Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ভালো মানুষ || Samarpita Raha

ভালো মানুষ || Samarpita Raha

ভালো মানুষ

ত্রিদীব আর ছন্দার বন্ধুত্বের জীবন ভালো কাটছিল।ছন্দা যখন মাধ্যমিক দেয় এক দুর্ঘটনায় তার মা মারা যান। তখন বাবা ও ঠাকুমাকে নিয়ে জীবন। ছন্দার মাকে প্রতি মুহূর্তে মনে পড়ে। এমন কপাল ছন্দার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর ঠাকুমাও চলে যান। বাবা সংসারের কাজ সামলাতে সামলাতে নাজেহাল।মেয়ে তখন কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী। বাবার করুণ অবস্থা দেখে মেয়ের চোখে জল এসে যায়। বাবার বন্ধু দিপালী পিসি মাঝে মাঝে আসেন।পিসির একমাত্র ছেলে অর্ণব গ্রাজুয়েশন শেষ হতে না হতেই পোস্ট অফিসে চাকরি পায়।অর্ণবের সাথে ছন্দার ভালোই বন্ধুত্ব।
ছন্দা মাঝে মাঝে অর্ণবদার কাছে বুক কিপিংটা বুঝে নেয়। অর্ণবের প্রিয় বন্ধু ত্রিদীব ছন্দাকে বেশ কয়েকবার দেখে অর্ণবের আড়ালে সরাসরি প্রেম নিবেদন করে।ত্রিদীব বড়লোকের ছেলে, ইঞ্জিনিয়ার দেখতে ও খুব সুন্দর। দুজনের ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প চলে, এমনকি দেখা সাক্ষাৎ ও হয়। একদিন অর্ণব ওদের প্রেমের কাহিনী সব জানতে পারে। ছন্দাকে অর্ণব অনেক বোঝায়, ভেবে চিন্তে পা বাড়াস।ওরা অনেক বড়লোক ,তোকে যদি ওদের বাড়িতে গ্রহণ না করে! অর্ণব প্রিয় বন্ধু ত্রিদীবকে বলে তুই যা ভাবে ছন্দার সাথে মেলামেশা করিস, এবার বাড়িতে জানা।যদি মাসীমা মেশোমশাই পছন্দ না করে ছন্দাকে, তাহলে আর এগোস না। ত্রিদীব হেসে বলে আমার বাবা – মা আপত্তি করবে না।ছন্দার গ্রাজুয়েশনটা সম্পুর্ণ হলেই বলব ভাবছিলাম। ছন্দার ভাগ্য বেশ ভালো, কেননা ত্রিদীবের মা ও বাবা ছন্দাকে পছন্দ করে। মামা ছন্দার পছন্দে রাজী হয়ে যায়.।প্রায় সাড়ে তিনমাস বাদে ওদের বিয়ে। অর্ণবের পোস্ট অফিসে এখন প্রচুর চাপ। একদিন ছন্দার হঠাৎ ফোন,অর্ণবদা আমাদের বাইক অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। একটা বিশেষ কাজে এক জায়গায় গেছিলাম।মনে হচ্ছে ত্রিদীব আর বাঁচবে না। অর্ণব চেঁচিয়ে বলে বিয়েতো আর কয়েক মাস বাকি, তোদের ঘোরাফেরা এত কিসের!

সামনাসামনি হতেই অর্ণব দেখে ছেলের বাবা – মা রীতিমত ছন্দাকে শাসাচ্ছে।এত ঘোরাফেরা কিসের! আজ যদি আমাদের ছেলের কিছু হয়ে যায় , দেখবে মজা। অর্ণব এগিয়ে গিয়ে বলে মেসোমশাই আর কিছু বলবেন না ছন্দাকে।ও তো বাইক চালাচ্ছিল না। অর্ণব এগিয়ে গিয়ে ছন্দাকে বলে ,দেখলিতো বড়লোকের ছেলেকে ভালবাসার নমুনা।তিন চার দিন পর ত্রিদীবের জ্ঞান আসে।মাথায় বেশ কটি জায়গায় আঘাত। কিছু জায়গায় সেলাই পড়েছে।তারপর সুস্থ হয়ে ত্রিদীব বাড়িতে যায়। কিন্তু এক দুই দিন পর ত্রিদীব কাউকে চিনতে পারে না।মা ও বাবা কাছে আছে।তাই বুঝতে পারছে ওরা মা – বাবা।অর্ণব,ছন্দা, কাউকে চিনতে পারে না। তারপর ত্রিদীবের বাবা – মা রাতারাতি কোথায় যে চলে গেল ,কারর কিছু জানা নেয়। ছন্দা যে হবু শ্বশুর বাড়িতে কাউকে বলবে সে যে….। কথাটা* বাকি রয়ে গ্যালো। ছন্দাকে এবার আত্মহত্যা করতে হবেই।অর্ণব ছন্দার হাবভাবে বুঝতে পারে,ছন্দা হয়ত সেদিন কেনো ক্লিনিকে গেছিল।ওরাতো জানত তিনমাস বাদে বিয়ে।ক্লিনিকে গিয়ে ভাবে বাচ্চাটা থাক , একবার বিয়ে হয়ে গেলে আর দোষ থাকবে না। এবার ছন্দার বাবা অর্ণবের মাকে বলে তোর ছেলে কি আমার মেয়েকে বিয়ে করবে! অর্ণব ছন্দাকে বলে তোরতো পেটে বাচ্চা,কি করে বিয়ে করবি।ছন্দা বলে তুমি আমাকে উদ্ধার করো। ছন্দা বলে গর্ভপাত করব।অর্ণব বলে না’রে ছন্দা কাউকে কিছু বলতে হবে না, আমরা এই সপ্তাহে কালিঘাট গিয়ে বিয়ে করে নেব।তাহলে কেউ বুঝতে পারবে না।আর নয় মাস বাদে বাচ্চা হলে সবাই ভাববে একটু আগে হয়েছে।অর্ণব আসলে প্রচণ্ড ভালো ছেলে । তারপর ছন্দা – অর্ণবের বিয়ে হয়।নয়মাস বাদে ছন্দার বাচ্চা হয়। সবাই দেখে বাচ্চা মা ও বাবার মতো হয়নি।ধবধবে ফর্সা। দেখলে মনে হচ্ছে ছোট্ট ত্রিদীব শুয়ে আছে।অর্ণব – ছন্দার ছোট্ট ছানা ত্রিনদকে নিয়ে সুখের সংসার। এইভাবে উনিশ বছর কেটে যায়। হঠাৎ কার্সিয়াং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ক্লাস চলাকালীন ওদের নুতন স্যারকে দেখে সবাই অবাক!ত্রিদীব আর ত্রিনদ বেশ অপরিচিত নাম,গুরু শিষ্যের ব্যাপার, আশ্চর্য ব্যাপার দুজনকে হুবহু এক। মেসে এসে ত্রিনদ কলিকাতায় ফোন করে বলে জানো মা , আমাকে একদম একজন স্যারের মতন দেখতে। আবার নামটা শোনো ত্রিনদ। ছন্দা ও অর্ণব চমকে ওঠে। ছন্দা বলে ত্রিনদ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়াচ্ছে! ত্রিদীব বলে মা ত্রিনদ স্যারের ছবি কাল তুলে আনব।অর্ণব আর ছন্দা সারারাত ঘুমাতে পারেনি। পরদিন ওরা প্লেনের টিকিট কেটে সোজা কার্সিয়াং।ছেলে বাবা – মা আসাতে খুব খুশি। ত্রিদীব স্যার ত্রিনদকে জিজ্ঞেস করে তোমার মায়ের নাম কি বলবে! দুজনে অবাক। ছন্দাকে বড্ড অপ্রস্তুত হতে হয়, হঠাৎ ছেলে বলে ,মা তোমার কি আগে কোথায় বিয়ে হয়েছিল! অর্পণের মুখে ত্রিদীব শুনে নেয় মায়ের ইতিহাস। ত্রিনদকে ত্রিদীব বলে আপনি আবার প্রকৃত বাবা,তবে অর্পণ রায় নিজের জীবন, পদবীও আমাকে দিয়েছেন।তাই অর্পণ রায়ের ছেলে আমি।তবে আপনার মা – বাবাকে একবার দেখতে ইচ্ছে করে যিনি হবু পুত্র বধূর সাথে এরকম অমানবিক ব্যবহার করেছেন। ছেলেকে নিয়ে নিরুদ্দেশ। ত্রিনদ বলে শোন বাবা , আমিতো তখন অসুস্থ ছিলাম,এইসব কিছু জানতে দেওয়া হয়নি।ত্রিনদ বলে আমায় স্যার বলেই ডেকো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *