ভুল
ঘটক বলেছিল ‘মেয়েটা দেখতে শুনতে তেমন ভালো না হলেও, মেয়ের বাবা সোনা-দানা বাদে আড়াই লক্ষ টাকা নগদ দেবে।’ কী কুক্ষণেই না শুনেছিল কথাটা!
মায়ের ক্যান্সারের চিকিৎসায় সর্বস্বান্ত হওয়ার পর, শেষ সম্বল বসতবাড়িটাই বন্ধক দিয়ে টাকা যোগাড় করতে বাধ্য হয়েছিল। মা তো বাঁচলোই না, বাড়িটা না ছাড়াতে পারলে মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকুও ঘুচে যাবে এই চিন্তায় যখন দিশাহারা ঠিক তখনই প্রস্তাবটা এসেছিল।
মেয়ে দেখার পর মনটা সায় দেয়নি, তাই না করেই দিয়েছিল । বলেছিল -‘অমন সুন্দর ভাই আমার ,তার সঙ্গে এমনটা করব !’
ঘটক তার অবস্থা জানত বলেই ছিনে জোঁকের মতো লেগেছিলো। বারবার শুনতে শুনতে একসময় দিলীপেরও মনে হলো, বাড়িটাও বাঁচবে আর ভাইও একটা ব্যবসা বা কিছু অন্ততঃ করতে পারবে। বৌ বলেছিল-‘বিয়ের পর চেহারা ভালো হয়ে যাবে ! ‘
দ্বিধান্বিত ভাব নিয়ে ভাইকে বলেওছিল-‘যা একবার দেখে আয়। ‘ দাদার উপর বিশ্বাস ছিল দেখতেও গেল না।
বিয়ের সময় ভাইয়ের শুকনো মুখ দেখে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠেছিল। ভুল করে বসলো না তো! এমন করে ভুলের মাসুল দিতে হবে স্বপ্নেও ভাবেনি। বিয়ের পর থেকে স্তব্ধ হয়ে বসেছিল, একটা কথাও বলেনি। বেগতিক দেখে যে যার মতো সরে গিয়েছিল। এমনটা যে হবে কেউ ভাবতেও পারেনি।
ভাইয়ের ঝুলন্ত শরীরটা দেখে বুকের ভেতরটা জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছিল দিলীপের। ভোর রাতে বাসর ঘরে সবাই ঘুমোলে পরনের ধুতিটা দিয়ে ফ্যানে ঝুলে পড়েছে ছেলেটা।