Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ভালবাসা বৈভব || Sadhana Chakrabarty

ভালবাসা বৈভব || Sadhana Chakrabarty

ভালবাসা বৈভব

আজ চান ( চাঁদ) রাত।রমিজ আলী আর কুসুমের বিবাহিত জীবনের এগার মাস। ওদের টোনাটুনির সংসার। গত একটা মাস ক্ষেতের কাজে ব্যস্ত ছিল রমীজ আলী তাই আজ শেষ বাজারে সে ঈদের সদাই করতে গেছে। স্বামী ‘র ঘরে এ বছর কুসুমের প্রথম ঈদ। ছোট ননদ দু’জনকে নেমতন্ন করেছে কুসুম। ওরা পরের বাড়িতে ভাল আছে কিন্তু ভাই যদি উৎসব পার্বণে বোনদের খোঁজ খবর না নেয় তাহলে শশুর বাড়িতে ওরা ছোট হয়ে যাবে না? তাছাড়া যেখানে সবাই মিলে আনন্দ সেখানেই তো উৎসব! তখন সন্ধ্যা। বাইরে সরগোল শুনে কুসুম এগিয়ে গিয়ে দেখে আশে পাশের বৌ ‘ ঝি রা বাচ্চা ‘দের নিয়ে উঠোনে জড় হয়ে চাঁদ দেখছে। সবাই মিলে হৈ হুল্লোড় করে চাঁদ দেখে যার যার ঘরে ফিরে গেল। কুসুম রান্না ঘরে গিয়ে খড়ি কাঠে আগুন জ্বেলে পিঠে ভাজতে শুরু করল। আগেই সব কিছু তৈরী করে রেখেছিল। পিঠে তৈরী করতে করতে মায়ের কথা মনে পড়ে কুসুমের। প্রতি বছর চান রাতে মা মুখে তুলে পিঠে খাওয়া’তো। ওর দু-চোখ জলে ঝাপসা হয়ে আসে।

সন্ধ্যা অতিক্রান্ত। রমিজ আলী বাজার থেকে ফিরে ব্যাগ গুলো কুসুমের হাতে তুলে দেয়। কুসুম ওগুলো গুছিয়ে রেখে বলে হাত মুখ ধুয়ে রান্নাঘরে এসো। রমিজ আলী কিছুক্ষণের মধ্যে একটা জলচৌকি নিয়ে রান্না ঘরে এসে কুসুমের পাশে বসল। কুসুম একটা প্লেটে কয়েক ‘টা পিঠে সাজিয়ে স্বামী’র হাতে দিয়ে বলল, অনেক দূর পথ হেঁটে এসেছেন। এবার পিঠে খান।আমি চা দিই। রমিজ একটা পিঠে ভেঙে এক টুকরো কুসুমের মুখে দিয়ে বলে তুই ও খা। দু’জনে একসাথে ভাগ করে খাই। পিঠে খাওয়া শেষ হলে রমিজ আলী নতুন ব্যাগ গুলো খুলে কুসুম’কে নতুন জামা কাপড় দেখায়। সাদা পাঞ্জাবি, পায়জামা আর নতুন টুপি একসাথে হাতে দিয়ে রমীজ আলী বলে দেখ তো কুসুম, আমার কাপড় গুলো কেমন হলো। কুসুম এদিক ওদিক করে কাপড় গুলো দেখে ভাঁজ করে রাখে। রমিজ এবার একে একে একটা নীল শাড়ী আর একটা লাল তাঁতের শাড়ী কুসুমের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলে একটা তোর চান রাতে’র শাড়ী আরেকটা ঈদের দিনের জন্য। কুসুমের মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়! তোর পছন্দ হলো কুসুম? রমীজ আলী বলে। কুসুম মাথা নেড়ে বলে খু উ উ উ ব….!

রমীজ আলী বৌকে কাছে টেনে সোহাগে ভরিয়ে দেয়। চান রাতের চাঁদনী যেন তাঁর ঘরে নেমে এসেছে! মা বাপ হারা রমীজ আলী ‘র ধূসর জীবন টা কুসুম ঠিক জোছনা’র মত মায়া দিয়ে আলোকিত করে রেখেছে। তা না হলে..! পরদিন ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে চান সেরে রমিজ আলী নতুন কাপড় পরে মসজিদে চলে যায় ঈদের নামাজ আদায় করতে। কুসুম ঘরে নামাজ পড়ে রান্না ঘরে ব্যস্ত। এমন সময় রমীজ আলী ফিরে আসে। কুসুমের ব্যস্ততা দেখে রমীজ আলী দুটো বাটি’তে সেমাই আর প্লেটে সুজির হালুয়া পিঠে সব সাজিয়ে এনে কুসুমের হাত ধরে বলে আয় কুসুম, দুজনের জন্য নিয়েছি কিন্তু!

খাওয়া দাওয়া শেষ হলে রমিজ আলী বলে তোর খালি ব্যস্ততা! কাজ পরে করবি। আমি তোকে সাহায্য করবো। আগে লাল শাড়ী’টা পরে আয় দেখি। কুসুম ভাঁজ খুলে লাল শাড়ী পরে। মা বাবা’র দেয়া বিয়ের ছোট খাটো গয়না গুলো একে একে পরে। এবার একটা হাত খোঁপা করে আয়না’র সামনে এসে দাঁড়ায়। নিজের চোখে নিজ’কে দেখে কুসুম উল্লসিত হয়ে ওঠে। এই এগারো মাসে স্বামী ‘র সোহাগ পেয়ে সত্যি ‘ই তো সে অনেক সুশ্রী হয়ে গেছে! কুসুমের দেহ বল্লরী’তে যেন ভরা বসন্ত! আর মুখাবয়ব জুড়ে অদৃশ্য সোহাগ বিলাস! কুসুম এবার ঘোমটা টেনে রমিজ আলী ‘র সামনে এসে উপস্থিত হয়। রমিজ আলী বৌকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে ব চুমু খায়!আর অপলক তাকিয়ে থাকে তাঁর মুখের দিকে। কুসুমের মনে আজ আনন্দ বান ডেকেছে! স্মিত হেসে কুসুম বলে ওমনি চেয়ে কি দেখছেন? রমিজ আলী বলে, আমার জান পাখি রে দেখি! তুই আমার আঁধার ঘরের আলো! এই সাধারণ গৃহস্থ ঘরের মানুষ গুলো ‘র জীবনে খরা আসে, বন্যা আসে কিন্তু ওদের ভালবাসা’র রাজ্যে কোন অপশক্তি’র অণুপ্রবেশ নেই। তাই’তো ওরা ভালবাসা বৈভব নিয়ে চিরদিন ধনী!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress