটি পাওনা আছে কিন্তু তৃষার একদিন পড়ে অফিস জয়েন করতে হবে।মাসি আবার নিঃসন্তান।রাঘব একা মাসিকে রেখে ফিরতে পারবে না। তৃষা পরদিন নির্দিষ্ট প্লেনে একা বাড়িতে ফেরে। মেশো দুদিন পর মারা যান। রাঘবের নতুন বিয়ে মুখাগ্নি করতে পারবে না। ঠাকুর মশাই বলেন তোমার বাবার মতো , তুমি দিতে পারো।সব কাজ ঠিকমত মিটে যাওয়ার পর রাঘব নাভিটা সাগরে ফেলে আসতে গিয়ে মাথাটা ঘুরে কোথায় যে ভেসে গেল। রাঘব ও তৃষার জীবনে *আছড়ে পড়ে ঢেউ।
এই ঘটনা শুনে বাড়ির আত্মীয় স্বজন ,রাঘব ও তৃষার বাবা ,মা সবাই ছুটে আসে মুম্বাই। কিন্তু দেহটা ফিরে পায় নি। তারপর থেকে তৃষা কোনো দিন শ্বশুর-বাড়িতে থাকা হয় নি। কেননা শাশুড়ি সব সময় বলতেন অপয়া বৌ। তৃষা বলে আপনার বড়দির জন্য আমার স্বামী চলে গেছে। শাশুড়ি এই শুনে তৃষার দিকে তেড়ে যান । তৃষা বুঝে যায় এ বাড়িতে থাকা মুশকিল। তারপর বিধবাদের মতো খাবার ব্যবস্থা। তৃষা বলে ওর তো বডি পাওয়া যায় নি। আমি সধবা হয়ে থাকব। তৃষা হ্যানিমুন স্মৃতি নিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন থেকে আবার অফিস।এরপর সাত মাস পরে তৃষার মা ও বাবা ভাতের হাঁড়িতে টিকটিকি পড়া ভাত খেয়ে একদিনে দুজন মারা যায়। অফিস থেকে এসে দেখে মা ও বাবা নেই। এদিকে তৃষার শরীরে যে সন্তান বাড়ছে, তৃষা কিছুতেই নষ্ট করতে চায় না।তার ভালোবাসার স্মৃতি। শ্বশুর বাড়িতে শুভ ঘটনা বলতে গিয়ে হিতে বিপরীত। তৃষা ভেবেছিল ওনারা ছেলে হারিয়েছেন, নাতি বা নাতনী যেই আসুক, শুনে খুশি হবে। ওনারা তৃষাকে কত আজেবাজে কথা।তৃষার মনে নতুন করে আছড়ে পড়ে ঢেউ। এরপর তৃষা বাড়ি বিক্রি করে চলে যায় দিল্লি। ওখানকার অফিস বন্ধুদের সহায়তায় সুস্থ ছেলে জন্মায়। ধীরে ধীরে সুজন বড় হয়।এর মধ্যে ছাব্বিশ বছর কেটে যায়। সুজন একদিন জানায় মা আমার বান্ধবী রীতুর বোনের বিয়ে। তোমাকে রীতু বারবার করে বলেছে যেতে।জানো মা রিতু আর মিতু যমজ দুই বোন। রিতুর বাবা ঠাকুমা দাদু খুব ভালো। তৃষা মজা করে বলে কেন রে তোর কি রীতুকে মনে ধরেছে।সুজন হেসে বলে ওকে কে বিয়ে করবে।না মা তুমি ভুল ভাবছ। তৃষা হেসে বলে ঠিক আছে বাবা। তুই যা ভালো বুঝবি। তৃষা মিতুর বিয়ের দিন একটু সাজসজ্জা করে যায়।এখন আর সিঁদুর পড়ে না।হয়ত শ্বশুর শাশুড়ি ছেলের শ্রাদ্ধ করে দিয়েছেন। ওনারা কোথায় যে থাকে!আদৌ বেঁচে আছেন কিনা সন্দেহ। বিয়ে বাড়িতে গিয়ে তৃষা দেখে শ্বশুর ও শ্বাশুড়ি।সুজন বলে মা ওনারা রীতুর দাদু ও ঠাম্মা।দুর থেকে হেঁটে আসছে রাঘব।কি সুজনবাবু এত দেরি!
তৃষার মনে উথাল পাথাল অবস্থা। চিৎকার করে তৃষা বলে রাঘব তুমি।
সুজন রাঘব নাম শুনে চমকে ওঠে, তৃষাকে বলে মা , আমার বাবা বেঁচে আছেন! তৃষার শ্বশুর শাশুড়ি ওখান থেকে চলে যাচ্ছিলেন। তৃষা চিৎকার করে বলে এনারা আমাকে তাড়িয়ে ছেড়েছে। সন্তান সম্ভবা জেনে ও কুকথা বলে তাড়িয়ে দিয়েছে। সাদা থান পরাতে চেয়েছেন। কিন্তু আজ ও রাঘব তোমার নামে সিঁদুর পরি।রাঘব বলে আমায় ভেসে যেতে দেখে রীতু ও মিতুর বাবা বাঁচায়। কিন্তু তখন আমার স্মৃতি ছিল না। তারপর থেকে ওদের সঙ্গে থাকতে থাকতে ওদের মামু হয়ে গেছি। কুড়ি বছর আগে ওদের মা ও বাবা গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায়। আমি ও ওই গাড়িতে ছিলাম। দুর্ঘটনায় পুরাতন স্মৃতি ফিরে আসে। তারপর বাড়িতে গিয়ে মা ও বাবাকে নিয়ে আসি।তবে ওনারা আমায় বলেছেন তুমি মারা গেছো। তখন বর এসেছে বলে শোরগোল শুরু।কে একজন বরকে বরণ করবে বলে বরণ ডালা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। রাঘব থালাটা তার থেকে নিয়ে তৃষাকে বলে তুমি জামাই বরণ করো। এখন সবাই মিলে সুখের সংসার।সুজন ও মিতুর বিয়ে হতেই পারে। সামনের মাসে ওদের বিয়ে সবাই আসবেন কিন্তু।