ভয়ঙ্কর
বিবাহ সম্পন্নের পর খাওয়া শেষ করেই বরযাত্রীর গাড়ি কনের বাড়ি থেকে স্টার্ট নিল, তখন প্রায় রাত একটা।
দীঘার কাছাকাছি কনের বাড়ি।
মনে মনে ভাবি ভাইটা প্রেম করল এতদূরে।
দীঘা থেকে বারাকপুর,ফিরতে ফিরতে সকাল হয়ে যাবে।কনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাসে উঠবার সময় একজন এসে বললেন, আমি কনের পিসেমশাই, আপনাদের বাসে যদি একটু নিয়ে যান,বড্ড উপকৃত হবো। বাবা, জেঠু ভদ্রলোকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কোথায় থাকেন?
উনি বলেন আমি ব্যারাকপুর নেমে যাব। ওখান থেকে বাস ধরে শ্যামনগর চলে যাব।বাস ছুটছে, হঠাৎ বাসের ব্রেক ফেল, সবাই কান্নাকাটি শুরু করে। বাস যে ভাবে ভয়ঙ্কর গতিতে ছুটছে,আর বাঁচার সম্ভব ছিল না। সবার পরিত্রাহি চিৎকার,যেভাবে হোক বাস থামান। হঠাৎ আমার পেট মোচড় দিয়ে ওঠে ,কি হলো!
বেশি তো খাই নি। মারাত্মক পেয়ে গেল,মনে হচ্ছে বাসেই হয়ে যাবে।
বাসের সবার এক অবস্থা।ওই পিসেমশাই হঠাৎ ছুটে গিয়ে বাস চালকের সাথে ধ্বস্তাধস্তি শুরু করে।বাস আচমকা থেমে অন্ধকার মাঠে কিছু উঁচু উঁচু টিলার ধারে দাঁড়িয়ে পড়ে।
সবাই যে যার মতো কাজ সেরে নেয়। বিয়ের বাড়ি থেকে যে খাবার জল এনেছিল, সবার কাজে লেগে যায়।
সকালের আগে বাস ছাড়বে না।তাও নতুন বাস আসবে, তারপর। ঘুটঘুটে অন্ধকার। লাইটপোষ্টের আলো ও নেই।কোথা থেকে এক কান্নার শব্দ ভেসে আসছে।মনে হয় পেঁচার কান্না।
সারারাত প্রায় সবাই মাঠে বসে। মিনিটে মিনিটে পেট পরিষ্কার চলছে। সবাই যেন ধুঁকছি।
সবে রাত তিনটা, হঠাৎ বাবার ফোনে রিং।।বাবাকে মেয়ের বাবা জিজ্ঞেস করে দাদা আপনারা কি এখানে কোনো হোটেলে উঠেছেন। বাবা বলে কেন বলুন তো!
না আপনাদের দেখতে পাচ্ছি না, এদিকে বরযাত্রীর বাস দাঁড়িয়ে আছে। বাবা চিৎকার করে বলে,কেমন কথা বলছেন!
আমরা তো বাসে করে ফিরছিলাম,তারপরের ঘটনা বাবা ছোট করে বলেন। সবার অবস্থা খুব খারাপ।
মেয়ের বাবা চিৎকার করে বলতে থাকেন ,এটা কী করে সম্ভব!
বাস এখানে, আপনারা কার বাসে উঠেছেন!
বাবা তখন বলে চিন্তা করছেন কেন?মেয়ের পিশেমশাই সঙ্গে আছেন।
মেয়ের পিশেমশাই কে?
আরে বেয়ান যিনি শ্যামনগর থাকে।
উনি তো গতবছর আমাদের বাড়ির থেকে ফেরার সময় বাস দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
কি আবোল তাবোল বলছেন।এই নির্জন মাঠে সবাই মরব!!
মাঠের মধ্যে কারা নাকি গলায় বলছে, তোরা আমাদের শান্তির জায়গায় নোংরা করেছিস।জানিস না এই মাটির তলায় আমরা শুয়ে আছি।
তখন সবার হাত পা কাঁপতে থাকে।
সবাই হইওয়ে দিয়ে ছুটতে থাকি। কিছুক্ষণ পর বাস আসে।
পিশেমশাই আর কোথায়!
সে যদি সত্যি ভূত হয় ,তাকে বাসে তোলার ইচ্ছে নেই।
সবাই মিলে চিৎকার করে বলতে থাকি ওই ভূতের মন্ত্র–
ভূত আমার পুত…পেত্নি আমার ঝি…রাম লক্ষণ সঙ্গে আছে
ভয়টা আবার …!
আমি মনে মনে বলি পিশেমশাই ভাগো দেখি।রাম রাম রাম।