Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ভবিতব্য || Chhanda Paul

ভবিতব্য || Chhanda Paul

বসে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগছে না , মাকে এককাপ চা করে দিয়ে নিজের জন্যে ও এককাপ চা করে নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে বসে ছিল দেবারতি। আজ কালিপূজো। চারদিকে আলোয় আলোময়।বাজী পটকার আওয়াজে মায়ের কষ্ট হয়। ঘুমের ঘোরে সবসময় পড়ে থাকে বিছানায় , দেবারতি র অসুস্থ মা। আজ তিন বছর আটমাস ধরে এক‌ই অবস্হা। অ্যাকসিডেন্টে বাবা স্পট্ ডেড আর মায়ের স্পাইনাল কডে গুরুতর আঘাত। সেই থেকে দেবারতি মাকে নিয়ে একাই লড়ে যাচ্ছে, স্কুলের চাকরিটা পেয়েছিল বলে বাঁচোয়া। সারাদিনের জন্য এক বিধবা পরিচারিকা ঘরের সকল কাজ সেরে দেবারতি স্কুল থেকে ফেরার পর বাসায় ফিরে যায়। বাজার-হাট সবকিছু ই ঐ ভদ্রমহিলা করে দেয়। দেবারতির স্কুলে গিয়ে মায়ের জন্য অতটা ভাবতে হয়না। যদিও আজ—- এতোগুলো দিন মাস বছর কেটে গেল দেবারতির ভাবতে ভাবতেই। মায়ের অসহায় দৃষ্টি ওকে আরো বেশি করে ভাবায়। মায়ের কাছে শুনেছে, সকলের অমতে দেবারতি র মা আর বাবা বিয়ে করেছিল। দুবাড়ির আপত্তি সত্ত্বেও তারা নিজেদের ভালোবাসা কে জিতিয়ে দিয়েছিল, কিছুতেই হারিয়ে যেতে দেয়নি। যারজন্যে সকল আত্মীয় স্বজন ওদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ।ওদের অপরাধ ছিল ব্রাহ্মণ-কন্যা হয়ে নীচুজাতের ছেলে র সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিল। সকলের আপত্তি কে নস্যাৎ করে দিয়ে দেবারতির মা সুলেখা এককাপড়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল। তবে যে ভুল সুলেখা করেছিল তা হলো তার
সকল সার্টিফিকেট,মার্কসীট এগুলো নিয়ে আসতে ভুলে গিয়েছিল। যারজন্য একটা চাকরি যা সে অনায়াসেই জুটিয়ে ফেলতে পারত, কিন্তু পারেনি। কারন সুলেখা মেধাবী ছাত্রী ছিল এবং রেজাল্ট ও অত্যন্ত ভালো। দেবারতির বাবা শুভময় অভাবের কারণে হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করে একটা প্রাইভেট ফার্মে খুব সামান্য বেতনের চাকরি করত। আর শুভময়ের ছিল ছবি আঁকার নেশা। অসম্ভব সুন্দর
আঁকার হাত ছিল । কিন্তু শিল্পী শুভময় তার সৃষ্টি বিক্রি করতে রাজী ছিল না। দেবারতির জন্মের পর দেবারতির বাবা অন্য লোক মারফৎ দেবারতি কে বলে পাঠিয়েছিলেন,—– যদি শুভময় রাজী থাকে তবে দেবরতির বাবার সুপারিশে একটি ভালো চাকরি পেতে পারে। কিন্তু সুলেখা তার স্বামী র অমতে কখনো কিছু করতনা কারন সুলেখা শুভময় কে কখনো কারো কাছে ছোট হতে দিতে চায়না। তাই তার বাবার প্রস্তাব একমুহুর্তের মধ্যে নাকচ করে দিতে দ্বিধা বোধ করেনি। শিশুকন্যা দেবারতিকে বড় করে তুলতে সুলেখা ও শুভময় দুজনে উঠে পড়ে লেগেছিল। সুলেখা বাড়িতে বসে টিউশন পড়াতে লাগলো , প্রচুর