বোধন
কার্তিক অটো থেকে নেমেই দেখতে পেলো পার্কের গেটের সামনেই দিদি দাঁড়িয়ে আছে।সে ভাড়াটা দিয়েই দ্রুত এগিয়ে যায়—কি হয়েছে রে দিদি?আমাকে হঠাৎ এখানে ডেকে আনলি যে?কি ব্যাপার?
দেবী যেন ভাইকে দেখে একটু ভরসা পেলো—ভীষন জরুরী কথা আছে ভাই ,বাড়িতে বলা যাবেনা ,তাই–
কার্তিক অবাক হয়ে তাকায় দিদির দিকে।কেমন যেন বিষন্নতা ছেয়ে আছে দিদির মুখে–কথা?কিসের কথা রে দিদি?
দেবী আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলে–তুই তো জানিস ভাই,আমার ও পরমেশ্বরের বিয়েটা অনেকদিন আগেই পাকা হয়ে গেছে ।মায়ের অসুখের জন্যে আর বাবাও আচমকা মারা যেতে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।আমিই বিয়েটা পিছিয়ে দেই বাধ্য হয়ে। কিন্তু কালকে–
কার্তিক এবারে বিস্মিত– কালকে!কালকে কি দিদি?কি হয়েছে রে?
দেবীর মুখে বিষাদ ঘনায়–পরমেশ্বরের বাবা ও মা আমাকে ডেকে পাঠালেন।আর,এমন কিছু বললেন যা আমি ভাবতেই পারিনি ।তাই ,আমি ভাবছি,আমাদের বিয়েটাই ভেঙে দেবো —
কার্তিক শোনামাত্র চমকে ওঠে — সেকিরে দিদি?এসব কি বলছিস তুই?এ্যাই দিদি,সত্যি করে বলতো,কি এমন কথা ওনারা বলেছেন তোকে?
দেবী জলভরা চোখ আঁচল দিয়ে মুছে বেদনা ভারাক্রান্ত সুরে বলে–আমার দুঃখ কি জানিস ভাই,পরমেশ্বর সামনেই দাঁড়িয়েছিলো, কিন্তু টুঁ শব্দটি করেনি ।
কার্তিক তার দিদির মতো ব্যক্তিত্বময়ীকে এভাবে ভেঙে পড়তে দেখে আকুল হয়–প্লিজ দিদি, লক্ষ্মী বোনটি
,চুপ কর, কাঁদিস না।আমায় সবকিছু খুলে বল।
দেবী ম্লান হাসে–উনারা আমাদের বিয়েতে শর্ত রেখেছেন যে ভাই —
কার্তিক হতভম্ব –শর্ত! কিসের শর্ত?
দেবী বিব্রতবোধ করেও বলেই ফেলে–উনারা বলেছেন,উনাদের ছেলের সাথে আমার বিয়ে তখনই হতে পারে যদি ওইদিনে একই সময়ে ওদের ছোটমেয়ে পরমাকে তুই বিয়ে করতে রাজী হোস।
কার্তিক বিস্মিত–বলিস কিরে দিদি!এমন অদ্ভুত শর্ত ওরা রাখতে গেলেন কেন?
দেবীর বিষন্নতা ছেয়ে থাকা মুখে ক্ষোভের হাসি–
তাতো জানিনে ,তবে পরমা একটু শ্যামলা,একটু খুঁড়িয়ে হাঁটে, জন্ম থেকেই তাই হয়তো –সে যাকগে’,
আমি ঠিক করেছি, আমি বিয়েই করবো না ।
কার্তিক বলে ওঠে–সেকি কথা! না,না,অমনটি করিসনে , লক্ষ্মী বোন,তোদের দু’জনের সেই কবেকার
ভালোবাসা ,বিয়েতো তোকে করতেই হবে,বাবা কথা
দিয়েছিলেন ।
দেবী প্রবল আপত্তি জানায়–কিন্তু ,ভাই–তোকে যে—–না,না,এমন অন্যায় আমি মেনে নেবো না কিছুতেই,
লাগবেনা আমার বিয়ে,ঘর-সংসার–
কার্তিক ভারী মায়া হয় দিদিকে কাঁদতে দেখে ।সযত্নে চোখ মুছিয়ে বলে– এই সামান্য ব্যাপারে এতো ভেঙে
পড়লে কি চলেরে?
দেবী ভীষন অবাক হয় ভাইয়ের কথায়–বলিস কি ! বিয়ে কি তোর চাইতে বড়ো? তোর নিজের তো একটা পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে!
কার্তিক এবারে মিষ্টি হেসে দিদিকে জড়িয়ে ধরে– তোর জন্যে আমি সব করতে পারি,ও দিদি , তা,তোর হবু ননদ টি দেখতে কেমন রে?
দেবী সঙ্কুচিত–শ্যামলারঙ,মুখশ্রী বেশ ,আর,–
কার্তিক মুচকি মুচকি হাসছে –আর ?
দেবী একটু বিব্রতবোধ করে–ওই একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে,জন্ম খুঁত,তাই হয়তো–যাকগে’মোদ্দা কথা আমি রাজী নই —-
কার্তিক ঘোষণা করে–কিন্ত আমি রাজী ।
দেবী হতচকিত শুনে–ওমা!সেকি রে? কেন ?কেন তুই রাজী হলি?
কার্তিক বিজ্ঞের মতো দিদিকে বোঝায়–শোন্ আজকালের মেয়েরা তো সহজে শ্বশুর-শাশুড়িকে সেবা করতে চায়না।এদিকে মা প্যারালাইজড,তাই ,ভেবে দেখলাম,এই ভালো হবে।তোর আর আমার শ্বশুর বাড়ি যখন এক তখন আর ভাবনা কি!তাছাড়া ,মেয়ের বাবাও কন্যাদায়গ্রস্ত,ভালোই হলো —
দেবীর দু’চোখ বাণভাসি–ভাই! তুই আমার জন্য এতোটা স্যাক্রিফাইস—
কার্তিক দরাজ গলায় হেসে ওঠে–ওরে পাগলি দিদি আমার !
দেবী তবু কিন্তু কিন্তু করে–তুই যদি কোন অশান্তির মাঝে না পড়িস, তাহলেই হয়,দুর্গা!দুর্গা!
কার্তিক দিদির দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমির সুরে বলে,–
তোর ওই পরমাকে আমি দুর্গা বলেই ডাকবো রে দিদি।চল্ এবারে ,দু’তরফেই বোধনের আয়োজন শুরু হবে।
চল্ তাহলে, বাড়ি ফেরা যাক্—–