ভোরের কুয়াশা
ঢঙ্ করে শব্দ হতেই সুপ্রতীক ফাইলের পাতা থেকে মুখ তুলে ওয়ালঘড়ির দিকে তাকালো । রাত একটা বাজে । কাজ এখনো অনেক বাকি । ভোর হতেই ঠিকাদারেরা অফিসে ধর্ণা দিবে । ক্রিসমাসের আগের দিনগুলোতে এমনই হয় ।
সুপ্রতীক পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র একাউন্টস অফিসার । কিন্তু কাজ করতে হয় জুতো সেলাই থেকে চন্ডিপাঠ । বিল সেকশনে যে ভদ্রমহিলা আছেন, তিনি বড় সাহেবের দূরসম্পর্কের শ্যালকের পত্নী । তাই মাইনের খাতায় একবার হস্তাক্ষর করলেই বর্তে যান ।
দিনের চব্বিশ ঘন্টা আজকাল বড় কম মনে হয় । দশ পাতার একটি প্ল্যান এস্টিমেট টাইপ করার এখনো বাকি আছে । পরশুর মধ্যে শিলঙ-এ পৌঁছতে হবে । অফিসের টাইপিস্ট সাহেবের স্নেহধন্য । গত এক বছর ধরে অজানা স্টাডি লিভ নিয়ে পড়াশোনা করছে । তাই সুপ্রতীককে এইদিকটাও সামলাতে হয় ।
পেটটা হঠাৎ মোচড় দিয়ে উঠলো । পেটের কোনো দোষ নেই । দুপুরে কাঞ্চার দোকানে একমুঠো ভাত পড়েছিল । তারপর থেকে শুধু চা আর মেরি বিস্কুট । থেকে থেকে গলা দিয়ে টক ঢেকুর উঠছে । কাল সকাল থেকেই মনটা অফ হয়ে আছে । রোলার ড্রাইভার আকণ্ঠ পান করে সেই কি হম্বিতম্বি । গত তিন মাস থেকে বিনা বেতনে ছুটিতে আছে । মনে করে, সুপ্রতীক ইচ্ছে করেই মাইনে দিচ্ছে না । এদিকে সাহেবের করা হুকুম, মেডিকেল সার্টিফিকেট না দিলে নো স্যালারি । আজকাল আবার নতুন ফ্যাশন । ঠিকাদার থেকে আর্দালি পর্যন্ত কথায় কথায় জঙ্গলের মানুষের ভয় দেখায় ।
এখন বোধহয় ভোর হয়ে এলো । বাইরে অফিস কম্পাউন্ডে নাইট গার্ডরা আগুন জ্বালিয়েছে । কিছুদূরে কোনো এক মদাপি অকথ্য ভাষায় কাউকে গালাগালি করছে । পেটের চিনচিন ব্যাথাটা আচমকা বেড়ে গেলো । দৌঁড়ে এসে বেসিনের সামনে আসতেই হরহর করে বমি করে ফেললো । সেই সঙ্গে মনের ভিতর অনেক দিনের জমে থাকা ক্ষোভ রাগ অভিমান উগরে বেরিয়ে আসলো । কল খুলে মুখে জলের ঝাপটা দিতেই বেশ আরাম অনুভব হলো । রাতের গলার টক ভাবটাও আর নেই । আবার নতুন এক সংগ্রাম ।
সুপ্রতীক ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো । তখনই ভোরের একরাশ কুয়াশা সুপ্রতীকের চোখে মুখে আছড়ে পড়লো । চৌকিদারের কোয়ার্টার থেকে একটি মোরগ ডেকে উঠলো – কু-কি-রি-কু ।