স্টুডেন্ট পেয়ে গেল মাসছয়েকের মধ্যে ই। আর শুভময় ওভারটাইম করতে শুরু করল। দুজনের মনে একটাই ভাবনা দেবারতি কে মানুষের মতো মানুষ করে তুলতে হবে। একটু বড় হতেই বোঝা গেল মায়ের মতই মেধাবী হয়েছে তার মেয়ে,আর বাবার মতো আঁকার হাত। সময়ের স্রোতে বছরের পর বছর কেটে গেল ধীরে ধীরে তাদের মেয়ে বড় হয়ে উঠলো। এম এ তে ইউনিভার্সিটির সেরা ছাত্রী সকলের সেরা প্রমাণিত হল। বি এড এর ফল করল অনুরূপ। একটা হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে চাকরি হলো। সেদিন সুলেখা আর শুভময়ের জীবন সার্থক হয়ে উঠলো। স্কুলে জয়েন করে মা আর বাবাকে পাশে বসিয়ে বলেছিল দেবারতি,–“আমি কখনও বিয়ে করবো না । তোমাদের কাছে আজীবন রয়ে যাব। আর তোমাদের সকল না পাওয়া কে আমি যতটা সম্ভব পাইয়ে দিতে সচেষ্ট হবো। এই আমার তোমাদের কাছে অঙ্গীকার।” মেয়ের কথা শুনে বাবা-মা দু’জনেই হতভম্ব! বলছে কি তাদের আদরের একমাত্র সন্তান। তবু ও সেসময় মেয়ে কে তারা দুজনে কিছুই বলল না, শুধু একটু হেসে শুভময় বলল,–“শোনো লেখা পাগলিটা কি বলে!” সুলেখা র দু’নয়ন জলে ভরে ওঠে। এতো দুঃখ,গ্লানি সব যেন আজ আত্মজার অপত্যস্নেহে ভেসে গেল দূর দিগন্তে পানে। সুলেখা ও শুভময় তাদের সন্তান কে মানুষ করে তুলতে পেরেছে এতে করে ওদের আত্মীয় স্বজন যেন অনেক বেশি অভিসম্পাত করছে ওদের। কারন সুলেখা-শুভময়ের বিয়েটা যারা মেনে নিতে পারেনি, তারা অন্তর থেকে কামনা করেছিল ,ওরা যেন দাম্পত্য জীবনে কিছুতেই সুখী হতে না পারে। অন্তরালে হাসে অন্তর্যামী। তাঁর কারসাজি বোঝে কার সাধ্য? দেবারতি র সাফল্য শহরের সকলকে অবাক করেছিল। চা জুড়িয়ে জল হয়ে গেছে কখন, খেয়াল ই নেই দেবারতির। ভাবনার জগতে ডুবে গিয়েছিল সে। মায়ের ডাকে সম্বিৎ ফিরে পায়। উঠে দৌড়ে গিয়ে মাকে ঔষধ খাইয়ে দেয়। সুলেখা সব বোঝে কিন্তু নিরুপায়! মেয়ের ভবিষ্যত
ভেবে মাঝে মাঝে অজান্তেই কেঁপে ওঠে অন্তরাত্মা। শুভময় এভাবে হঠাৎ করে চলে যাবে তা ছিল স্বপ্নের বাইরে। দেবারতি কখনো মায়ের সামনে নিজেকে দুর্বল দেখায় না। কখনো মাকে বুঝতে দিতে চায়না সে কতটা অসহায় বোধ করে। বাবার কথা মায়ের কাছে হেসে হেসে গল্প করে যাতে , বাবার মৃত্যু টা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যায় মায়ের কাছে। দেবারতি নিজের বুকের মাঝে লুকিয়ে রেখেছে এক সমুদ্র ব্যথার বারি। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাতের অন্ধকারে পাশাপাশি শুয়ে মা মেয়ে দুজনেরই বালিশ ভিজে যায়,নীরব কান্নায়। দূরে আলোকমালায় দেবারতি- সুলেখা র জীবনের সকল আশা আকাঙ্খা মিলে মিশে একাকার হয়ে গেল। জীবন বড় বৈচিত্র্যময়। এমন তো হ‌ওয়ার কথা ছিল না। অথচ এমন‌ই হলো। হয়তোবা যা হবার তাই হয়,এটাই ভবিতব্য!!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress