Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ভারতবর্ষ || Satyajit Chowdhury

ভারতবর্ষ || Satyajit Chowdhury

ভারতবর্ষ

টি.ভি-তে খবরটা দেখাতেই আনন্দে চেয়ার ছেড়ে লাফ মেরে উঠলাম l দুই মুঠ আবির আকাশে উড়িয়ে দিয়ে মুখে আওড়ালাম, ‘জয় শ্রীরাম’l মনে মনে রামলালার বিগ্রহটা কল্পনা করলাম l টুক করে একটা প্রণাম সেরে ফেললাম l
ঘর থেকে বেরোতেই পাশের মসজিদ থেকে আজানের মিঠেসুর কানে ভেসে আসলো l শ্রদ্ধায় মাথা নত হলো অজান্তে l দূর থেকে দেখতে পেয়ে মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছিপছিপে লম্বা আকৃতির ছেলেটা হাত তুলে আমাকে ইঙ্গিত দিল l চিনতে ভুল হলো না l পাড়ার বন্ধু, ইসমাইল l আমিও হাত তুলে প্রতুত্তর দিলাম l মনে পড়ল, গত ঈদে ইসমাইলের বাড়িতে বন্ধুরা মিলে কি মজাটাই না করেছিলামl আমিনা চাচী আদর করে আমাদেরকে সেয়াই-এর পায়েস খাইয়েছিলেন l ইসমাইল, আসলাম ও ওদের ভাইরা মিলে সুন্দর জিকির গেয়েছিল l অটো করে একটু পথ এগোতেই শুনতে পেলাম, দূরের গুরুদ্বারাতে বাজছে সেই চিরপরিচিত সুরেলা গুরুবাণী l সামনে গুরুপরব যে l এবার গুরু নানকজীর জন্মের 550 তম পূর্ণ তিথি l তাই বড় করে লঙ্গরের আয়োজন থাকবে এবার l ভাণ্ডারায় মানুষের আগমন হয় লাখ খানেক l খুব ভালো ব্যবস্থা l করসেবকদের নিষ্টা ও পরিশ্রম করার ক্ষমতা দেখার মতো l বিশাল কর্মকাণ্ড মেশিনের মতো হয়ে যাচ্ছে, কোথাও একচুল অবাবস্থার চিহ্ন দেখা যায় না l তাদেরকে মনে মনে কুর্নিশ জানালামl ভান্ডারার সুজি-লুচি আমার সবচেয়ে প্রিয় l অনেকদিন আসা হয় নি l এবার যেতেই হবে l অটো থেকে নেমে বাজারের দিকে এগোচ্ছি l পথের পাশে পুরোনো একটি গির্জাঘর, ব্রিটিশ আমলের l দেখতে পেলাম, কয়েকজন খ্রীষ্টানধর্মাবলম্বী লোক জমবেত হয়েছেন রোববারের বিশেষ প্রার্থনা সভায় যোগ দিতে l নজরে এলো, পরিচিত সহকর্মী এন্ড্রোস সাহেব ও আছেন সেখানে l আমাকে দেখে মাথা ঝাঁকিয়ে একটু হাসলেন, আমিও হাসলাম l মনে পড়ল, ছোটবেলার শিলঙের কথা l ক্রিস্টমাসের পবিত্র বড়দিনে আমিও বন্ধু ম্যাক্রোস, ডেভিডদের সাথে লাইতুমখরার বিখ্যাত ক্যাথেড্রাল চার্চে যেতাম বিশেষ প্রার্থনাসভায় যোগ দিতে l প্রার্থনা সংগীতের দুইটি কলি গুনগুন করে স্মরণ করলাম l

দু’পা এগোতেই দেখলাম, সামনে বিরাট শোভাযাত্রা : পুলিশ রাস্তা আটকে দিয়েছে l কারণটা জানতে ভিড় ঠেলে সামনের দিকে চলে এলাম l শুনলাম, শহরে জৈন সম্প্রদায়ের গুরু মহারাজের আগমন ঘটেছে, তাই শোভাযাত্রা l মনে পড়ল, ফি বছর এমনটাই হয় l মহিলাদের পরনে লাল পাড় দেওয়া গেরুয়া রঙের শাড়ি, পুরুষদের পোশাক সাদা পায়জামা ও উপরে হাল্কা গেরুয়া রঙের পাঞ্জাবী l সারিবদ্ধভাবে সুশৃখল ভক্তরা নামকীর্তন করতে করতে শহর পরিক্রমা করছে l কি অপরূপ দৃশ্য l দুই এক করে কপালে ঠেকালাম l চলাচলে অসুবিধা হলেও দেখলাম, লোকেরা বেশ উপভোগ্য করছে এই রঙীন উৎসবের পরিবেশ l কেউ কেউ মোবাইল বের করে ফটো তুলছে, কেউ বা ভিডিওগ্রাফিও করছে l

ভিড়টা একটু হাল্কা হতেই আবার হাঁটা শুরু করলাম l গন্তব্য শহরের এক কোণে পাহাড়ের টিলায় অবস্থিত পুরাতন বৌদ্ধ মন্দির l প্রায় প্রতি রোববার সময় পেলেই চলে আসি বৌদ্ধ মন্দিরে l একটু সময় ধ্যান করলে সারা সপ্তাহের ক্লান্তি নিমিষে যেন দূর হয়ে যায় l মন্দিরটি বেশ পুরানো l দীর্ঘদিন সংস্কারের কাজ হয়নি মন্দিরে l কিছু জায়গায় ফাটল ধরেছে l তার দিয়ে বাঁধা রয়েছে l চারদিকটা গাছপালায় ভর্তি l তার মধ্যে আমলকি গাছও আছে l মাটি থেকে গোটা চারেক আমলকি কুঁড়িয়ে পকেটে ভরলাম l একটি মুখে দিয়ে হাল্কা চিবুতে পরিচিত স্বাদ জিব্বায় স্পর্শ করলো l বিকেল হলেই পাশের গ্রামের শিশুরা মাঠে খেলতে খেলতে এই দিকটায় চলে আসে আমলকির লোভে l মন্দিরের ভক্তসংখ্যা এমনিতেই কম l দিন দিন আরও কমে যাচ্ছে l হঠাৎ করে যেন ইতিহাসের পাতায় ঢুকে পড়লাম l সম্রাট অশোকের সময় বৌদ্ধধর্ম প্রায় গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল l 1200 খ্রিস্টাব্দ থেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী লোকের সংখ্যা কমতে শুরু করে l বর্তমানে ভারতে 1% ও নিচে বৌদ্ধ ধর্মবলম্বীলোকের সংখ্যা l হিমালয় পার্শ্ববর্তী ভারতের রাজ্যগুলিতে, শ্রীলংকা, চীন প্রদেশের তিব্বত, পূর্ব এশিয়ার জাপান, তাইল্যান্ডে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী লোকের বাস l
মনে পড়ল কয়েক মাস আগে তাইল্যান্ড ভ্রমনের কথা l ব্যাংককের রাস্তাগুলোর নামকরণ হয়েছে – রামা-দুই, রামা-চার রাজাদের নামে l ব্যাংককের প্রধান গন্তব্যস্তল – গোল্ডেন বুদ্ধা টেম্পল l সুবর্ণ বুদ্ধের সামনে হাঁটু গেড়ে নতজানু হয়ে মাথা ঠেকালাম মাটিতে l প্রার্থনা করছি l পাশেই স্থানীয় একজন জোরে জোরে অবোধ্য ভাষায় মন্ত্রাচারণ করছে l হঠাৎ কানে এলো, চির পরিচিত সেই অমোঘ বাণী -‘বুদ্ধম শরনং গচ্ছামি, ধর্ম্যাং শরনং গচ্ছামি, সংঘম শরনং গচ্ছামি’l গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো l আনন্দাশ্রুতে চোখের কোণটা ঝাঁপসা হয়ে এলো l এই আমাদের মহান ভারতবর্ষ l

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress