ভূতের পুজোপাঠ
ভূতনগরে গত দুবছরে ভূতসংখ্যার বাড়বাড়ন্ত। তাতে পুরোনো রক্ষণশীল ভূতেদের বড়ই অসুবিধে।
এতদিন পুরো এক একটা বটগাছ বা বাঁশঝাড়কে প্রত্যেক পরিবারের জন্য বরাদ্দ করা হতো —
সেখানেই তারা পরিবার নিয়ে হাত -পা ছড়িয়ে থেকেছে —
আর এখন ভূতসংখ্যার উচ্ছ্বাসে ভূতজগতে সবকিছুতেই টানাটানি —
পুরো এক একটা গাছ বরাদ্দ হওয়া তো দূর এক একটা বাঁশঝাড়ে বা বটগাছে মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং বানানো হয়েছে —
ভূতনগরে নাগরিকত্ব পাবার সিনিয়ারিটির ওপর বেস্ করেই সেগুলোকে এ্যালোট করা হচ্ছে।
ফলে দূর্গতির সীমা নেই —
যারা এই এ্যালোটমেন্টের আন্ডারে এসে পড়েছে তারা তো মাথাগোজার ঠাঁইটুকু পেয়েছে আর যারা ভূতনগরে নতুন এসেছে তাদের অবস্থা করুন– তারা ত্রিশঙ্কু হয়ে ঝুলছে এদিকে ওদিকে—
ফলে নতুন ভূতেরা যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে।ইচ্ছেমতো গিয়ে পুরোনো ভূতেদের ব্যালকনিগুলোতে গিয়ে হুমড়ি খাচ্ছে–
ভূতনগরের পুরোনো বাসিন্দা হিসেবে ভূতত্বের খাতিরে তারা এই বেনোজলগুলোকে তাড়িয়েও দিতে পারছে না আবার সহ্যও করতে পারছেন না।
ভ্যালেনটাইন ডে তে যারা নিজেদের প্রেমিকাদের নিয়ে যারা বাড়ির এই ব্যালকনিতে নিরালায় বসে রোমান্টিক কথা কইতেন তাদের এখন নিজেদের ব্যালকনিতেই গুঁতোগুঁতো করে বসতে হচ্ছে। কার হাতের কালো গোলাপ দিতে গিয়ে কারটা যে কার কাছে যাচ্ছে বোঝার উপায় নেই—
অগত্যা পুরোনোভূতেরা স্থির করলেন ভূতদেবতার পূজো করে এই ভূতসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের জন্য মানত করবেন।
যাহাভাবা তাহা কাজ —-
ভূতসমাজের সিনিয়রমোষ্ট মিষ্টার ভূত্যার্জীর কাছে আর্জি জানান “এঁই ভূঁতদেবতার পুঁজোর দাঁয়িত্বটা কিঁন্তু আপঁনাকেই নিঁতে হঁবে।”
মিষ্টার ভূত্যার্জী এমন একখানা অফার পেয়ে গদগদ হয়ে ফোঁকলা দাঁতে হেসে বললেন “হেঁ হেঁ নিঁশ্চয়ই নিঁশ্চয়ই— আঁপনারা আঁমাকে যেঁ গুঁরুদায়িত্ব দিঁয়েছেন আঁমি সেঁটা আঁমি নিঁষ্ঠা সঁহকারে পাঁলন কঁরবো।”
রীতিমত পঞ্জিকা দেখে দিনস্থির করে ফেললেন।আর পুজোর সামগ্রীর ফর্দ বানিয়ে ফেললেন ভূত্যার্জীবাবু।
পুজোর দিনরাতে স্নান সেরে আলমারী থেকে খুঁজেপেতে বের করলেন “হরে ভূত হরে ভূত ভূত ভূত হরে হরে” লেখা নামাবলীখানা।
ধূতি পরে নামাবলী গায়ে দিয়ে ভূষন্ডীর মাঠে পুজোমন্ডপে গিয়ে হাজির হলেন পুরোহিত ভূত্যার্জীবাবু।
কর্মকর্তারাও সেজেগুজে সেখানে এসে পড়েছেন মাইকে তখন “ভূতগীতি ” চলছে —
ভূত্যার্জীবাবু নিজের টিক্কি দুলিয়ে আসন পেতে বসার আগে মন্ত্রবলে নিজেকে শুদ্ধ করে নেন।
একে একে পুজোর বিধি মেনে পুজো সুষ্ঠভাবে করে সকলকে অঞ্জলি দিতে বলেন—
সকলে একমনে “ভূতশ্লোক” সঠিকভাবে উচ্চারণ করে অঞ্জলিপর্ব সমাপ্ত করেন।
পুরোহিতমশাই ভোগ নিবেদন করবেন তার আগে সবাইকে বাইরে যেতে বলেন—
সকলে বাইরে বের হলে একমনে ভূতদেবতাকে স্মরণ করে মন্ত্র বলে ভোগ নিবেদন করেন।
ভূত্যার্জীবাবু মনসংযোগ করে নিষ্ঠা ভরে হাতজোর করে বললেন ” হেঁ ভূঁতদেবতা, হেঁ প্রভু ভোঁগ গ্রহন কঁরুন —“
কিন্তু একি ভূতমহারাজ ব্যাঁজার মুখে মুখ বেঁকিয়ে আছেন কেন?—-
“কিঁ হঁলো প্রঁভু ভোঁগ গ্রঁহন কঁরুন ?”
পুরোহিতমশাই এতদিন যাবৎ এই ভূতনগরে পুজোপাঠ করে এসেছেন —কখনো এমন দৃশ্য দেখেন নি।তাই তিনি আকুতি ভরে বলেন —
“তঁবে কিঁ প্রঁভু পুঁজোতে কোঁথাও দোঁষ হঁয়েছে?”
এবার তিনি স্পষ্ট শুনতে পেলেন ভূতদেবতা বলছেন —
“হঁয়েছেই তো ?”
“সেঁকি প্রঁভু– কোঁথায় ভুঁল –কিঁসের দোঁষ”
ভূতদেবতা রেগে গিয়ে বলেন ” ওঁরে পাঁপীষ্ঠ আঁমি কিঁ আঁজীবন শুঁধু এঁই চাঁলকলা আঁর কাঁটাফল খাঁব নাঁকি? নিঁজেরা তোঁ ভাঁলোমন্দ কঁত্তোকিছু খাঁস আঁর আঁমার বেঁলায় —“
থতমত খেয়ে ভূত্যার্জীবাবু বলেন “বঁড় ভুঁল হঁয়ে গেঁছে প্রঁভু —আঁজ্ঞা কঁরুন প্রঁভু আঁপনি কিঁ খেঁতে চাঁন?”
এবার ভূতদেবতার মুখে হাসির রেখা দেখা যায় ঢোক গিলে বলেন “এঁই ধর পিঁৎজা , বাঁর্গার , পাঁস্তা ,চাঁউমিন —এঁইগুলো আঁর কি। ওঁ হ্যাঁ কোঁল্ড ডিঁঙ্কও দিঁবি কিঁন্তু — তঁবে দেঁখিসবাপু সেঁগুলো যেঁন আঁমিসের সাঁথে নাঁড়াঘাঁটা নাঁ হয়। আঁফটার অল আঁমি ভূঁতদেবতা বঁলে কঁথা—“
ভূতদেবতার ভোগের ফর্দ দেখে ভূত্যার্জীবাবুর চক্ষুছানা বড়া —–
শেষে এইসমস্ত জিনিষের অনলাইন অর্ডার করিয়ে তবে ভোগ নিবেদন পর্ব সমাপ্ত হয়।
পুরোনোভূতেরা পুজোর আয়োজক হলেও নিউ কামারাও এতে যোগ দিতে ভোলে নি।
পুজোপর্ব মিটলে শুরু হয় নতুনভূত পুরোনোভূত সকল ভূতের নৃত্য —ভূতদেবতাও নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে তাতে অংশগ্রহন করেন।
সবমিলিয়ে সম্পূর্ণভাবে সফল এই পুজোপাঠ।