Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ব্লু-প্রিন্ট || Nihar Ranjan Gupta » Page 9

ব্লু-প্রিন্ট || Nihar Ranjan Gupta

পালাম এয়ারপোর্ট

পালাম এয়ারপোর্ট।

বেলা আটটার আগেই কিরীটী এসে এয়ারপোর্টে উপস্থিত হলো সুব্রতকে নিয়ে। তার বেশভূষা আজ সম্পূর্ণ অন্যরকম।

মরক্কো দেশীয় এক সুলতানের মত। চোগা চাপকান, মাথায় হ্যাট, তার উপরে কালো মোটা কর্ড পাচানো-চোখে কালো চশমা।

চতুর্বেদীকে দেখা গেল সে ইন্টারন্যাশানাল কাউন্টারের কাছেই রয়েছে। আটটা পঁচিশ।

দেখা গেল শকুন্তলাকে এয়ারপোর্টে এসে একটা দামী গাড়ি থেকে নামতে। তার হাতে একটা হ্যান্ডব্যাগ।

টিকিট চেকিংয়ের পর শকুন্তলাকে দেখা গেল ঘন ঘন এদিক ওদিক অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। হয়তো কারো জন্য অপেক্ষা করছে শকুন্তলা।

কিরীটী দূর থেকে লক্ষ্য রাখে।

নটা বাজতে মিনিট দশেক আগে একটি বিশিষ্ট এমব্যাসীর গাড়ি এসে দাঁড়াল এয়ারপোর্টের সামনে। সেই গাড়ি থেকে নামল একজন মধ্যবয়সী ভদ্রলোক। পরনে দামী সুট।

ভদ্রলোক লাউঞ্জে এসে ঢুকতেই শকুন্তলা এগিয়ে গেল তার কাছে।

চতুর্বেদীর সঙ্গে কিরীটীর চোখে চোখে কথা হয়ে যায়। চতুর্বেদী প্লেন ড্রেসেই ছিল। ওদের কাছাকাছি এগিয়ে যায়।

মিঃ আলাম, আমার ঘড়িটা এনেছেন?

হ্যাঁ, এই যে—

মিঃ আলাম পকেট থেকে একটা হাতঘড়ি বের করে দিল শকুন্তলাকে।

থ্যাংকস।

তাহলে আমি চলি!

আসুন।

আলাম দুপা এগিয়েছে, চতুর্বেদী এসে শকুন্তলার সামনে দাঁড়াল—কিরীটীও এগিয়ে আসে।

গুড মর্নিং মিস খাতুন।

কে?

চমকে ফিরে তাকায় শকুন্তলা।

আমি ইনটেলিজেন্স সার্ভিসের লোক। আপনাকে একবার আমার সঙ্গে আমাদের হেডকোয়ার্টারে যেতে হবে।

বাট হাউ দ্যাট ইজ পসিবল অফিসার, আমার প্লেন এখুনি ছাড়বে!

সে তো আমি জানি না—আমার ওপর যা অর্ডার আছে—

বাট হোয়াই? কেন?

এবারে কিরীটী এগিয়ে এলো, চোখের কালো চশমাটা খুলে ফেলল, চিনতে পারছেন আমাকে মিস মীনাক্ষী খাতুন?

কে আপনি?

সে কি! এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন সারারাত ট্রেনে একসঙ্গে মাত্র দুদিন আগে এলাম–

মিঃ রায়।

হ্যাঁ, কিরীটী রায়। বুঝতেই পারছেন আপত্তি জানিয়ে লাভ হবে না—অফিসারের সঙ্গে ওদের হেডকোয়ার্টারে চলুন—ইফ ইউ ডোন্ট লাইক টু ক্রিয়েট এ সিন হিয়ার, অ্যাট দিস এয়ারপোর্ট! ইয়োর গেম ইজ আপ!

কি বলছেন যা-তা পাগলের মত?

চলুন হেডকোয়ার্টারে, সেখানেই সব জানতে পারবেন—-চলুন—

শকুন্তলা আর আপত্তি জানায় না।

মাইকে তখন অ্যানাউন্স শুরু হয়েছে–প্যাসেঞ্জার প্রসিডিং টুওয়ার্ডস হংকং ম্যানিলা আর রিকোয়েস্টেড

ইনটেলিজেন্স সার্ভিসের হেডকোয়ার্টারে মীনাক্ষী খাতুনকে নিয়ে ওরা এলো।

মীনাক্ষী বলে, নাউ টেল——অফিসার, এসবের মানে কি আমাকে ধরে নিয়ে এলেন। কেন এয়ারপোর্ট থেকে?

কথা বললে কিরীটীই, মিস খাতুন, এবারে ডকুমেন্টটা বের করে দিন—

ডকুমেন্ট! কিসের ডকুমেন্ট? কি বলছেন পাগলের মত?

পাগল যে আমি নই, আপনি তা ভাল করেই জানেন। এখন বের করুন সেই ডকুমেন্ট—যেটা ভায়া হংকং একটি পররাষ্ট্রে পাচার করছিলেন—প্রতিরক্ষা দপ্তরের একটা জরুরী ডকুমেন্টের ব্লু-প্রিন্ট।

আমি একটা ইমপরটেন্ট ডকুমেন্টের ব্লু-প্রিন্ট নিয়ে যাচ্ছিলাম পাচার করতে, কে বললে আপনাকে?

