(রবীন্দ্রনাথের ভুলভাঙা পড়িয়া)
সত্য হে কবি, এ যে ভুল ভাঙা
আর এক ভুল ধরিতে!
এ যে তটিনীর এক কুল ভাঙা
আর এক কুল গড়িতে!
প্রেম বহে যায় বাঁধাত রহেনা,
তাই ফেলে যায় বোঝাত বহেনা—
কেন চাহ তারে একটী স্বপনে
ভরিতে!
সুখ বেদনার এ যে ফুল রাঙা
কালই নিশাশেষে ঝরিতে
মানব মনের এই দখিনারে
রেখনাক সখা বাঁধিয়া,
অনেক সুরভি নিতে হবে তারে
অনেক কুসুম সাধিয়া!
এরে তুমি বহু জীবন ফুটিবে
সার্থ হয়ে এনেকে টুটিবে,
এ যদি বন্দী রহে গো অপরে
বাঁধিয়া—
ব্যর্থ করিয়া ব্যর্থতা ভাবে
মরিবে কাঁদায়ে কাঁদিয়া।
জীবন নিত্য-ক্ষণিক-স্বপন
অনন্ত কাল বয় তো,
এক কোণে এক কালেতে বপন
করিবার ধন নয় তো!
এক মধুনিশা একটী জীবন
অনন্ত মাঝে দুইই একক্ষণ ;
কোটী বঁধু সেও একজন প্রেম-
ময় তো!
যাহা ফেলে যায় বহে চলে যায়
তারেই জীবন কয়তো!
ভুবনে ভুবনে জীবনে জীবনে
বাজিছে প্রেমের বাঁশী যে
চলিবার টানে তাই প্রাণে-প্রাণে
বাঁধিছে মোহের ফাঁসি যে!
তাই যৌবন লীলা অনন্ত
নিখিল বিশ্বে চির বসন্ত,
চাই নিশিদিন অনাহত বীণ
বাজিছে!
কভু প্রেমঘোর কভু আঁখিলোর
নয়নে নয়নে সাজিছে!
ক্ষণিকেরই তরে নাও যারে চাও—
মোহের স্বপনে ভুলায়ে,
আপনাক মালা তার গলে দাও
তার মালা নাও দুলায়ে!
ফুল যাবে ঝরে রবে শুধু ডোর
চুম্বনস্মৃতি-ভরা-আঁখিলোর
পরিমল-ব্যথা রবে কিছু ওর
কুলায়ে!
ক্ষণিকের আছে চির-আনন্দ
অসীম জীবন গুলায়ে!