ভালোবাসার প্রথম কুঁড়ি
পাঠভবনে ক্লাস ফাইভে নতুন ভর্তি হয়েছি।
বাবা ডাক্তার। আসানসোল হাসপাতাল থেকে বদলি হয়ে বাবা নীলরতন হাসপাতালে নিযুক্ত হন।
তাই আমরা সপরিবারে অর্থাৎ মা , বাবা,ঠাকুমা ও আমি কোলকাতায় আসি। তখন সব স্কুলে নতুন বছরের নতুন ক্লাস শুরু হয়ে গেছে।নেহাৎ পাঠভবনের ভর্তি হতে পেরেছিলাম বাবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক রুগীর মাধ্যমে। তিনি পাঠভবনের একজন জনপ্রিয় শিক্ষক ।কথায় কথায় বাবা ঘরের কথা রুগীকে গল্প শোনান।ভাগ্যিস শুনিয়ে
ছিলেন!নাহলে কোথায় যে ভর্তি হতাম!হয়তো এক বছর নষ্ট হতো!
প্রথম দিন স্কুলে গিয়ে বুঝি এরা আমাকে পছন্দ করছে না। সবাই মোটামুটি শিশু শ্রেণী থেকে পড়েছে। আমি যেন ওদের কাছে বেমানান। সবার পাশে বন্ধু ঠিক করা আছে। যেখানে বসতে যাচ্ছি সেখানে বাধা।
শেষে সপ্তক বসতে দেয়।কি সুন্দর দেখতে সপ্তকে।বলে ফেলি তুমি যেমন সুন্দর দেখতে তেমনি মনটাও ভালো।সপ্তক ছাড়া আমার কোন বন্ধু ছিল না।ওর সাথে মাধ্যমিক অবধি বেশ ভাব ছিল।
তারপর একদিন ও আমায় বলল তুই প্রতাপ,ময়ূখ,দীপেনের সাথে বাড়ি ফিরিস কেন? আমি বলি ওরাতো আমার বন্ধু। একসঙ্গে পড়ছি পঞ্চম শ্রেণী থেকে।তারপর থেকে শুধু ঝগড়া।এর সঙ্গে মিশবি না,ওর সঙ্গে মিশবি না। আমি বলি তোর সাথে বন্ধুত্ব রাখা মুশকিল।দিন দিন সাইকো হয়ে যাচ্ছিস।ওটা যে ওর আমার প্রতি প্রেম বুঝি নি। বুঝলাম যখন শুনলাম ওরা শিলং চলে গেছে।সত্যি ফাঁকা লাগছিল।মন খারাপ লাগত। বছর দুয়েক পরএকদিন একটা খামে চিঠি আসে আমার নামে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কেমন ফল করলি? ঠিকানাটা দেয় নি তাই উত্তর দিতে পারি নি।তারপর আর চিঠি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াকালীন আসে নি। ভালোবাসার প্রথম কুঁড়ি ঝরে যায়।
এরপর রাজীবের সাথে বন্ধুত্ব হয়।এক সঙ্গে চাকরি । অবশেষে বিবাহ হয়।এক সন্তানের জননী। সংসার শ্বশুর,বর ও ছেলে নিয়ে টক ঝাল মিষ্টি ভাবে চলছিল। দুজনে চাকরি করলে ছেলেটার অসুবিধা হচ্ছিল।তাই চাকরি ছেড়ে দিয়ে আদর্শ গৃহবধূ হয়ে যায়। ছেলেটা সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে তখন রাজীব জানায় সে আরেকজনকে ভালোবাসে।ডিভোর্স চায়।ডিভোর্সের শর্তানুযায়ী একটা ফ্ল্যাট ও টাকা দেয়।তারপর বাবা কে না নিয়ে চলে যায়। শ্বশুরমশাই তো ছেলের দাদু ও আমি ও বাবা বলতাম।ওনাকে কি ফেলে দিতে পারি। শ্বশুরবাড়িতে শ্বশুর ঘৃণায়,লজ্জায় আত্মহত্যা করতে যান। আমি ও ছেলে অনেক বুঝিয়ে ঠিক করি।রাগে শ্বশুরর মশায় ছেলের শ্রাদ্ধ করান।আমাকে শ্বশুর-বাড়িতে সব দায়িত্ব পালন করে যেতে হয়।ডিভোর্সী হয়েও সংসারের সব দায়িত্ব পালন করি। ছেলে যখন মাধ্যমিক দেয় ছেলের দাদু মারা যান। মুখাগ্নি নাতি করে।
এইসময় ফেসবুক করা শুরু করি।নাম ফেলে রাজীবের বৌকে দেখি।সবার অলক্ষ্যে চোখের জল ও ফেলি।
ফেসবুকে একদিন দেখলাম ভালবাসার প্রথম কুঁড়ি। মেসেঞ্জারে লিখলাম উচ্চ মাধ্যমিকের পর কি করলে?
তারপর অবসর কাটত সপ্তকের সাথে মেসেঞ্জার এ। সপ্তক ও ডিভোর্সী। একটা মেয়ে। স়ংসার চালাতে হিমশিম। গতবছর আমাদের বিয়ে হয়।সপ্তকের মেয়ে আর আমার ছেলে প্রায় জোর করে আমাদের বিয়ে দিয়েছে। আমি ও সপ্তক ছেলে ও মেয়ে নিয়ে বেশ সুখে আছি। ভালোবাসার প্রথম কুঁড়ি
এখন প্রস্ফুটিত কুসুম। ছেলে কানাডা ও মেয়ে ইউরোপ। আমি আর সপ্তক সত্যি ভালো আছি।