অস্বীকার করার চেষ্টা করে কোন লাভ হবে না মিস খাতুন।

বেশ তো, আমার হ্যান্ডব্যাগ সার্চ করে দেখুন। তারপর তির্যক দৃষ্টিতে কিরীটীর দিকে তাকিয়ে বললে মীনাক্ষী, চান তো আমার বডিও সার্চ করতে পারেন।

চতুর্বেদী বললেন, একজন মহিলাকে ডাকবো স্যার? ঊর্ধ্বতন অফিসার কিরীটীর মুখের দিকে তাকালেন।

কিরীটী মৃদু শান্ত গলায় বললে, তার আর প্রয়োজন হবে না, মিস খাতুন, আপনার হাতঘড়িটা খুলে দিন।

হাতঘড়িটা! হেসে ফেললে মীনাক্ষী খাতুন, তাহলে এতক্ষণে আপনার ধারণা হলো মিঃ রায়, আপনাদের বহু মূল্যবান ব্লু-প্রিন্টটা আমার হাতঘড়ির মধ্যেই আছে।

ঘড়িটা খুলে দিন—

এবারে কিন্তু মিস খাতুনের মুখখানা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে যায়।

কি হলো, দিন।

দিচ্ছি—বলতে বলতে মিস খাতুন তার হ্যান্ডব্যাগটা খুলে কি একটা বের করে চট করে মুখে পুরে দিলো।

এবং ঘরের মধ্যে উপস্থিত সকলে কিছু বুঝবার আগেই মীনাক্ষী খাতুনের দেহটা সশব্দে মেঝেতে পড়ে গেল।

কি হলো?

কিরীটী তাড়াতাড়ি ঝুঁকে পড়ে মীনাক্ষীর পাল্স দেখে, তারপর মাথা নেড়ে বলে, শি ইজ ডেড!

ডেড?

বিস্ময়-বিহুল কণ্ঠে কথাটা উচ্চারণ করেন চতুর্বেদী।

কিরীটী সে কথায় যেন কোন কান দিল না। মৃত মীনাক্ষীর হাত থেকে দামী রিস্টওয়াচটা খুলে নিল।

রিস্টওয়াচটা দেখতে দেখতে বললে, কারো কাছে একটা ছুরি হবে?

চতুর্বেদী একটা ছুরি এনে দিলেন।

সেই ছুরির সাহায্যেই ঘড়ির পিছনের ডালাটা খুলে ফেলতেই একটা মাইক্রো ফিল্ম রোল বের হলো।

হিয়ার ইউ আর মিঃ চতুর্বেদী—এই ফিল্মের মধ্যেই ব্লু-প্রিন্টের ফটো আছে।

কিরীটী বলতে বলতে ফিল্মটা চতুর্বেদীর হাতে তুলে দিল।

ম্যাগনিফাইং প্রজেক্টারের সাহায্যে বোঝা গেল কিরীটীর অনুমান ভুল নয়—ফিল্মের মধ্যেই বু-প্রিন্ট রয়েছে।

ঐদিনই দুপুরের দিকে মন্ত্রীমশাইয়ের ঘরে।

রামস্বামী জিজ্ঞাসা করেন, ধরলেন কি করে মিঃ রায়?

আপনাদের দলিলটা আবার যথাস্থানে ফিরে আসতেই বুঝেছিলাম, দলিলটার একটা রু-প্রিন্ট ওরা সংগ্রহ করে নিয়েছে এবং সেটাই পাচার করবে।

তারপর?

তারপর আমাকে যখন ওরা ধরে নিয়ে গিয়ে টাকার অফার দিল, বুঝতে পারলাম ব্লু-প্রিন্টটা এখনো পাচার করতে পারেনি—এ দেশেই আছে!

কিন্তু একটা মাইক্রো ফিল্মের মধ্যে—

ভেবে দেখুন সেটাই সবচাইতে সেফ—তাই সেটার সম্ভাবনার কথাই সর্বাগ্রে আমার মনে হয়েছিল।

উঃ, আপনি আমার যে কি উপকার করলেন মিঃ রায়।

আমি তত বেশী কিছু করিনি মিঃ রামস্বামী। একজন নাগরিক হিসাবে আমার জন্মভূমির প্রতি কর্তব্যটুকুই করেছি মাত্র—তবে একটা কথা—

কি?

ওরা যে একটা মাইক্রো ফিল্মই তৈরী করেছিল তা নাও হতে পারে সেফটির জন্য হয়ত আরো কপি করেছিল কটা দিন স্পেশাল ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চকে একটু সাবধানে থাকতে বলবেন—চারিদিকে নজর রাখতে বলবেন। আচ্ছা আজ আমি তাহলে উঠি।

প্রধান মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন না?

আমার সশ্রদ্ধ নমস্কার তাঁকে জানাবেন—আজই সন্ধ্যার প্লেনে আমাকে ফিরে যেতে হবে কলকাতা।

আজই যাবেন?

হ্যাঁ।

টিকিট পেয়েছেন?

পাওয়া গিয়েছে বোধ হয়। আচ্ছা উঠি, নমস্কার।

কিরীটী রামস্বামীর ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

কিরীটী অমনিবাস (কিরীটী রায়) _ Kiriti Omnibus (Kiriti Roy)

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9
Pages ( 9 of 9 ): « পূর্ববর্তী1 ... 78 9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *